অনুশীলনে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেলেন দেম্বেলে

দুই দেম্বেলে - মুসা ও ওসমান। ফুটবলে দেম্বেলেদের দাপটে সবচেয়ে উজ্জ্বল এ দুজনই।ছবি: সংগৃহীত

বড় ভয়ই পেয়েছিলেন লুইস সুয়ারেজ, জোয়াও ফেলিক্সরা। অনুশীলনে হঠাৎ সতীর্থকে কোনো কারণ ছাড়াই পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হতে দেখলে ভয় তো পাওয়ারই কথা। স্প্যানিশ ক্লাব আতলেতিকো মাদ্রিদের অনুশীলনে গতকাল এই ভয়ের শিহরণ ছড়িয়ে পড়েছিল মুসা দেম্বেলেকে ঘিরে। হঠাৎই পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যান গত জানুয়ারিতে ফরাসি ক্লাব লিওঁ থেকে ধারে আসা ২৪ বছর বয়সী ফরাসি স্ট্রাইকার।

না কারও সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে, না তিনি দৌড়াচ্ছিলেন। অনুশীলনে নামার আগে সতীর্থদের সঙ্গে ক্লাবের অনুশীলন মাঠে তখনো গা গরম করছিলেন। এর মধ্যে হঠাৎই পড়ে যান দেম্বেলে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তাঁর রক্তচাপ কমে গিয়েছিল।

অনুশীলনে দেম্বেলের হঠাৎ পড়ে যাওয়ার ভিডিওটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে বেশ ভাইরাল হয়ে গেছে। দেখে ভয় লাগার মতোই! বলা নেই, কওয়া নেই, সুস্থ একজনকে হঠাৎ পড়ে যেতে দেখলে শঙ্কা তো জাগবেই। মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান দেম্বেলে, এ সময় তাঁর পা কাঁপছিল।

আতলেতিকো মাদ্রিদের অনুশীলন মাঠে তখন ছোটাছুটি। সতীর্থরা তো বটেই, কোচ-ডাক্তার সবাই ছুটে এলেন। অ্যাম্বুলেন্সও চলে আসে দ্রুতই। তবে সেটির পরে আর দরকার হয়নি। ততক্ষণে সবার চেষ্টায় জ্ঞান ফিরে আসে দেম্বেলের। মাঠের পাশে দাঁড়ানো গাড়ির দিকে হেঁটে হেঁটেই গেছেন। শেষ পর্যন্ত নিজের গাড়ি চালিয়েই স্টেডিয়াম ছেড়েছেন দেম্বেলে।

লা লিগার ক্রীড়াবিষয়ক অ্যান্ড্রু মিলার টুইটারে পুরো ঘটনাটার বর্ণনা লিখেছেন, ‘আতলেতিকো মাদ্রিদের স্ট্রাইকার দেম্বেলে আজ অনুশীলনে মাথা ঘুরে পড়ে গেছেন। তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁর জ্ঞান ফেরে। নিজে নিজেই মাঠ থেকে হেঁটে বেরোতে পেরেছেন তিনি। তবে তাঁর শরীরের অবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হবে। আজ দিনের কোনো এক সময়ে তাঁর মেডিকেল পরীক্ষাও হবে।’

ইংলিশ ক্লাব ফুলহামের জার্সিতে ২০১৩ সালে পেশাদার ফুটবলে অভিষিক্ত দেম্বেলে লিওঁর আগে সেল্টিকেও ঘুরে এসেছিলেন। এই জানুয়ারিতে ধারে যোগ দেন আতলেতিকোতে।

ধারের জন্য লিওঁকে ১৫ লাখ ইউরো দিয়েছে আতলেতিকো। দিয়েগো সিমিওনের দলের হাতে সুযোগ আছে দেম্বেলের পারফরম্যান্স দেখে ভালো লাগলে এই মৌসুমের শেষে সাড়ে ৩৩ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ৩৫ লাখ ইউরোতে তাঁকে পাকাপাকিভাবে কিনে নেওয়ার।

এখনো আতলেতিকোতে ছন্দ খুঁজে পাননি দেম্বেলে।
ছবি: রয়টার্স

যদিও সেটি আতলেতিকো করবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। এখন পর্যন্ত ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোতে দেম্বেলে যে আলো ছড়াতেই পারেননি। প্রায় দুই মাস হয়ে গেল ক্লাবে এসেছেন, অথচ এত দিনেও লিগে আতলেতিকোর জার্সিতে মাত্র দুটি ম্যাচে নেমেছেন দেম্বেলে। তা-ও বদলি হিসেবে। সব মিলিয়ে খেলেছেন মাত্র ৪০ মিনিট। গোল পাননি।

স্প্যানিশ দৈনিক মার্কা দিন দুয়েক আগে লিখেছিল, দেম্বেলেকে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য সিমিওনে আতলেতিকোর বাকি দশ ‘ফাইনালে’ দেম্বেলেকে দেখবেন।

দশ ফাইনাল কেন? স্প্যানিশ লিগে যে আর ম্যাচই আছে ১০টি। গত কিছুদিনে লিগে বেশ কয়েকবার পা হড়কালেও আতলেতিকোর শিরোপার আশা এখনো ভালোভাবেই বেঁচে আছে।

সর্বশেষ ৯ ম্যাচের ৫টিতেই পয়েন্ট হারিয়েছে (১ হার, ৪ ড্র) সিমিওনের দল। তবু এখনো দুইয়ে থাকা বার্সেলোনার (২৮ ম্যাচে ৬২ পয়েন্ট) চেয়ে ৪ পয়েন্ট এগিয়ে আছে। তিনে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের (২৮ ম্যাচে ৬০ পয়েন্ট) চেয়ে এগিয়ে ৬ পয়েন্টে।

গত জানুয়ারিতে স্প্যানিশ কাপ বা কোপা দেল রের দ্বিতীয় রাউন্ডে বাদ পড়া আতলেতিকো কদিন আগে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতে বাদ পড়েছে চেলসির কাছে হেরে। শিরোপার আশা বাঁচিয়ে রাখতে লিগে বাকি দশ ম্যাচেই ঝাঁপাবেন সুয়ারেজ-ফেলিক্সরা।

দেম্বেলে লম্বা সময়ের জন্য মাঠের বাইরে থাকলে সুয়ারেজের ওপর ধকল বাড়বে।
ছবি: রয়টার্স

এর মধ্যে দেম্বেলের এই হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া আতলেতিকোর কোচ সিমিওনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলবেই। লিগের বাকি পথে এখনো সেভিয়া, বেতিস, বিলবাও, সোসিয়েদাদের মতো ক্লাবের বিপক্ষে ম্যাচ তো আছেই, আতলেতিকোকে লিগের ৩৫তম সপ্তাহে যেতে হবে বার্সেলোনার মাঠেও! শিরোপার পথে এখনো তাই কঠিন অনেক চ্যালেঞ্জ বাকি।

সে পথে দেম্বেলেকে ফিট ও ফর্মে পাওয়ার আশাই হয়তো করছিলেন সিমিওনে। এই মৌসুমে বার্সা থেকে এসে লুইস সুয়ারেজ দারুণ খেলছেন ঠিকই, ১৯ গোল নিয়ে লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় দ্বিতীয় উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার। তাঁর সামনে শুধু বার্সার লিওনেল মেসি (২৩ গোল)।

সুয়ারেজের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে জ্বলে উঠছেন জোয়াও ফেলিক্সও। ৭ গোল করার পাশাপাশি ৪টি করিয়েছেন পর্তুগিজ তরুণ। তবু ৩৪ বছর বয়সী সুয়ারেজ কিংবা সিমিওনের কৌশলে অনেক সময়ই মানিয়ে নিতে ভুগতে থাকা ফেলিক্সের জায়গায় দেম্বেলেকে খেলাতে পারলে সিমিওনের হাতে বিকল্প তো বাড়ত!

আপাতত তার আগে দেম্বেলের সুস্থ হয়ে ওঠাই বেশি দরকারি।