‘অতিমানব’ ডি ভিলিয়ার্স দর্শক বানিয়েছিলেন কোহলিকে

আইপিএলের শুরু থেকে রান উৎসব হয়েছে শারজায়। প্রথম দিকে তো দুই শর নিচে থামছিল না কোনো দলই। কিন্তু ধীরে ধীরে উইকেট শুকিয়ে আসছে, আর রান তোলা কঠিন হয়ে উঠছে। যদিও কাল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ইনিংসের পর এসব কথা হাস্যকর মনে হচ্ছিল। রান তোলা যদি কঠিনই হয়, তাহলে ২ উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রান তোলা তো সম্ভব হতো না!

ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের স্বস্তি ফিরেছে দ্বিতীয় ইনিংসে। শারজার উইকেট যে ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে সেটার প্রমাণ হিসেবেই পুরো ২০ ওভার খেলেও মাত্র ১১২ রান তুলতে পেরেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। কলকাতার ইনিংসের পরই তাই আরেকবার উঠল প্রশ্ন—বেঙ্গালুরু কীভাবে এত রান করল এ উইকেটে? উত্তরটা বিরাট কোহলির জানা আছে। তাঁর দলে একজন ‘অতিমানব’ আছে; এবি ডি ভিলিয়ার্স।

গতকাল শারজার উইকেটে রান তোলা যে কঠিন ছিল সেটা কোহলি নিজেই টের পেয়েছেন। আগের ম্যাচেই খেলেছেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। ৫২ বলে ৯২ রানের এক ইনিংসের পরও কাল ব্যাটে-বলে হচ্ছিল না কোহলির। ২৮ বলে করেছেন মাত্র ৩৩ রান। ইনিংসে একটি মাত্র বাউন্ডারি। সেটাও এসেছে ২৫ তম বলে। ইনিংসের শুরুতে বলটা চকচকে থাকা অবস্থাতেই এ উইকেটে দ্রুত রান তোলা সম্ভব। দুই ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চ ও দেবদূত পাড়িকালের ভালো শুরুটা তাই বেশ কাজে লেগেছে বেঙ্গালুরুর।

ম্যাচে তবু ভালোভাবেই টিকে ছিল কলকাতা। ম্যাচটা কলকাতার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। ১৫ ওভার শেষেও বেঙ্গালুরুর রান ছিল ১১১। শেষ ৫ ওভারের ঝড়ে আরও ৮৩ রান যোগ করেছে বেঙ্গালুরু। সেই ৮৩-তে কোহলির অবদান ছিল ১৩! যে উইকেটে বল পুরোনো হলেই আর তা ব্যাটে আসছিল না, সেখানেই অবিশ্বাস্য এক ইনিংস উপহার দিয়েছেন ডি ভিলিয়ার্স। ৩৩ বলে করেছেন ৭৩ রান। ৫ চারের সঙ্গে ৬টি ছক্কাও ছিল ইনিংসে।

কোহলি তাই কোনো রাখঢাক না করেই ডি ভিলিয়ার্সের প্রশংসায় মেতেছেন, ‘এ উইকেট অনেক শুকনো ছিল। দিনটা বেশ ভালো ছিল তাই ভেবেছিলাম কোনো শিশির থাকবে না। কিন্তু একজন অতিমানব বাদে সব ব্যাটসম্যান এ উইকেটে অস্বস্তিতে ভুগেছে। আমরা ১৬৫-এর কাছাকাছি করা যায় কিনা, এ নিয়ে কথা বলছিলাম। কিন্তু আমরা ১৯৫ পেয়ে গেলাম। আপনারা জানেন সেটা কীভাবে সম্ভব হলো। এটা অবিশ্বাস্য।’

বেঙ্গালুরুর ব্যাটিং লাইনআপকে আটকাতে কাল ভালোই পরিকল্পনা করেছিল কলকাতা। এমনিতেই ধীর এক উইকেটে বলের গতি কমিয়ে দিচ্ছিল তারা। ফলে পাওয়ার প্লের পর রান তোলার গতিটা একদম কমে গিয়েছিল। বলকে তাড়া করতে গিয়েও লাভ হচ্ছিল না। কিন্তু ডি ভিলিয়ার্স সে পথে হাঁটেননি। বরং বলের জন্য অপেক্ষা করেছেন। বোলার গতি কমালে তুলে মেরেছেন আর যখন উল্টোটা হচ্ছিল, তখন গতি কাজে লাগাচ্ছিলেন নিখুঁতভাবে।

ডি ভিলিয়ার্সের এ প্রদর্শনী অন্য প্রান্ত থেকে অবিশ্বাস নিয়ে দেখছিলেন কোহলি। মাঠের সেরা আসন থেকে দেখেছেন বলেই ডি ভিলিয়ার্সের এমন ইনিংসের সেরা বর্ণনা দিতে পেরেছেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, বেশ কিছু বল খেলেছি এখন আমার মারা দরকার। আর তিনি এলেন আর তৃতীয় বলেই মারলেন। আমাকে বললেন ভালো বোধ করছি। অন্য ম্যাচগুলোতে অনেককেই হয়তো এটা করতে দেখেছেন (এভাবে শুরু থেকে মেরে খেলা)। কিন্তু এমন উইকেটে আজ যা করলেন, সেটা একমাত্র এবিই করতে পারে। অসাধারণ এক ইনিংস ছিল। আমরা ১৬০-১৬৫ তেই খুশি থাকতাম। কিন্তু তাঁর দক্ষতাতেই আমরা ১৯৫ পেলাম। আমি খুশি যে একটা জুটি গড়তে পেরেছি আর আমি সেরা আসনে বসে দেখতে পেরেছি।’

কিন্তু ‘অতিমানব’ নিজে কী বলছেন? কীভাবে খেললেন এমন এক ইনিংস? উত্তর শুনলে বিভ্রান্ত হতে পারেন, ‘আমি নিজেকেই চমকে দিয়েছি আজ। আমি সেরা হতে চাই। নিজের পারফরম্যান্সে খুব খুশি, এটুকুই বলতে পারি। গত ম্যাচে আমি শূন্য রানে আউট হয়েছি, খুব বাজে অনুভূতি সেটা। আমি খুশি যে অবদান রাখতে পেরেছি। আমরা ১৪০-১৫০ এর দিকে এগোচ্ছিলাম। আমি ভাবলাম ১৬০-১৬৫ এর জন্য চেষ্টা করি। কামিন্স ও রাসেল যখন বল করে, তখন সুযোগ খুবই সীমিত। তাই গতিটা ধরে রাখতে চাইলে যতটুকু শক্তি আছে পুরোটাই খরচ করতে হয়।’