আইপিএলে যেখানে রশিদ খান সবার ওপরে
করোনা দাবড়ে বেড়ানোয় হয়তো সেভাবে আলোকসজ্জা হচ্ছে না। দর্শকের মাতামাতি থাকবে না। ভুতুড়ে পরিবেশে শোনা যাবে ব্যাটে বল লাগার মধুর আওয়াজ। করোনার চোখরাঙানিকে পাশ কাটিয়ে আইপিএল শুরু হচ্ছে কাল।
দর্শকহীন মাঠে ছয়টি ভিন্ন ভেন্যুতে জৈব সুরক্ষাবলয়ে থাকবে দলগুলো। প্রথম দিনে কাল বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু নামবে সর্বশেষ দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন ও টুর্নামেন্টে রেকর্ড শিরোপাজয়ী রোহিত শর্মার মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে।
আইপিএলেরই মৌসুম শুরু হলো বলে!
কোন দল কত ভালো বা খারাপ হলো, কে আলো ছড়াবেন, কোহলির প্রথম আইপিএল শিরোপার খোঁজ প্রাপ্তিতে রূপ নেবে কি না, কিংবা রোহিতের মুম্বাই গড়বে কি না, টানা আইপিএল শিরোপার হ্যাটট্রিক...আলোচনার বিষয়ের কি অভাব আছে! আলোচনা চলছে ব্যাটসম্যান-বোলারদের নিয়েও।
কারও আলোচনায় হয়তো প্রাধান্য পাচ্ছে কোনো বোলারের আগামী দেড় মাসের সম্ভাবনা, তাহলে রেকর্ড আর কী দোষ করল? আগের ১৩ মৌসুমের রেকর্ডেরও তো কিছু বলার থাকতে পারে!
বলছে। আর তাতে একটা অংশে লেখা আফগানিস্তানের লেগ স্পিনার রশিদ খানের কিপটেমির কীর্তিগাথা। আইপিএলের ইতিহাসে অন্তত ১০০ ওভার বল করেছেন, এমন বোলারদের মধ্যে ওভারপ্রতি গড়ে সবচেয়ে কম রান দেওয়ার রেকর্ড রশিদের।
টি-টোয়েন্টি তো ব্যাটসম্যানদেরই খেলা। বোলারদের সেখানে সৎছেলের মর্যাদা। দর্শকও যান চার-ছক্কার ফুলঝুরি দেখতে, মাঠ-ব্যাট-পিচে থাকে ব্যাটসম্যানদের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়ানোর তাড়া। বোলারদের জন্য সেখানে কী আর থাকে?
সেই টি-টোয়েন্টিতেই একজন বোলার যদি ওভারপ্রতি রান দেওয়ার হিসাবে সবচেয়ে এগিয়ে থাকেন, বুঝে নিতে কষ্ট হয় না কেন তাঁকে নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। রশিদ খানের ইকোনমি রেট কত? মাত্র ৬.২৪!
সময়ের অন্যতম সেরা লেগ স্পিনার সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে এ পর্যন্ত খেলেছেন ৬২ ম্যাচ। তাতে ২৪৬ ওভার বল করেছেন রশিদ। তালিকাটা করাই হয়েছে অন্তত ১০০ ওভার হাত ঘোরানো বোলারদের নিয়ে, তাতে রশিদের পরের নামটিও এক লেগ স্পিনারের। ভারতের কিংবদন্তি স্পিনার অনিল কুম্বলে, ইকোনমি রেট ৬.৫৭। ওভারপ্রতি গড়ে ৬.৬৭ রান দিয়ে তিনে শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি অফস্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন।
মজার ব্যাপার কী, তালিকার ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই স্পিনার। পেসারকুলের প্রতিনিধি হয়ে তালিকার আট নম্বরে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ফাস্ট বোলার ডেল স্টেইন, ইকোনমি রেট ৬.৯১। শুধু আইপিএলই কেন, সব জায়গায় টি-টোয়েন্টিতে বেধড়ক মার ঠেকাতে স্পিনের মায়াই যে সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ, জানা তথ্যটাতে সাক্ষ্য দিচ্ছে পরিসংখ্যানও।
আইপিএলে ইকোনমি রেটের হিসাবে সেরা দশ বোলার:
কিপটেমিতে রশিদ, উইকেট নেওয়ায় এগিয়ে লাসিথ মালিঙ্গা। ১২২ ম্যাচে ১৭০ উইকেট নিয়েছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে খেলা লঙ্কান ফাস্ট বোলিং কিংবদন্তি।
তালিকার দুইয়ে কে আছেন, তা অবশ্য 'দেখি তো, বলতে পারেন কি না' ধরনের কুইজের প্রশ্ন হতে পারে। তেমন পরিচিত কোনো নাম তিনি নন, নন দৃশ্যত বিধ্বংসী কোনো উইকেটশিকারিও। নামটা কী? অমিত মিশ্র। ১৫০ ম্যাচে ১৬০ উইকেট নিয়েছেন ভারতীয় লেগ স্পিনার। তিনে আরেক ভারতীয় লেগি পিযুষ চাওয়া, উইকেট ১৫৬টি।
বোলারদের রেকর্ড নিয়েই যখন আলোচনা হচ্ছে, উইকেট আর ইকোনমি রেট ছাড়িয়ে আলোচনাটা আরেকটু বিস্তৃত করে দিলে তো আর কেউ গোস্সা নিশ্চয়ই করবেন না! হ্যাটট্রিকের রেকর্ড নিয়ে আলোচনা করা যায়। এখন পর্যন্ত আইপিএলের ১৩টি মৌসুম ১৯টি হ্যাটট্রিক দেখেছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিকের রেকর্ড কার? একটু আগের যে নামটাকে পরিচয় করানোর আগে তাঁকে কেন বিধ্বংসী উইকেটশিকারি বলা হয় না, সে বর্ণনায় বেশ কিছু শব্দ খরচ করতে হয়েছিল। চেহারায়, গড়নে শিকারির বিপরীত শব্দই বরং যাঁর সঙ্গে যায়, সেই অমিত মিশ্র ৩টি হ্যাটট্রিক করে আইপিএলে রেকর্ডধারী। ২ হ্যাটট্রিক নিয়ে তালিকার দুই নম্বরে সাবেক ভারতীয় অলরাউন্ডার যুবরাজ সিং। একের বেশি হ্যাটট্রিকই আর কারও নেই।
এবার আসা যাক ম্যাচে ৪ উইকেটের রেকর্ডে। ওয়ানডে-টেস্টে পাঁচ উইকেটকে মাইলফলক মানা হলেও বিশ-বিশে সংখ্যাটা চার। হবে না কেন! টি-টোয়েন্টিতে একজন বোলার ওভারই করার সুযোগ পান মাত্র ৪টি। ২৪ বলের মধ্যে ৫ উইকেট পাওয়ার ঘটনা একেবারে বিরলও নয়, তবে সেটা তো আর ছেলের হাতে মোয়া নয়। তাই ৪-ই সই! সেখানে রেকর্ডটা সুনীল নারাইন ও লাসিথ মালিঙ্গার। ৭ বার করে ম্যাচে ৪ উইকেট পেয়েছেন দুজন।
আইপিএলে উইকেটের হিসাবে সেরা দশ বোলার:
ইনিংসে পাঁচ উইকেটের বেশি নেওয়ার কীর্তিও অবশ্য আছে আইপিএলে। তবে বিরল। এখন পর্যন্ত ৬ উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে শুধু তিনজনের। পাকিস্তানের সোহেল তানভীর (২০০৮) ও অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম জাম্পার (২০১৬) আছেন তালিকায়, তবে এঁদের কারও দখলে ইনিংসে সবচেয়ে ভালো বোলিংয়ের রেকর্ডটা নয়। সেটি দখল করে রেখেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের আলজারি জোসেফ। ২০১৯ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে মাত্র ১২ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার।