আইপিএলে ভাগ বসাতে চাইছে পিএসএল

আইপিএলের সময়টায় ক্রিকেট দুনিয়ায় অন্য সব সিরিজ গুরুত্ব হারায়।ছবি: আইপিএল

হঠাৎ করে করোনার হানা পড়েছে পাকিস্তানের সুপার লিগে (পিএসএল)। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোতে খেলোয়াড়েরা জৈব সুরক্ষাবলয়ের নিয়মকানুন কড়াকড়িভাবে মানেননি বলে গুঞ্জন আছে, সেটিরই প্রভাব পড়েছে। গত চার দিনে ছয় ক্রিকেটারসহ পিএসএলে সাতজনের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে। তা-ও ভিন্ন ভিন্ন দলে। সে কারণে আজ পিএসএলের এবারের মৌসুমের বাকি অংশ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

কিন্তু সে তো পুরোনো খবর। এখন ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রশ্ন, পিএসএলের বাকি অংশ কবে আয়োজন করা যেতে পারে? সেটির উত্তরে যা জানা যাচ্ছে, তাতে ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগ আইপিএলের সঙ্গে পিএসএলের দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। আইপিএল আর পিএসএলের বাকি অংশ একই সময়ে হতে পারে বলে গুঞ্জন।

পিএসএল স্থগিত হয়ে গেছে।
ছবি: এএফপি

আইপিএলের দিন-তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। তবে এবার এপ্রিলের মাঝামাঝিতে শুরু হয়ে মে মাস পর্যন্ত আইপিএল অনুষ্ঠিত হবে বলে জানাচ্ছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। পিএসএলের বাকি অংশও মে মাসেই হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আইপিএলের শেষের দিক আর পিএসএলের বাকি অংশের সূচি সাংঘর্ষিক হয়ে যাবে।

ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তো ক্রিকেট মাঠেও কম ছড়ায়নি। আইপিএল আর পিএসএলের দ্বন্দ্বও হয়তো সে কারণেই। তাতে বাড়তি রসদ জুগিয়েছে গত বছর অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ করোনার কারণে স্থগিত হয়ে গেলেও সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে আইপিএলের আয়োজন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বদলে আইপিএলে এত মনোযোগ দেওয়া পাকিস্তান ভালোভাবে নেয়নি। এখন পিএসএল আর আইপিএলের সূচিতে সংঘর্ষ হলে সেটা আরও বড় আলোচনার খোরাক জোগাবে বৈকি।

তবে পাকিস্তান যে ভারতকে খোঁচানোর জন্য আইপিএলের সময়ে পিএসএলের বাকি অংশ আয়োজনের কথা ভাবছে, তা নয়। ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো জানাচ্ছে, অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপসহ এ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যেমন ঠাসা সূচি, তাতে মে মাস ছাড়া পিএসএল আয়োজনের আর কোনো সময় পাওয়ার সম্ভাবনা কমই। তখন পিএসএলের বাকি অংশ আয়োজন করতে না পারলে এবারের মৌসুম হয়তো বাতিলই করে দিতে হতে পারে পাকিস্তানকে।

গতবার আইপিএল অনুষ্ঠিত হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
ছবি: আইপিএল

পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রধান নির্বাহী ওয়াসিম খান অবশ্য অন্য সময়ে পিএসএল আয়োজনের সম্ভাবনা নিয়ে ভাবনা চলছে বলে জানিয়েছেন, ‘আমরা সূচিতে অন্য কোনো ফাঁকা জায়গা খুঁজতে থাকব, আশা করি পরে কোনো এক সময়েও খেলতে পারব আমরা।’ আপাতত অবশ্য পিএসএলের বাকি অংশের আয়োজন নয়, ওয়াসিম খানদের ভাবনাজুড়ে আছে অন্য চিন্তা, ‘এই মুহূর্তে যা নিয়ে কাজ করছি, তা হলো সতর্কতার সঙ্গে ধীরে ধীরে খেলোয়াড়দের এখান থেকে বের করে নেওয়া, যাতে তাঁরা নিরাপদে বের হয়ে যেখানে যেতে চান, সেখানে যেতে পারেন।’ পিএসএল অনুরাগীদের জন্য আপাতত শুধু এতটুকুই প্রতিশ্রুতি ওয়াসিম খানের, ‘...আমরা অবশ্যই পিএসএল চালিয়ে যেতে চাই, এবারের মৌসুম শেষ করতে চাই।’

গত মৌসুমেও করোনার কারণে পিএসএল প্রথমে স্থগিত করতে হয়েছিল পিসিবিকে। দুই দফায় শেষ হয়েছিল পিএসএল। মার্চে করোনা প্রথমবার হানা দেওয়ার পর ২০২০ পিএসএল স্থগিত করা হয়। তখন শুধু নকআউট পর্বের ম্যাচ বাকি ছিল। পরে নভেম্বরে জৈব সুরক্ষাবলয়ের মধ্যে সেই ম্যাচগুলো হয়েছে, যেখানে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে করাচি কিংস। এই মৌসুমে অর্থাৎ পিএসএল ২০২১-এ স্থগিত হওয়ার আগে ৩৪ ম্যাচের ১৪টি হতে পেরেছে।

পাকিস্তানের ক্রিকেট সূচিতে হঠাৎ শূন্যতা।
ছবি: প্রথম আলো

এবারের পিএসএলের বাকি অংশের আয়োজনে গত মৌসুমের অভিজ্ঞতাকেই পুঁজি মানছেন ওয়াসিম খান, ‘(পিএসএলের) পঞ্চম মৌসুমে আমরা যেমনটা করেছিলাম—সূচিতে একটা উইন্ডো খুঁজে বের করেছি, ম্যাচগুলো শেষ করেছি। আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস, এবারও সে রকমই কিছু করতে পারব, সূচিতে পরে অন্য কোনো জায়গা খুঁজে বের করতে পারব।’

গুঞ্জন আছে, পিএসএল এবার স্থগিত হওয়া আর এভাবে করোনা ছড়ানোর কারণ ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের ঠিকভাবে জৈব সুরক্ষাবলয়ের নিয়মকানুন না মানা। পিসিবি প্রধান নির্বাহীর কথায়ও তেমন ইঙ্গিত, ‘টুর্নামেন্টের শুরুতে জৈব সুরক্ষাবলয় ভাঙার ছোট্ট একটা ঘটনা (পেশোয়ার জালমির ড্যারেন স্যামি, ওয়াহাব রিয়াজদের ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া, ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক জৈব সুরক্ষাবলয়ের বাইরে ছিলেন) সামলাতে হয়েছে আমাদের। আমরা সম্ভাব্য সবকিছুই করেছি। কিন্তু যেকোনো জৈব সুরক্ষাবলয়ের ক্ষেত্রে আপনার দুই পক্ষের চেষ্টা থাকতে হবে, শৃঙ্খলা থাকতে হবে, স্বেচ্ছায় নিয়ম মেনে চলতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত, সেটা আমরা কার্যকরভাবে করতে পারিনি, সে কারণেই এ অবস্থায় পড়তে হয়েছে আমাদের।’

পিএসএল এভাবে স্থগিত হয়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের মাটিতে ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলোও কিছুটা ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে জানাচ্ছে ক্রিকইনফো। এ বছরে বেশ কয়েকটি দলকে পাকিস্তানে আনার পরিকল্পনা আছে পিসিবির। গত কয়েক মাসে কয়েকটি সিরিজের সফল আয়োজন করে সে লক্ষ্যে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিল পিসিবি, জৈব সুরক্ষাবলয় নিশ্চিত করতে না পারার ব্যর্থতায় পিএসএলের এভাবে স্থগিত হয়ে যাওয়া পিসিবির জন্য ধাক্কা হয়ে এল আর কি!