‘আইপিএলে দাম বেশি হলেই বল বেশি করে সুইং শুরু করে না’

প্যাট কামিন্স গতবার আইপিএলে ছিলেন সবচেয়ে দামি বিদেশি।ছবি: আইপিএল

ফুটবলে যা দলবদল ফি, ক্রিকেটে সে জায়গাই যেন নিতে যাচ্ছে আইপিএলের নিলামের দাম। একজন খেলোয়াড়কে কত দামে কেনা হলো, সেটি ঠিক করে দেয় তাঁর ওপর প্রত্যাশা কেমন হবে। খেলাটা ক্রিকেট বা ফুটবল যা-ই হোক না কেন! অঙ্কটা যত বেশি, তত বেশি প্রত্যাশার চাপ।

গত বছরের আইপিএলে সে চাপ কি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন প্যাট কামিন্স? সাড়ে ১৫ কোটি রুপিতে বলিউড কিংবদন্তি শাহরুখ খানের ফ্র্যাঞ্চাইজি কলকাতা নাইট রাউডার্সে যাওয়ার পর যে রকম পারফরম্যান্স ছিল অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলারের, সেটিকে টেনেটুনে ‘গড়পড়তা’ বলা যেতে পারে।

সে চাপের দিকটা মানিয়ে নেওয়া যে একজন পেশাদার খেলোয়াড়ের দায়িত্ব, তা অবশ্য মেনে নিচ্ছেন কামিন্স। তবে এই চাপের যৌক্তিকতা নিয়ে একটা প্রশ্নও তুলে দিয়েছেন ২৮ বছর বয়সী ফাস্ট বোলার। তাঁর কথা, আইপিএলে একজন খেলোয়াড়ের দাম বেশি উঠলেই তো বল হঠাৎ করে তাঁর হয়ে কথা বলতে শুরু করে না কিংবা মাঠ বড় হয়ে যায় না!

সংযুক্ত আরব আমিরাতে করোনাকে পাশ কাটিয়ে গতবার যে আইপিএল হলো, তাতে ক্রিকেটারদের ভালো-খারাপ পারফরম্যান্সের অনেক কারণের সঙ্গে যোগ হয়েছিল দর্শকহীন মাঠে জৈব সুরক্ষাবলয়ের মানসিক ধকল সামলে কে কেমন খেলতে পারেন, সেই দিকও। কামিন্স খুব একটা ভালো খেলতে পারেননি। অন্তত বল হাতে নয়।

প্যাট কামিন্স।
ছবি: আইপিএল

১৪ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার উইকেট পেয়েছেন ১২টি, ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৮-এর বেশি। ব্যাট হাতে অবশ্য কিছুটা ভালোই খেলেছেন। একটি ফিফটিসহ ২০.৮৫ গড়ে করেছেন ১৪৬ রান। একজন বোলারের কাছ থেকে ইনিংসের শেষ দিকে ভালো রানই তো!

তবু বল হাতে ভালো-খারাপটাই তো তাঁর পারফরম্যান্সের মানদণ্ড, সেখানে গড়পড়তা পারফরম্যান্সের সমালোচনা শুনতে হয়েছে কামিন্সকে। সাড়ে ১৫ কোটি রুপিতে তাঁকে যে সে সময়ে সবচেয়ে দামি বিদেশি ক্রিকেটার বানিয়ে নিয়ে এসেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর), সেই তথ্যের কারণে সমালোচনা হয়তো আরও বেশিই হয়েছে।

দামের ব্যাপারটা যে বাড়তি চাপ তৈরি করে, তা মেনেও নিচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার। তবে পেশাদার ক্রিকেট মানেই চাপ জানিয়ে এই চাপের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও তিনি করেন বলে জানিয়েছেন কেকেআরের ইউটিউব চ্যানেলে, ‘আপনি যেখানেই পেশাদার ক্রিকেট খেলবেন, অনেক চাপ থাকবে। একটা ম্যাচে ভালো খেলবেন তো পরের ম্যাচে আবার তেমন খেলার চাপ থাকবে। আর এক ম্যাচে খারাপ করলে চাপটা হয়ে যায় ভালো কিছু করে দেখানোর।’

গত আইপিএলে ব্যাট হাতে খারাপ করেননি কামিন্স।
ছবি: আইপিএল

চাপ মেনে নেওয়ার কথা জানাচ্ছেন ঠিকই। মানিয়ে নিয়েই তো খেলছেন। তবে আইপিএলে দামের তথ্য জড়িয়ে বাড়তি চাপের ব্যাপারটি যে খুব একটা পছন্দও নয় তাঁর, সেটি সম্ভবত বুঝিয়ে দেয় কামিন্সের পরের কথাগুলো, ‘(আইপিএলে) শুধু আপনি চড়া দামে বিক্রি হওয়ার মানেই তো এই নয় যে বল হঠাৎ করে আপনার হয়ে বাড়তি সুইং করা শুরু করবে বা উইকেট হঠাৎ করে বেশি সবুজ হয়ে যাবে কিংবা বাউন্ডারি বড় হয়ে যাবে।’

হিসেবটা সহজ, দাম যতই হোক, খেলোয়াড় তো একই থাকছেন। তাঁর আগের পারফরম্যান্স, যে দল তাঁকে কিনতে চাইছে তাদের প্রয়োজন, নিলামে তাঁর ঘরানার ক্রিকেটারের জোগানের পরিস্থিতি—সবকিছু মিলিয়ে আইপিএলের নিলামে একজন খেলোয়াড়ের দাম হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে ঠিকই। কিন্তু মাঠে নেমে যাওয়ার পর তো সেসব অর্থহীন। তখন শুধু ব্যাট আর বলের লড়াইটাই সত্যি।