অর্থবিত্তে ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে লোভনীয় প্রতিযোগিতা আইপিএল। শুধু ক্রিকেটের গণ্ডি ছাপিয়ে ম্যাচপ্রতি আয়ে বিশ্বে এখন দ্বিতীয় দামি প্রতিযোগিতাও আইপিএল। ‘সোনার ডিম’ পাড়া এই ‘হাঁস’ থেকে তাই যতটা সম্ভব আয় করে নিতে চাইছে সবাই। সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি করে মাত্রই সব রেকর্ড ভেঙে ফেলা আইপিএলকে আরও লাভজনক করার পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হয়েছে এক ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকদের একজন।
আইপিএলের এক অংশ ভারতে আর বাকি অর্ধেক দেশের বাইরে আয়োজন করার প্রস্তাব দিয়েছেন পাঞ্জাব কিংসের মালিকদের একজন, নেস ওয়াদিয়া। প্রীতি জিনতার ব্যবসায়িক সঙ্গী চাইছেন চার মাস লম্বা আইপিএলের অর্ধেক ভারতে, বাকি অর্ধেক বাইরে।
চোখ কপালে তোলা ৬২০ কোটি মার্কিন ডলারে আইপিএলের সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি হয়েছে। সম্প্রচার স্বত্বকে চারটি ভাগে ভাগ করে অনলাইন নিলামে বিক্রি করে পাঁচ বছরের জন্য ৪৮ হাজার ৩৯০ কোটি রুপি আয় নিশ্চিত করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড, যা আগের চক্রের প্রায় তিন গুণ। এরই মধ্যে আগামী বছর থেকে আইপিএলের জন্য আইসিসির ভবিষ্যৎ সফরসূচি থেকে আড়াই বছর চাইছে বিসিসিআই। বোর্ড সচিব জয় শাহ বলেন, তাঁদের এমন দাবির উদ্দেশ্য বিশ্বের সেরা তারকাদের পাওয়ার পথে জাতীয় দলের সিরিজ যেন বাধা না হতে পারে।
বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সম্প্রচার স্বত্বকে এভাবে ভাগ করার বুদ্ধির প্রশংসা করেছেন ওয়াদিয়া। কিন্তু এটুকুতেই সন্তুষ্ট নন ওয়াদিয়া, পাঞ্জাব কিংসের মালিক ঘরের মাঠে ম্যাচ বাড়াতে চান, বাড়াতে চান আইপিএলের ম্যাচও। তিনি বলেন, আইপিএল বিশ্ব পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ক্রিকেটের যে বাড়তি কিছুর দরকার ছিল, সেটা আইপিএল দিয়েছে এবং এই খেলাকে বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে। এটা আরও বড় হবে। কিন্তু ঘরের মাঠে সাত ম্যাচ খুব কম হয়ে যায়। অন্তত ১৪টা হওয়া উচিত (ঘরের মাঠে)। আমার মনে হচ্ছে, আইপিএলের মৌসুম আরও দীর্ঘ হবে, যেটা আরও বহু আগেই হওয়া উচিত ছিল।’
ভারতের মাটিতে যদি দীর্ঘ আইপিএলে আপত্তি থাকে, তবে বিকল্প ব্যবস্থাও আছে ওয়াদিয়ার কাছে, ‘যদি চার মাসের দীর্ঘ মৌসুম না করা যায়, তবে দুটি মৌসুম করতে কী সমস্যা। একটা ভারতে, অন্যটি প্রতিবছর ভিন্ন কোনো দেশে। বিশ্বের সবখানে ভারতীয়রা আছেন। ফলে আরও ম্যাচ বাড়ানোর সম্ভাবনা আছে।’
গত মৌসুমে আট ফ্র্যাঞ্চাইজির আইপিএলে সব দল ১৪টি করে ম্যাচ করে খেলেছে। এই ম্যাচগুলো হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে হয়েছে। ২০২২ আইপিএলে ১০ দল খেলছে। এবারও ১৪টি করে ম্যাচ ছিল দলগুলোর। কিন্তু সর্বশেষ দুই বছর করোনার কারণে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে খেলা হয়নি আইপিএল। সে কারণে গ্যালারিতে অন্য বছরগুলোর তুলনায় দর্শকের সমর্থন অনেক দলই পায়নি।
ঘরের মাঠে ম্যাচ বাড়ানোর পক্ষে ওয়াদিয়ার যুক্তি, ‘ঘরের মাঠে সাত ম্যাচ আসলেই কি বেশি কিছু? আমার মতে তো খুব কম। আরও বড় একটা উইনডো দরকার। ম্যাচপ্রতি দামে, আইপিএলে এখন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের চেয়ে দামি। আর সেখানে প্রতিটি দল কতগুলো ম্যাচ খেলে দেখুন (৩৮)।’ ওয়াদিয়ার ধারণা, দিন দিন ফুটবলের পথে হাঁটবে ক্রিকেট, যেখানে লিগের খেলাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, ‘আমি তো বলব, এখনই হচ্ছে। কোনো সন্দেহ নেই, এটা একসময় হবেই। আইপিএল ক্রিকেটের পুনর্জন্ম দিয়েছে, বড় করেছে, বিশ্বায়ন করেছে। এটা হিমবাহের চূড়া মাত্র।’