আইপিএল থেকে শিক্ষা নিচ্ছে পাকিস্তান

অনির্দিষ্ট কালের জন্য পিএসএলও স্থগিত হয়েছিল।ফাইল ছবি: এএফপি

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেই আইপিএল চলছিল। যেকোনোভাবেই হোক আইপিএল চালিয়ে যেতে হবে—গোঁ ধরেছিল বিসিসিআই। এক শহর থেকে আরেক শহরে ঘুরে ঘুরে জৈব সুরক্ষাবলয় সৃষ্টি করে আইপিএল খেলানো হচ্ছিল। এর মধ্যেই ভারতে করোনা প্রকট আকার ধারণ করেছে। মৃতের সংখ্যা দিনে তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দিনে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা টানা তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যেও তুমুল সমালোচনার মধ্যে আইপিএল চলেছে।

‘আইপিএল ক্যারাভান’ দিল্লিতে এসেই খেয়েছে ধাক্কা। করোনার সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ ভারতের রাজধানী দেখেছে। হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দিল্লিতে। এই অবস্থায়ও শহরের সবচেয়ে বড় করোনা হাসপাতালের উল্টো দিকের স্টেডিয়ামেই হচ্ছিল আইপিএল। এর ফল মিলেছে দ্রুত। চারটি দলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় ৪ মে আইপিএল স্থগিতের ঘোষণাও এসেছে।

দেশে করোনার প্রকোপ যখন লাগামছাড়া, তখন জৈব সুরক্ষাবলয় সৃষ্টি করেও যে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চালানো কঠিন হয়ে ওঠে, সেটা আইপিএল বুঝতে পারেনি। তাদের এই ভুল থেকে শিক্ষা নিচ্ছে পিএসএল কর্তৃপক্ষ। করোনার কারণে স্থগিত পিএসএল আবার আয়োজন করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতকেই পছন্দ হচ্ছে তাদের।

আইপিএল নিয়ে সাফাই গেয়েই যাচ্ছেন সৌরভ গাঙ্গুলী।
ছবি: ফাইল ছবি

গত মৌসুমে আইপিএল প্রায় অসম্ভব এক কাজ করেছিল। করোনার প্রথম ধাক্কা বিশ্ব তখনো সামলে ওঠেনি। এই অবস্থায় বিশ্বের নানা প্রান্তের সব ক্রিকেটারকে ডেকে এনে আইপিএল আয়োজন করেছিল তারা। অবশ্য ঘরের মাঠে সেটা করতে পারেনি তারা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিন ভেন্যুতে সফলভাবে ২০২০ আইপিএল আয়োজিত হয়েছিল। টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার পর কোনো খেলোয়াড় বা সংশ্লিষ্ট কোচিং স্টাফ বা কর্মকর্তাদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

এবার ঘরের মাঠে আইপিএল আয়োজন করতে গিয়েই বিপাকে পড়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। মুম্বাই, চেন্নাই, আহমেদাবাদ হয়ে দিল্লিতে যাওয়ার পরই ঝামেলাটা ঘটল। প্রথমে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বরুণ চক্রবর্তী ও সন্দ্বীপ ভারিয়ের আক্রান্ত হলেন। এরপর চেন্নাই সুপার কিংসের বোলিং কোচ লক্ষ্মীপতি বালাজিসহ তিনজন আক্রান্ত হওয়ার খবর এল। এ দুই দলকে ছয় দিন কঠোর কোয়ারেন্টিনে রাখার প্রস্তাব দিয়েই আইপিএল চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার প্রথমে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ঋদ্ধিমান সাহা ও দিল্লি ক্যাপিটালসের অমিত মিশ্রর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরের পর সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হয় আইপিএল কর্তৃপক্ষ। অনির্দিষ্টকালের জন্য আইপিএল স্থগিত করতে বাধ্য হয় বিসিসিআই।

ভারতীয় বোর্ডের ভুল থেকেই শিক্ষা নিতে চাইছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। ভারতের মতোই ঘরের মাঠে পাকিস্তান সুপার লিগ আয়োজন করেছিল পিসিবি। কিন্তু মার্চে মাত্র ১৪ ম্যাচ হওয়ার পরই করোনা ছয় খেলোয়াড়সহ সাতজনের সংক্রমিত হওয়ার ঘটনায় টুর্নামেন্ট স্থগিত করতে বাধ্য হয় তারা। জুনে টুর্নামেন্ট আবার আয়োজন করার পরিকল্পনা করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু নিজ দেশে জৈব সুরক্ষাবলয় নিশ্ছিদ্র রাখা কত কঠিন, সেটা আগেই টের পেয়েছে। আইপিএলের ঘটনা আরও ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে।

আফ্রিদিদের আরব আমিরাতে যেতে হবে?
ছবি: টুইটার

এই অবস্থায় টুর্নামেন্ট সংযুক্ত আরব আমিরাতে নেওয়ার চিন্তা করছে পিসিবি। স্থগিত হওয়ার আগেই আইপিএল ছেড়ে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ান লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা কয়েক দিন আগেই বলেছেন আইপিএলের এবারের জৈব সুরক্ষাবলয়ের চেয়ে আরব আমিরাতের জৈব সুরক্ষাবলয় ভালো ছিল। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, সিদ্ধান্তটি দেশটির করোনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থাকা সংস্থার ওপর নির্ভর করছে, ‘জাতীয় কমান্ড ও অপারেশন সেন্টার এই ঘোষণা দেবে। যদি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে লিগ চালু করা যাবে, তাহলে আমরা করাচিকে জৈব সুরক্ষিত করব এবং সব ম্যাচ সেখানে খেলা হবে। যদি তারা করাচিতে ম্যাচ খেলার অনুমতি না দেয়, তাহলে আমরা ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে বসে আরব আমিরাতে টুর্নামেন্টের বাকিটা আয়োজনের ব্যাপারে কথা বলব।’

পিএসএলে আরও ২০ ম্যাচ বাকি আছে। গত মাসে এই ২০ ম্যাচ করাচিতেই আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ১ জুন থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল পিএসএলের বাকি অংশের। ২০ জুন হওয়ার কথা ছিল ফাইনাল। কিন্তু টুর্নামেন্টের ছয় ফ্র্যাঞ্চাইজিই সংযুক্ত আরব আমিরাতে টুর্নামেন্ট আয়োজনের পক্ষে। এদিকে পাকিস্তানে করোনা সংক্রমণও এর মধ্যে অনেক বেড়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর ঘটনা।