অবশেষে জ্বলে উঠলেন মুশফিকের ঢাকার তরুণেরা

দুই আলী—ইয়াসির ও আকবরের ব্যাটে জয়ের ভিত্তি পেয়েছে ঢাকা।ছবি: শামসুল হক

প্রথম ৪ ম্যাচে ১ জয়। পয়েন্ট তালিকার তলানিতে ছিল মুশফিকুর রহিমের বেক্সিমকো ঢাকা। একঝাঁক তরুণকে নিয়ে গড়া দলটির জন্য বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের শুরুটা একদমই ভালো হয়নি। দলটাকে ভালো করতে হলে তরুণদের ভালো করতে হতো। প্রথম চার ম্যাচে সেটা হয়নি। আজ হলো। মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীকে ২৫ রানে হারিয়ে ঢাকা পেল মূল্যবান ২ পয়েন্ট। ঢাকার ১৭৫ রানের জবাবে রাজশাহী ৫ বল বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে যায় ১৫০ রানে।

এত দিন ব্যাটিংয়ে শুরুটা ভালো হচ্ছিল না ঢাকার। তরুণ বাঁহাতি ওপেনার তানজিদ হাসান ও মোহাম্মদ নাঈমের ওপর অনেক আশা ছিল দলটির। কিন্তু দুজনের কেউই ছন্দ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। আজ আবার প্রতিপক্ষ দলে ছিলেন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান। শুরুতে দুই বাঁহাতি ক্রিজে থাকলে মেহেদী অফ স্পিন দিয়ে চেপে ধরবেন নিশ্চিত। সেটি এড়াতেই ঢাকা নাঈমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে পাঠালেন ডানহাতি অফ স্পিনার নাঈম হাসানকে! কিন্তু ডানহাতি পাঠিয়ে খুব লাভ হলো না। সেই মেহেদীর বলেই ১ রানে এলবিডব্লু নাঈম।

তিনে নেমে মুশফিক আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টা করেন। বেশ কিছু সুইপ শটে বাউন্ডারিও খুঁজে পান। বাঁহাতি ওপেনার নাঈমের সঙ্গে মুশফিকের ৩৯ রানের জুটিটি বড় রানের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কিন্তু প্রচুর ডট বল খেলে আরাফাত সানির স্পিনে নাঈম আউট হন ৯ রানে (১৯ বল)। ওপেনিং থেকে চারে নেমে সাফল্য পাননি তানজিদ। তিনিও বেঞ্চে ফিরে যান দ্রুত (৪ বলে ২ রান)।

কিন্তু ঢাকার জন্য বড় ধাক্কাটা আসে মুশফিকের আউটে। ফর্মে থাকা মুকিদুলের বলে লেট কাট করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন ঢাকার অধিনায়ক। ২৯ বলে ৩ চারে ৩৭ রান করেন। ইনিংসের ১০ ওভার শেষ, মুশফিক আউট। ঢাকার রান তখন মাত্র ৪ উইকেটে ৬৪।

মুশফিককে আউট করে মুকিদুলের উল্লাস।
ছবি: প্রথম আলো

সেখান থেকে দুই তরুণ ইয়াসির আলী ও আকবর আলী মিলে টানলেন ঢাকার ইনিংস। আগের ম্যাচে ৪৪ রানে অপরাজিত থাকা ইয়াসির আজও দাপট দেখালেন। সুযোগটা অবশ্য করে দিয়েছেন রাজশাহীর ফিল্ডার আনিস। ইয়াসির যখন ব্যক্তিগত ৩১ রানে অপরাজিত, ফরহাদ রেজার বলে লং অন বাউন্ডারিতে ইয়াসিরের ক্যাচ ফেলেন আনিস।

এরপর আকবরকে নিয়ে হিসাব কষে ঢাকার ইনিংস গড়েন ইয়াসির। বাজে বলগুলোকে ছাড় দেননি। ফ্রন্ট ফুট পুল, ড্রাইভ, কাটে চার-ছক্কা বের করেছেন ২৪ বছর বয়সী এই তরুণ। ৩২ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন। ৩৯ বলে ৬৭ রান করে আউট হন ইনিংসের শেষ ওভারে।

ইয়াসিরকে চাপমুক্ত রেখেছেন আকবর। দরকারের সময় বাউন্ডারি মেরেছেন তিনিও। খেলেছেন আদর্শ টি-টোয়েন্টি ফিনিশারের মতো। পাওয়ার হিটিং দেখিয়েছেন, দেখিয়েছেন টাইমিংয়ের খেলাও। ২৩ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় তাঁর ৪৫ রানের অপরাজিত ইনিংসে প্রায় সবই ছিল। দুই আলী মিলে ঢাকার স্কোরবোর্ডে পঞ্চম উইকেটে যোগ করেন ১০০ রান। শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেটে ১৭৫ রান করে দলটি।

ফজলে মাহমুদ চেষ্টা করেছিলেন রাজশাহীর ইনিংস টেনে নিয়ে যাওয়ার।
ছবি: প্রথম আলো

এই রানও তাড়া করা সম্ভব ছিল। শিশিরের কারণে ব্যাটিং দ্বিতীয় ইনিংসে আরও সহজ হওয়ার কথা। কিন্তু সহজ হওয়ার আগেই যে ৩ উইকেট হাওয়া রাজশাহীর! অধিনায়ক নাজমুল হোসেন, আনিসুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আশরাফুল—দলীয় ১৫ রানের মধ্যে তিনজনই আউট!

রনি তালুকদার ও ফজলে মাহমুদ চতুর্থ উইকেটে ৬৭ রানের জুটি গড়ে বিপদ সামাল দেন। রনির ২৪ বলে ৪০ রানের ইনিংসটি ম্যাচ পাল্টে দেওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়েছিল। কিন্তু ১২তম ওভারে মুক্তার আলীর স্লোয়ার বল স্টাম্পে টেনে এনে আউট হন রনি। শুরুতে সময় নেওয়া মাহমুদ থিতু হওয়ার পর তিনিও চার-ছক্কা মারা শুরু করেন। সম্ভাবনা জাগান ঢাকার রানের কাছাকাছি চলে যাওয়ার। কিন্তু সেই মুক্তারের বলেই শেষ মাহমুদের ৪০ বলে ৫ চার ৩ ছক্কায় ৫৮ রানের ইনিংস।

ভয়ংকর হতে পারতেন অলরাউন্ডার মেহেদী। তাঁকেও মিড উইকেটে ক্যাচ বানান মুক্তার। ফরহাদ রেজা এসে ২ ছক্কায় ৪ বলে ১৪ রান করে আউট। ৪ ওভারে ৩৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে মুক্তারই ভেঙে দেন রাজশাহীর রান তাড়ার স্বপ্ন। তরুণ বাঁহাতি শফিকুল ইসলামও ভালো বোলিং করেছেন। ৪ ওভারে ৩১ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। পেসারদের দাপটে ৫ বল বাকি থাকতে রাজশাহী অলআউট হয় ১৫০ রানে।