অস্ট্রেলীয়রা শিখবে কবে?

সুনীল গাভাস্কার।ছবি : এএফপি

মানকড়-কাণ্ডে এর আগেও আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ওই যে, বোলার বল ছাড়ার আগেই অনেক সময় ক্রিজ থেকে বেরিয়ে যান নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে থাকা ব্যাটসম্যান। তখন তাকে বোলার আউট করে দিলে সেটাই ‘মানকাডিং’। এ ভাবে আউট করে এর আগেও অনেকের চক্ষুশূল হয়েছেন অশ্বিন। ক্রিকেটীয় চেতনাকে পাত্তা দেন না—এমন অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।

এই তো সেদিন, একই ভাবে বেঙ্গালুরুর ব্যাটসম্যান অ্যারন ফিঞ্চকে আউট করার সুযোগ পেয়েছিলেন অশ্বিন। করেননি যদিও। তবে এবার আলোচনার জন্ম দিয়েছেন ‘মানকাডিং’ না করেই । সে আলোচনায় যোগ দিয়েছেন কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কার।

গাভাস্কারের মতে, ক্রিকেটীয় চেতনার ব্যাপারটা পুরোপুরি কথার কথা। একটা ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার মতো কাজ করলে তাকে অবশ্যই আউট করতে হবে, এর সঙ্গে চেতনার সম্পৃক্ততা খোঁজা বাতুলতা, ‘যে কারণে এই আউটের ব্যাপারটা নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা হয়, সেটা হলো ক্রিকেটীয় চেতনা। এই ‘চেতনা’ই কথার কথা বলে মনে হয় আমার কাছে। অনেকটা অস্ট্রেলিয়ানদের মতো, ওরা যেমন বলে, তাঁরা মাঠে সীমা অতিক্রম করে না। সেটাও একটা কথার কথাই। কেউই জানে না সীমাটা আসলে কোন জায়গায়। আমার মাথায় ঢোকে না যেখানে একটা ব্যাটসম্যান আগে থেকে ক্রিজ ছেড়ে বের হয়ে একটা অবৈধ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে, তাকে আউট করাটা কেন ক্রিকেটীয় চেতনা বহির্ভূত হবে।’

এবার আউট করেননি অশ্বিন।
ছবি: টুইটার

যেকোনো নিয়মকে নিয়ম ভেবেই তার প্রয়োগ করা উচিত বলে মনে করেন গাভাস্কার, ‘এখন ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও তো কত বাঁধাধরা নিয়ম এসেছে। ৩০ গজ বৃত্তের ভেতরে বাধ্যতামূলকভাবে যত জন কে থাকতে হয়, তার একজনও ভুল করে বৃত্তের বাইরে চলে গেলে নো-বল ডাকা হয়। তাতে আমার আপত্তি নেই, কারণ ওটাই নিয়ম। সেটাকে যদি আমরা নিয়ম হিসেবে মানতে পারি, একটা ব্যাটসম্যান নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে থেকে আগে আগে বের হয়ে গেলে তাকে আউট করা হলে সেটাকে নিয়ম হিসেবে মানতে পারি না কেন? অশ্বিন যখন বল করতে যাচ্ছিল, ও প্রায় দেড় গজের মতো এগিয়ে গিয়েছিল। ভেবে দেখুন, সে কতটুকু অবৈধ সুবিধা নিতে চলেছিল!’

একজন ব্যাটসম্যান যখন বোলারকে ছক্কা মারে, সে কি আগে আগে বলে যে আমি ছক্কা মারব? বোলার একটা বাউন্সার বা গুগলি দেওয়ার আগে কী ব্যাটসম্যানকে সতর্ক করে? তাহলে এ ক্ষেত্রে আগে আগে একটা ব্যাটসম্যানকে কেন সতর্ক করতে হবে?
সুনীল গাভাস্কার

বারবার এমন ঘটনার শিকার হওয়া অস্ট্রেলিয়ানরা কবে এ ব্যাপারটা শিখবে, ভেবেই কূল পান না গাভাস্কার, ‘আমি যখন ঘটনাটা দেখলাম, আমার মনে হলো, অস্ট্রেলিয়ানরা কবে শিখবে? কারণ এর আগেও ১৯৪৭ সালে বিল ব্রাউনের ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছিল। আর এখন ২০২০ সাল। এত বছর চলে গেল, তাও তাঁরা এই সহজ বিষয়টুকু শিখল না। সবচেয়ে সহজ কাজ হলো, বোলার যখন বল ফেলছে, তার দিকে তাকিয়ে থাকা, আর বোলারের হাত থেকে বলটা বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রিজ ছেড়ে এগিয়ে যাওয়া। বোলার বাদ দিয়ে সামনে থাকা ব্যাটসম্যানের দিকে তাকাতে পারেন না আপনি, যেমনটা ফিঞ্চ করছিল। আইন একদম পরিষ্কার। কঠিন তো কিছু না। একজন ব্যাটসম্যান যখন বোলারকে ছক্কা মারে, সে কি আগে আগে বলে যে আমি ছক্কা মারব? বোলার একটা বাউন্সার বা গুগলি দেওয়ার আগে কী ব্যাটসম্যানকে সতর্ক করে? তাহলে এ ক্ষেত্রে আগে আগে একটা ব্যাটসম্যানকে কেন সতর্ক করতে হবে? আমি যদি অধিনায়ক হতাম, আমি এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার পুরোপুরি বোলারের ওপরেই ছেড়ে দিতাম। আর তাকে সমর্থন করতাম শতভাগ।’