আইপিএলে অধিনায়ক কোহলির অধ্যায় কি শেষ?

অধিনায়কত্বের দর্শনটা তাঁর আক্রমণাত্মক হলেও আইপিএলে অধিনায়ক বিরাট কোহলির সাফল্যের খাতা শূন্য।ছবি: আইপিএল

একদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক হবেন। এরপর হবেন ভারতের অধিনায়ক। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের পর আইপিএল খেলা শুরুর পর থেকেই তরুণ বিরাট কোহলিকে নিয়ে এমন ভবিষ্যদ্বাণীই শোনা গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত হলেনও তাই। দেশের হয়ে পাঁচ বছর অধিনায়কত্ব করছেন। বড় কোনো শিরোপা নেই। বেঙ্গালুরুর হয়ে করছেন ৭ বছর। সেখানেও কোহলির হাত শূন্য।

আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানকে কেন থাকতে হচ্ছে শিরোপাশূন্য? তাঁর নেতৃত্বে দুটি আইসিসি টুর্নামেন্টের নকআউট পর্বে এসে হেরেছে ভারত। কিন্তু আইপিএলে? গত সাত বছরে একবারও বেঙ্গালুরুকে শিরোপা এনে দিতে পারেননি কোহলি।

একবারও বেঙ্গালুরুকে শিরোপা এনে দিতে পারেননি কোহলি।
ছবি: আইপিএল

এবারের আইপিএলের কথা বলা যাক। কাগজে–কলমে দল হিসেবে বেশ গোছাল ছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। ওপেনিং সামাল দিতে অ্যারন ফিঞ্চকে নেওয়া হয়। মাঝে কোহলি ও এবি ডি ভিলিয়ার্স তো আছেনই। লোয়ার মিডল অর্ডার সামলাতে মঈন আলী, সিবাম দুবে ছিলেন। বোলিংয়ে যুজবেন্দ্র চাহাল, ওয়াশিংটন সুন্দরের সঙ্গে নবদিপ সাইনি, মোহাম্মদ সিরাজরা ছিলেন। অভিজ্ঞ ডেল স্টেইন, উমেশ যাদবও।
এত তারকার পরও প্রতি আইপিএলে বেঙ্গালুরুর যা হয়, এবারও তাই হলো!

ব্যাটিংয়ে কোহলি-ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে নতুন মুখ দেবদূত পাড়িক্কাল ভালো করেছেন। বোলিংয়ে চাহাল-সুন্দর পুরো আইপিএলে ছিলেন ধারাবাহিক। লোয়ার মিডল অর্ডার থেকে কিছুই পায়নি বেঙ্গালুরু। কোহলি-ডি ভিলিয়ার্সের পর ম্যাচ ঘোরানোর মতো কেউ ছিলেন না। কোহলিদের খেলতে হয়েছে রয়েসয়ে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যে ব্যাটিং করে পার পাওয়া যায় না, সেটাই করেছেন এই দুই তারকা ক্রিকেটার। শুধু দলের ভারসাম্য না থাকায় এ সময়ের দুই বড় তারকাকে ব্যাটিং করতে হয়েছে ভয়–শঙ্কা নিয়ে।

দায় কোহলি ও টিম ম্যানেজমেন্টকেই নিতে হবে। লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাট করার জন্য আদর্শ ব্যাটসম্যান ম্যাচের পর ম্যাচ মঈনকে বেঞ্চেই বসিয়ে রাখে বেঙ্গালুরু! মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। বেঙ্গালুরুর পেস বোলিং আক্রমণের সমস্যা প্রতিবছরই ছিল। প্রতিবছরই একই সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় বেঙ্গালুরু ধারাবাহিক ব্যর্থ! এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। সেরা সময় পেছনে ফেলে আসা স্টেইনকে দিয়ে ফাস্ট বোলিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ কাজটা সারতে চেয়েছিলেন কোহলি। কিন্তু শুরুর দিকে কিছু ম্যাচ খেলা প্রোটিয়া ফাস্ট বোলার দ্রুতই আস্থা হারান বাজে পারফরম্যান্সে।

শেষ ভরসা ছিলেন ক্রিস মরিস। চোটের কারণে টুর্নামেন্টের শুরুতে খেলতে পারেননি এই প্রোটিয়া অলরাউন্ডার। মাঝে কিছু ম্যাচ খেলে দারুণ পারফর্ম করলেও শেষে এসে আবার চোটে ছিটকে পড়েন মরিস। কিছুতেই কাঙ্ক্ষিত ভারসাম্য খুঁজে পায়নি কোহলির দল। অথচ টুর্নামেন্টের শুরুতে কোহলি এবারের বেঙ্গালুরু দলকে তাঁর আইপিএল ক্যারিয়ারের সেরা ভারসাম্যপূর্ণ দল বলে দাবি করেছিলেন।

আইপিএলের শিরোপা কোহলির কাছে অধরাই রইল।
ছবি: আইপিএল

মজাটা হচ্ছে, প্রতি আইপিএলেই কোহলি একই আশা দেখান। কিন্তু মাঠে ফল আসে ভিন্ন। তাহলে সমস্যা কি কোহলির নেতৃত্বে? ২০১৩ সালে প্রথম আইপিএল অধিনায়কত্ব পান কোহলি। একই বছর মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের অধিনায়ক হন রোহিত শর্মা। এরপর থেকে রোহিত মুম্বাইকে চারবার চ্যাম্পিয়ন করেছেন। এম এস ধোনি চেন্নাইকে ১০ বছর নেতৃত্ব দিয়ে ৯ বার প্লে অফে নিয়েছেন, তিনবার শিরোপা জিতেছেন। কিন্তু কোহলির হাত শূন্য।

আইপিএলে অধিনায়কের কাজটা যে সহজ নয়, না বললেও চলছে। কিন্তু ব্যর্থ হওয়ার পরও কোহলির মতো এত লম্বা সুযোগ কোনো আইপিএল অধিনায়ক পাননি। এই সময়টায় বেঙ্গালুরুর কোচ ছিলেন ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, গ্যারি কারস্টেনের মতো ক্রিকেট মস্তিষ্ক। গত বছর দায়িত্ব নিয়েছেন আরেক তুখোড় কোচ মাইক হেসন। দলের ব্যর্থতায় চাকরি গেছে ভেট্টোরি আর কারস্টেনের। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে থেকে গেছেন কোহলি।

অথচ আইপিএলে অধিনায়কত্ব করতে না পেরে টুর্নামেন্টের মাঝপথে দায়িত্ব ছেড়েছেন রিকি পন্টিংয়ের মতো কিংবদন্তি। দুবার আইপিএল শিরোপা জেতা গৌতম গম্ভীরকেও ২০১৮ সালে দিল্লি ক্যাপিটালসের দায়িত্ব ছাড়তে হয়েছে। এবার যেমন দিনেশ কার্তিক আইপিএলের মাঝপথে অধিনায়কত্ব তুলে দেন এউইন মরগানের হাতে।

দুই সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর ও সঞ্জয় মাঞ্জরেকার তাই বেঙ্গালুরুর নতুন নেতৃত্ব চাইছেন। গম্ভীর বলছেন কোহলিকে সরে দাঁড়াতে। মাঞ্জরেকার ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের বলছেন কোহলিকে সরাতে। দুজনই বেঙ্গালুরুর নেতৃত্বে বদলের পক্ষে।

ক্রিকইনফোর বিশ্লেষণে গম্ভীর বলছিলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে জবাবদিহির অভাব। কোনো জবাবদিহি নেই। কে আছে এমন যে আট বছর অধিনায়ক কিন্তু কোনো সাফল্য নেই। তবু অধিনায়কত্ব আছে! একপর্যায়ে এসে তো আপনাকে নিজের ভুল মেনে নিতে হবে এবং বলতে হবে, আমার ভুল হয়েছে।’ মাঞ্জরেকারও প্রায় একই সুরে বললেন, ‘চাইব সিদ্ধান্তগুলো ওপর থেকে আসুক। কোহলিকে অধিনায়ক করেছেন দলের মালিকেরা। তাঁদের থেকে সিদ্ধান্ত আসার সময় এসেছে।’