আইপিএলের জৈব সুরক্ষাবলয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভারতীয় ক্রিকেটাররাই

করোনা মহামারিতে স্থগিত হয়েছে এবারের আইপিএল।ছবি: টুইটার

তাহলে অ্যাডাম জাম্পা সত্য কথাই বলেছিলেন?

ভারতে করোনার ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়া সরকার দেশটির সঙ্গে সরাসরি আকাশ যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার আগেই আইপিএল ছাড়ার ঘোষণা দেন জাম্পা।

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর এই লেগ স্পিনার যাওয়ার সময় বলেছিলেন, আইপিএলে জৈব সুরক্ষাবলয় তাঁর কাছে নড়বড়ে মনে হয়েছে। ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’কে জাম্পা বলেছিলেন, আইপিএলে জৈব সুরক্ষাবলয় নড়বড়ে ছিল।

পাশাপাশি জাম্পা এটাও যোগ করেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০২০ আইপিএল যে জৈব সুরক্ষাবলয়ে হয়েছিল, সেটি এবারের আইপিএলের জৈব সুরক্ষাবলয়ের চেয়ে শক্তিশালী ছিল।

ভারতে এবারের আইপিএল স্থগিত হওয়ার আগে চারটি ফ্র্যাঞ্চাইজির ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফ মিলিয়ে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হন।

স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে, আইপিএলে জৈব সুরক্ষাবলয়ে ফোকর ছিল বলেই কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমিত হতে পেরেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দেশটির কিছু ক্রিকেটারও মনে করেন, গত বছর আরব আমিরাতের তুলনায় এবার নিজ দেশে আইপিএলে জৈব সুরক্ষাবলয় অতটা শক্তিশালী ছিল না।

চার খেলোয়াড় ও দুজন কোচ সংক্রমিত হওয়ার পর স্থগিত করা হয় আইপিএল। ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআই আইপিএলের কিছু ভারতীয় ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলেছে জৈব সুরক্ষাবলয় নিয়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খেলোয়াড় জানিয়েছেন, আরব আমিরাতের মতো শক্ত জৈব সুরক্ষাবলয় ভারতে এবারের আইপিএলে ছিল না। গত বছর আরব আমিরাতে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কয়েকজন কোভিড পজিটিভ হলেও খেলা শুরুর পর একজনও সংক্রমিত হননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই খেলোয়াড় পিটিআইকে বলেন, ‘বিসিসিআই এবং দলগুলো সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও জৈব সুরক্ষাবলয় আরব আমিরাতে বেশি শক্তিশালী ছিল। এখানে (ভারতে আইপিএল) দেখবেন অন্য জায়গার লোকেরাও যত্রতত্র আসা-যাওয়া করছে। অনেকে তো সুইমিংপুলও ব্যবহার করে। অনুশীলনের জায়গাও দূরে।’

ভারতের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী শ্রীভত গোস্বামী এবার খেলছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদে। তাঁর মতে, খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফদের কেউ জৈব সুরক্ষাবলয় ভাঙেনি, ‘জৈব সুরক্ষাবলয়ের ভেতরে আমাদের ভালোভাবে রাখা হয়েছে। খেলোয়াড় কিংবা স্টাফদের কেউ এটা ভাঙেনি। কিন্তু অস্বীকার করব না, একবার ভাইরাস ঢোকার পর সবাই ভীত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বিদেশি ক্রিকেটাররা। তখন আর কিছু করার থাকে না।’

আইপিএলের জৈব সুরক্ষাবলয়ের মধ্যে কোভিড ভাইরাস অনুপ্রবেশের পর সবাই নাকি নিজেদের পরিবার নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় ছিলেন। শ্রীভত গোস্বামীর ভাষায়, ‘আমি একজন ক্রীড়াবিদ। আমার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভালো। সৃষ্টিকর্তা না করুন, সংক্রমিত হলে আমি হয়তো বেঁচে যাব। কিন্তু লক্ষণহীন একজন বাহক হিসেবে আমার কারণে যদি আমার বাবা-মা সংক্রমিত হয়, তখন কী হবে? ভাইরাস ঢোকার পর সবাই এটা নিয়েই বেশি দুশ্চিন্তায় ছিল।’

ভারতে করোনার ভয়াবহতা বেড়েই চলছে। গতকাল দেশটিতে সংক্রমণের সংখ্যা ৪ লাখের বেশি। হাসপাতালগুলোয় পর্যাপ্ত শয্যা নেই। চলছে প্রকট অক্সিজেনের সংকট। বিদেশি ক্রিকেটাররা ভারতের এই পরিস্থিতি দেখে আরও বেশি শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন।

শ্রীভত গোস্বামী বলেন, ‘যখন আপনি দেখবেন লোকজন অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছে, হাসপাতালগুলোয় পর্যাপ্ত চিকিৎসাব্যবস্থা নেই, তখন ভয় লাগবেই। বিদেশিরা বেশি ভীত হয়ে পড়েছিলেন। আমরা ভারতীয়রা তাঁদের শান্ত রাখার চেষ্টা করেছি। অনেকে তো দুশ্চিন্তায় ছিল এই ভেবে, “এখানে (ভারতে) কোভিডে সংক্রমিত হলে তাঁর নিজ দেশের স্বাস্থ্যবিমা কি কাজে আসবে”।’

ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার দীপ দাশগুপ্ত মনে করেন, আরব আমিরাতের তুলনায় তাঁর দেশে এবার আয়োজিত আইপিএলের জৈব সুরক্ষাবলয়ে ছিদ্র ছিল না। জৈব সুরক্ষাবলয়ের মধ্যে তাদের ভালোই দেখাশোনা করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক খেলোয়াড় জানান, টুর্নামেন্ট শুরুর সময় জৈব সুরক্ষাবলয় শক্তিশালী ছিল। কিন্তু টুর্নামেন্ট এগিয়ে চলার সঙ্গে তা ধরে রাখা যায়নি। ‘শুরুতে এটা (জৈব সুরক্ষাবলয়) ভালো ছিল। কিন্তু ভাইরাস কীভাবে ঢুকল তা কেউ বলতে পারবে না।’