দেড় যুগ পর চান্দু স্টেডিয়ামে দর্শকের জোয়ার
আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৯ দলের যুব ওয়ানডে সিরিজের ম্যাচ দেখতে দীর্ঘদিন পর দর্শক জোয়ারে ভেসেছে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের গ্যালারি। তবে ফ্লাডলাইট সচল না থাকায় আলোক স্বল্পতার কারণে খেলা শেষ হতে পারেনি।
ডিএলএস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের যুবারা ম্যাচটা ৫ রানে জিতলেও ম্যাচের শেষটা দেখার রোমাঞ্চ থেকে তাই বঞ্চিতই হয়েছেন বলা যায় বগুড়ার দর্শকেরা। এই জয়ে ৫ ম্যাচের যুব ওয়ানডে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৯ দল।
বাংলাদেশের কালাম সিদ্দিকী সেঞ্চুরি করে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন। আগামী শুক্রবার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেটিও হবে বগুড়ায়।
দেড় যুগ পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখতে সকাল থেকেই শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে দর্শকদের স্রোত নামে। ১৮ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু আলোক স্বল্পতায় ম্যাচ শেষ হতে না পারায় দর্শকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করে স্টেডিয়াম ছাড়েন।
নিবু নিবু হয়ে জ্বলতে থাকা বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে হঠাৎই প্রাণ ফিরেছে এবার। ২০০৬ সালে এ মাঠেই শ্রীলঙ্কার মতো দলকে ওয়ানডেতে হারিয়ে তাক লাগিয়েছিল বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ভেন্যুর স্বীকৃতি পাওয়ার পর শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ৫টি এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছে, যার ৪টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। সেই থেকে স্টেডিয়ামটি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য আশীর্বাদ হয়ে ওঠে।
শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের স্মারক বইয়ের পাতা ওলটালে দেখা যায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুবার বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড থেকে শুরু করে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম, শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা, নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার স্কট স্টাইরিস, ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার রবি বোপারা, আফগানিস্তানের ক্রিকেটার মোহাম্মদ নবী, জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলরের মতো তারকা ক্রিকেটাররা এই স্টেডিয়ামকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন।
বইয়ে মন্তব্য আছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান, মিনহাজুল আবেদীন, হাবিবুল বাশার, খালেদ মাসুদ, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মোহাম্মদ আশরাফুল, মুশফিকুর রহিম, মমিনুল হক কিংবা নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলমের মতো বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটারদেরও।
পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তি বোলার ওয়াসিম আকরাম বগুড়ার এই স্টেডিয়ামকে ‘বিউটিফুল গ্রাউন্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। ভারতের সাবেক কোচ ও ধারাভাষ্যকার রবি শাস্ত্রী লিখেছেন, ‘চমৎকার মাঠ, সঙ্গে সেরা পিচ ও উইকেট।’ শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনের মন্তব্য ছিল, ‘বর্তমান সময়ের সুযোগ–সুবিধাসম্পন্ন দারুণ এক মাঠ। আশা করি, দীর্ঘদিন এই মাঠ আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে থাকবে।’
ইংল্যান্ড দলের সাবেক ক্রিকেটার রবি বোপারা শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ব্যাটিং করে এই উইকেটের ভক্ত বনে যান। মন্তব্যের ঘরে তিনি লিখেছেন, ‘খুবই চমৎকার উইকেট। এখানে ব্যাট করা উপভোগ্য। আশা করি, এই ভেন্যুতে শিগগিরই আবার খেলার সুযোগ পাব।’
শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের স্মারক বইতে বাংলাদেশের মানুষের প্রশংসার পাশাপাশি বগুড়ার মাঠেরও প্রশংসা করেছেন ব্রেন্ডন টেলর, ‘সেরা মাঠ, সেরা পিচ, সেরা বাংলাদেশের মানুষ।’ এই মাঠের পিচকে ওই সময়ে বাংলাদেশের ‘সেরা’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটার স্কট স্টাইরিস লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশের সেরা পিচ। প্রথম শ্রেণির মাঠ। আমি এই মাঠে আবার খেলার অপেক্ষায় থাকব।’
শুধু বিদেশি ক্রিকেটার নয়, বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের কাছেও নান্দনিক ভেন্যু শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান এই ভেন্যুকে নিয়ে ২০১৪ সালে তাঁর অনুভূতি লিখেছিলেন, ‘এই মাঠের সঙ্গে আমার অনেক অনুভূতি জড়িয়ে আছে।’
২০১৩ সালে বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদীন লেখেন, ‘খুবই চমৎকার মাঠ। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, আমার ক্যারিয়ারে আমি এই মাঠে খেলার সুযোগ পাইনি।’ ২০১৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের মন্তব্য, ‘খুব সম্ভবত এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্বোধ্য উইকেটগুলোর মধ্যে একটি।’
বাংলাদেশ দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদও এই ভেন্যুতে খেলতে এসে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন, ‘আমার জীবনে খেলার সুযোগ হওয়া সেরা মাঠগুলো একটি। আমি বিশ্বাস করি, এটা অন্যতম সেরা ভেন্যু।’
দেশি-বিদেশি ক্রিকেটাররা শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামকে প্রশংসায় ভাসালেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অবহেলায় ১৮ বছর ধরে এ মাঠে আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচ হয়নি, জ্বলে ওঠেনি ফ্লাডলাইটের আলো।
উল্টো ২০২৩ সালের ২ মার্চ শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম থেকে বিসিবি জনবল প্রত্যাহার করে ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ড গুটিয়ে নেয়। স্থানীয় খেলোয়াড়, দর্শক, ক্রীড়া সংগঠকসহ সাধারণ মানুষের আন্দোলনের মুখে এ সিদ্ধান্ত পরে প্রত্যাহার করে বিসিবি।