‘অ্যান্ডারসনকে স্পিনার বানিয়ে ছেড়েছে পন্ত’

আহমেদাবাদ টেস্টে কাল সেঞ্চুরির পর ঋষভ পন্তছবি: বিসিসিআই

হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে প্রায় ৯০০ উইকেট শিকার করা জেমস অ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ারে এমন ঘটনা কি আদৌ ঘটেছে?

সেদিনের ছেলে ঋষভ পন্ত! ৩৮ বছর বয়সী অ্যান্ডারসনের চেয়ে ১৫ বছরের ছোট পন্ত তো হিসেবে ‘সেদিনের ছেলে’ই! আর টেস্ট অভিজ্ঞতায় পার্থক্যটা ১৪০ টেস্টের! সেই পন্তই যেভাবে দুরন্ত স্পর্ধায় ইতিহাসের অন্যতম সেরা টেস্ট বোলারকে রিভার্স সুইপ করলেন, অমন সাহস কে দেখিয়েছে কবে?

এবার ভেবে দেখুন রিভার্স সুইপের সময়ে ম্যাচের পরিস্থিতির কথা। তখন ৮৯ রানে ব্যাট করছিলেন পন্ত। যে পর্যায়ে সেঞ্চুরির চিন্তায় বিশ্বের বেশির ভাগ ব্যাটসম্যান সাবধানী হয়ে যান, সেখানে পন্তকে যেন দ্বিধা, ভয় কিংবা সংশয়, কিছুই স্পর্শ করল না।

অ্যান্ডারসনের মতো বোলারকে রিভার্স সুইপ তো করেছেনই, সেঞ্চুরিও আদায় করে নিয়েছেন রাজকীয় ঢঙে—ছক্কা মেরে। পন্ত যেন ভয়ডরহীন ভারতের অন্যতম বড় বিজ্ঞাপন এখন!

আর পন্তের এই অকুতোভয় ব্যাটিং নিয়েই প্রশংসা চলছে সর্বত্র। ভারতের কিংবদন্তি অধিনায়ক ও বর্তমানে ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী তো পন্ত ‘আরও কয়েক বছর এভাবে চালিয়ে গেলে সেরাদের একজন হবে’ বলে সনদই দিয়ে রেখেছেন।

ভারতের কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট—পন্তের গুণকীর্তন সবার মুখে। সুনীল গাভাস্কার আর বাদ থাকেন কেন! ভারতের ব্যাটিং কিংবদন্তির নাকি পন্তের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে, জেমস অ্যান্ডারসন একজন নিছক স্পিনার!

‘ইংল্যান্ড যখন দ্বিতীয় নতুন বল নিয়েছে, আর ও যখন সেঞ্চুরির দিকে আস্তে আস্তে এগোচ্ছিল, তখন ও জেমস অ্যান্ডারসনকে যেভাবে খেলা শুরু করল, মনে হচ্ছিল যেন অ্যান্ডারসন একজন স্পিনার। অ্যান্ডারসনের বিপক্ষে রিভার্স সুইপ! অসাধারণ ব্যাটিং। ও এতটাই ভালো ব্যাটিং করছিল যে আমি ওর সেঞ্চুরি না দেখে থাকতে পারিনি’—উচ্ছ্বাস গাভাস্কারের।

১১৮ বলে ১০১ রানের ইনিংস খেলে দলকে বাঁচিয়েছেন পন্ত। পন্তের এই ‘ঘাড়ত্যাড়া’ ব্যাটিংয়ের জন্যই ভারত স্বপ্ন দেখছে আহমেদাবাদ টেস্ট জেতার।

ম্যাচের মোড় ঘুরে গেছে পন্তের এক ইনিংসে। ইনিংসে পন্তের পরিপক্বতাও মুগ্ধ করেছে গাভাস্কারকে, ‘ও প্রথম থেকেই ইংলিশ বোলারদের মারতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি, এ জন্য ওর একটু মন খারাপও হয়েছে। কিন্তু ওয়াশিংটন সুন্দরের সঙ্গে যখন ওর জুটিটা জমে গেল, তখন ও আস্তে আস্তে হাত খোলা শুরু করে, আর তাতেই ভারত রক্ষা পায়। কিন্তু ওর আগে ও কিন্তু একটু সাবধানীই ছিল। পিচের অবস্থা কেমন, বোলিং আক্রমণ কেমন—এগুলো মাথায় রেখে খেলছিল।’

ইংল্যান্ডের দুর্বলতাটাও পন্ত ধরতে পেরেছিলেন বলে মনে করছেন গাভাস্কার, ‘পন্ত বুঝতে পেরেছিল ইংল্যান্ড তাদের দ্বিতীয় স্পিনার ডম বেসের ওপর তেমন ভরসা করতে পারছে না। ফলে তিন বোলারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছিল তাঁদের, সঙ্গে জো রুট। আর পন্ত ওই সুযোগটাই নিয়েছে।’