আইপিএলে শুধু ‘মজা করতেই আসেন’ ম্যাক্সওয়েল

আইপিএলে ম্যাচ শেষ হলেই নাকি বিনামুল্যে পাওয়া পানীয় নিয়ে নিজের কামরায় চলে যান ম্যাক্সওয়েলছবি: টুইটার

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে দেখে আইপিএলের গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ওপর রাগটা যাচ্ছেই না বীরেন্দর শেবাগের!

একেকটা ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ম্যাক্সওয়েল ভালো করেন, আর শেবাগের ক্ষোভটা যেন আরেকটু জেগে ওঠে।

এবারের আইপিএলে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে ম্যাক্সওয়েলের পারফরম্যান্স আর পাঞ্জাব তাঁকে ১০ কোটির বেশি রূপিতে কিনেছে—দুটি মিলিয়ে ‘ম্যাক্সি’কে এর আগে ‘১০ কোটির চিয়ারলিডার’ বলেছিলেন শেবাগ।

কাল ভারতের বিপক্ষে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে ম্যাক্সওয়েলকে জ্বলে উঠতে দেখে আরেকবার রাগে জ্বলে উঠলেন সাবেক ভারতীয় ওপেনারও।

এবার তাঁর কথা, আইপিএলে ম্যাক্সওয়েল নাকি ক্রিকেটকে গুরুত্বই দেন না, তিনি আইপিএলে আসেনই মজা করতে!

আইপিএলে ম্যাক্সওয়েল তেমন আলো ছড়াতে পারেননি কখনো, এটা সত্যি। সব মিলিয়ে ৮২ ম্যাচের আইপিএল ক্যারিয়ারে মারকুটে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং অলরাউন্ডারের রান ১৫০৫। গড় মাত্র ২২.১৩, স্ট্রাইক রেট ১৫৪.৬৭।

সেঞ্চুরি একটিও নেই, ফিফটি ছয়টি। আইপিএলে তাঁর আট মৌসুমের কোনোটিতে তাঁর গড় ৩০ পেরিয়েছে—এমন মৌসুম ম্যাক্সওয়েল কাটিয়েছেন দুবার—২০১৪ (গড় ৩৪.৫০) ও ২০১৭ (৩১.০০)। এর বাইরে গড় ২০-এর ঘরই কখনো পার হয়নি।

এই মৌসুম তো জঘন্যই কেটেছে। মারকাটারি ব্যাটিংয়ে যেকোনো দিন প্রতিপক্ষকে দুমড়েমুচড়ে দিতে পারেন—ক্যারিয়ারজুড়ে ম্যাক্সওয়েলকে ঘিরে এই ধাঁধা টি-টোয়েন্টিতে তাঁকে ‘হটকেক’ বানিয়ে রেখেছে।

এবার তাঁকে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব কিনেছে ১০ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে। কিন্তু দামের সঙ্গে মানানসই পারফরম্যান্স ম্যাক্সওয়েলের ছিল না। ১৩ ম্যাচে করেছেন মাত্র ১০৮ রান, ফিফটি নেই একটিও। স্ট্রাইক রেট আরও হতাশাজনক—১০১.৮৮!

শেবাগ তখন বলেছিলেন, ম্যাক্সওয়েল আসলে ‘দশ কোটির চিয়ারলিডার’। এবারের আইপিএলে যে সময়টা কাটিয়েছেন ম্যাক্সি, সেটিকে ‘ছুটি’ অভিহিত করে শেবাগ বলেছিলেন, ‘এটাকেই বলে ছুটি কাটিয়ে অনেক টাকা কামানো।’

ম্যাক্সওয়েল তখন শেবাগের ঠোঁটকাটা স্বভাবের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, এসব কথা তিনি গায়ে মাখেন না।

তা আইপিএলে যেমনই খেলুন, অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে অন্য রকম ম্যাক্সওয়েলকেই দেখা গেল। ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ব্যাট হাতে দুটি ফিফটিসহ করেছেন ১৬৭ রান।

তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ভালো না করলেও কাল তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ১২ রানের জয়ে অনেক বড় অবদান তাঁর ৩৬ বলে ৫৪ রানের ইনিংসটির।

ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যায় হয়তো এটিকে এভাবে দেখা যেতে পারে, করোনায় অনেক দিন ক্রিকেটের বাইরে থাকার পর আইপিএলে নেমেই ছন্দ ফিরে পেতে কষ্ট হয়েছে ম্যাক্সওয়েলের।

কিন্তু আইপিএলে ম্যাচ খেলা, অনুশীলন তাঁকে আরও ছন্দে ফিরতে সাহায্য করেছে, প্রক্রিয়াটার ফল এখন ম্যাক্সওয়েল পাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে এসে।

কিন্তু শেবাগ ওসব যুক্তির ধার ধারেন না, অথবা তাঁর যুক্তি ভিন্ন। সনি নেটওয়ার্কে সাবেক ভারতীয় ওপেনারের ছাঁচাছোলা সমালোচনা, ‘আইপিএলে ও (ম্যাক্সওয়েল) কোনো চাপই নেয় না। ও সেখানে যায় শুধু মজা করার জন্যই। ম্যাচে সে সবকিছুই করে, খেলোয়াড়দের উৎসাহ দেয়, ঘুরে বেড়ায়, নাচে...শুধু রানটাই করে না।’

২০১৪ ও ২০১৫ আইপিএলে পাঞ্জাবের দলে ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে একই দলে খেলা শেবাগ আইপিএলের সময়ে ম্যাক্সির আচরণ নিয়ে দাবি করলেন, ‘ম্যাচ শেষ হলেই ও বিনা মূল্যে পানীয় পেয়ে যায়, সেগুলো সে নিজের রুমে নিয়ে যায়। অথবা রুমে গিয়ে অনেক পানীয় নিয়ে খায়।’

আইপিএলে এলে ক্রিকেটের চেয়ে গলফেই নাকি বেশি আগ্রহ থাকে ম্যাক্সওয়েলের—এমনই দাবি শেবাগের, ‘আমার কখনোই মনে হয়নি আইপিএলে ও ক্রিকেটটাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। যখন আইপিএলে আসে, ও ক্রিকেটের চেয়ে গলফ নিয়েই বেশি সিরিয়াস থাকে। কারণ (ক্রিকেট নিয়ে) সিরিয়াস থাকলে সেটা ওর পারফরম্যান্সে বোঝা যেত।’

তাহলে অস্ট্রেলিয়া দলে এত ভালো খেলছেন কীভাবে ম্যাক্সওয়েল? সেটিরও একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন শেবাগ। সেখানে আর্থিক ব্যাপার জড়িত।

শেবাগের চোখে, আইপিএলে একবার দল পাওয়া মানেই একাদশে সুযোগ না পেলেও কোটি কোটি রুপির চেকের নিশ্চয়তা। কিন্তু জাতীয় দলের ক্ষেত্রে ভালো না খেললে দল থেকে বাদ পড়ার শঙ্কা থাকে, তাতে পরে চুক্তি থেকে বাদ পড়ারও শঙ্কা থাকে।

‘অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে গেলে ওর মনোভাব বদলে যায়। যখন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে যায়, ও জানে দুটি বা তিনটি ইনিংস খারাপ খেললেই ও অস্ট্রেলিয়া দল থেকে বাদ পড়ে যাবে এবং সেখান থেকে দলে ফিরে আসা আবার কঠিন হবে’—শেবাগের বিশ্লেষণ।

এবার ম্যাক্সওয়েল কোনো জবাব দেবেন? নাকি এই সমালোচনাও ‘ওসব গায়ে মাখি না’ বলে এড়িয়ে যাবেন?