আইপিএল সুবিধা করে দিচ্ছে, তাতেও আপত্তি পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটারের

পাকিস্তান সফরেও অধিনায়ক ছিলেন ডি কক।
ছবি: টুইটার

ব্যাপারটা একটু হাস্যকর ঠেকতে পারে। অতিথি ডেকে এনে তাঁদের ঘরে রেখে নিজেরাই বেড়িয়ে যাওয়াটা একটু প্রশ্নবিদ্ধও বটে। এমনটাই করতে যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আগামী মাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে প্রোটিয়ারা। ২ এপ্রিল শুরু হওয়া ওয়ানডে সিরিজ শেষ হবে ৭ এপ্রিল। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের পরই চার ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হবে। সেটা শেষ হতে হতে ১৬ এপ্রিল।

ওদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার মূল তারকা এত দিন অপেক্ষা করতে রাজি নন। আগামী ৯ এপ্রিল শুরু হয়ে যাচ্ছে আইপিএল। আইপিএল নিজ নিজ ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে যোগ দিতে তাঁরা সিরিজের মাঝপথেই দেশ ছাড়বেন। ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার জন্য রেখে দিয়ে ভারতের বিভিন্ন ভেন্যুতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেই খেলবেন কুইন্টন ডি ককরা।

এতে পাকিস্তানের অবশ্য সুবিধাই হবে। আইপিএলে খেলার যোগ্যতা রাখা খেলোয়াড়দের ছাড়া স্বভাবতই দুর্বল হয়ে পড়বে স্বাগতিক দল। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ জেতার জন্য এর চেয়ে ভালো সুযোগ খুব কমই পাবে তারা। কিন্তু রশিদ লতিফ এমন সুযোগ পেয়েও রাগ করছেন। তাঁর ধারণা, এভাবে মূল খেলোয়াড়দের ছেড়ে দিয়ে পাকিস্তানকে যথাযথ মূল্যায়ন করছে না প্রোটিয়ারা।

গত মৌসুমে আইপিএলে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি রাবাদা।
ছবি: আইপিএল

এবারের আইপিএল নিলামে সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙেছেন ক্রিস মরিস। দক্ষিণ আফ্রিকার এই অলরাউন্ডারকে পেতে ১৬ কোটি ২৫ লাখ রুপি খসেছে রাজস্থান রয়্যালসের। আইপিএলে বিদেশি ক্রিকেটারের পেছনে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয়ের রেকর্ড তো বটেই এমনকি নিলামে ভারতীয় রেকর্ডও ভেঙেছে এবার। শুধু মরিস নয়, আইপিএলে বিভিন্ন দলে খেলছেন আরও বহু প্রোটিয়া খেলোয়াড়। তবে তাঁদের মধ্যে পাঁচজনের নামই আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।

পাকিস্তানের সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজ খেলবেন কিন্তু আইপিএলেও বিভিন্ন দলের সঙ্গে যুক্ত—এমন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার পাঁচজন। দিল্লি ক্যাপিটালসে খেলছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে দ্রুতগতির দুই বোলার। গতবারের সর্বোচ্চ উইকেট–শিকারি কাগিসো রাবাদার সঙ্গে আনরিখ নর্কিয়া আছেন ঋষভ পন্তদের দলে। আরেক পেসার লুঙ্গি এনগিডি খেলছেন চেন্নাই সুপার কিংসে। অলরাউন্ডার ডেভিড মিলার আছেন স্বদেশি ক্রিস মরিসের দলেই। ওদিকে কুইন্টন ডি কক খেলছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে।

এ পাঁচজনকে ৪ এপ্রিল সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডের পর ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড। এর আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজে তাঁদের না রাখার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছে সিএসএ। এ ব্যাপারে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিও করেছে তারা। এবার ওয়ানডে সিরিজের মাঝপথেই তাদের ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড। আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো নাকি এর মধ্যেই নিজস্ব ভাড়া করা উড়োজাহাজে খেলোয়াড়দের নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে।

আনরিখ নর্কিয়া।
ছবি: আইপিএল

সিরিজের মাঝপথে এভাবে ক্রিকেটারদের ছেড়ে দেওয়ায় প্রতিপক্ষেরই লাভ হচ্ছে। কারণ, ওয়ানডে সিরিজটি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ সুপার লিগের অংশ। এ ম্যাচগুলোর জয়-পরাজয় আগামী বিশ্বকাপে সরাসরি অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ভূমিকা রাখবে। প্রতিপক্ষের শীর্ষ পাঁচ ক্রিকেটারের দল ছেড়ে যাওয়ায় শেষ ওয়ানডে থেকে ১০ পয়েন্ট পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের। কিন্তু সাবেক অধিনায়ক রশিদ লতিফের ওই সব সুবিধা নিয়ে ভাবতেই বয়ে গেছে। পিটিভি স্পোর্টসের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে হাহুতাশ শুনিয়েছেন, ‘পাকিস্তান যদি তাদের মূল পাঁচ ক্রিকেটার ছাড়া খেলত, দক্ষিণ আফ্রিকা কি তখনো আমাদের সঙ্গে খেলত? তাহলে আমরা কেন ওদের সঙ্গে খেলতে রাজি হচ্ছি?’

লতিফ একা নন, দক্ষিণ আফ্রিকার এভাবে মূল তারকাদের এভাবে ছেড়ে দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ডেল স্টেইনও। কদিন আগেই আইপিএলের চেয়ে পিএসএল খেলে বেশি তৃপ্তি পান বলে আলোচনার জন্ম দেওয়া এই ফাস্ট বোলার পাকিস্তানি সমর্থকদের আরও ভালোবাসা জোগাড় করে নিয়েছেন টুইটারে। টুইটে রাবাদাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে কেন আমাদের বড় তারকারা খেলছে না, এর কারণ আমি বুঝতেই পারছি না।’