আইপিএলের নিলামে সবচেয়ে বেশি দাম পেয়েছিলেন যাঁরা

এবার কে হবেন সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়?ছবি: প্রথম আলো

ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে জমজমাট দুটি দিন চলে এসেছে। আগামীকাল শুরু হচ্ছে নিলাম। শেষ হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি। প্রতিবছরই আইপিএল নিলাম হয়। আর এ নিয়ে নড়েচড়ে বসে ক্রিকেট দুনিয়া। এবার একদম উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে পড়ার দশা হতে পারে। এবার যে মেগা নিলাম হচ্ছে। আইপিএলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠা আট দলকে সর্বোচ্চ চারজন করে খেলোয়াড় ধরে রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। নতুন যোগ হওয়া দুই দল গুজরাট টাইটানস ও লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে তিনজন খেলোয়াড়কে দলে টানার।

সব দল সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। ফলে ১০ দল মিলিয়ে মাত্র ৩৩ জন খেলোয়াড়েরই ফ্র্যাঞ্চাইজি নিশ্চিত হয়েছে। প্রতিটি দলকেই অন্তত ১৮ জন খেলোয়াড় নিয়ে স্কোয়াড বানাতে হবে। তাই নিলামে কাল হুমড়ি খেয়ে পড়তে হবে সবাইকে। বেশি দল, বেশি খেলোয়াড় আর প্রচুর অর্থের জোগান—সবই বলছে, নিলাম এবার বেশ রোমাঞ্চ নিয়ে হাজির হবে।

প্রথম ম্যাচেই আইপিএল জমিয়ে দিয়েছিলেন ম্যাককালাম
ছবি: উইজডেন

বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক বড় তারকাকেই ধরে রাখা হয়নি। অনেক দলেই অধিনায়ক হওয়ার মতো কেউ নেই। নিলামে দল গোছানোর সঙ্গে সঙ্গে এদিকটাও ভাবতে হবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে। ফলে কিছু নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে পেতে নিলামে টানাটানি হতেই পারে। আর সে ক্ষেত্রে তরতর করে বেড়ে যেতে পারে সে খেলোয়াড়ের দাম। গত মৌসুমে ক্রিস মরিস বা কাইল জেমিসনদের দাম যেমন চোখ কপালে তুলে দিয়েছিল। আগামীকাল এমন কিছু হবে, একটু ঝুঁকি নিয়ে তাই ভবিষ্যদ্বাণী করাই যায়।

আগামীকাল কী হবে, সেটা কালই দেখা যাবে। তার আগে চলুন দেখে নেওয়া যাক আইপিএলের আগের ১৪ নিলামে সবচেয়ে বেশি দাম পেয়েছিলেন কারা।

২০০৮ আইপিএল

প্রথম আইপিএলে নিজেদের বড় তারকাদের সম্মান দিতে চেয়েছিল ভারত। তাই শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাবিড়, বীরেন্দর শেবাগ ও যুবরাজ সিং—এই পাঁচজনকে আইকন হিসেবে বেছে নিয়েছিল পাঁচ দল। তাঁদের নিলামে না তুলে বলে দেওয়া হয়েছিল, নিলামে দলের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ের চেয়ে ১৫% বেশি পাবেন তাঁরা। এই নিয়মে এক শেবাগ ছাড়া বাকি চারজনই ১০ লাখ ইউএস ডলারের বেশি মূল্য পেয়েছিলেন। কিন্তু সেবার আইপিএলের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় তবু এঁরা হতে পারেননি।

নিজ অঞ্চলের আইকন না থাকায় নিজেদের জন্য এক আইকন সৃষ্টির পরিকল্পনা করে চেন্নাই সুপার কিংস। জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ককে পেতে ১৫ লাখ ডলার ব্যয় করেছে দলটি। আর সবচেয়ে দামি বিদেশি ক্রিকেটার হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। তাঁকে পেতে ডেকান চার্জার্স খরচ করেছিল ১৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

দুই সতীর্থ পেয়েছিলেন একই মূল্য
ফাইল ছবি: রয়টার্স

২০০৯ আইপিএল
খুব ছোট পরিসরে হয়েছিল দ্বিতীয় বছরের আইপিএল। মাত্র ১৭ জন খেলোয়াড় কেনা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ৬ লাখ ডলার পাওয়া মাশরাফি বিন মুর্তজাও ছিলেন। তবে চমক জাগিয়েছিলেন দুই ইংলিশ। অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ ও কেভিন পিটারসেন—দুজনকে পেতেই ১৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার ব্যয় করেছিল দুটি দল। ফ্লিনটফকে পেয়েছিল চেন্নাই। আর পিটারসেন গিয়েছিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে।

২০১০ আইপিএল
এই আইপিএলে সর্বোচ্চ দাম ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল। একজন খেলোয়াড়ের পেছনে ৭ লাখ ৫০ হাজার ডলারের বেশি ব্যয় করা যায়নি। তবু নাটক কম হয়নি। শেন বন্ড ও কাইরন পোলার্ড দুজনকে পেতেই টানাটানি পড়ে গিয়েছিল। পরে সিদ্ধান্ত নিতে টাইব্রেকারে যেতে হয়। শেন বন্ডের জন্য ১৩ লাখ ডলারের বিড করে তাঁকে পায় কলকাতা নাইট রাইডার্স। তবে কাইরন পোলার্ডের জন্য রীতিমতো চমকে দিয়েছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। তাঁর জন্য ২৭ লাখ ৫০ হাজার ডলারের প্রস্তাব দেয় মুম্বাই। এতে আইপিএলের লাভ হয়েছে। সাড়ে ৭ লাখ ডলারের বাকি অংশটুকু যে ফ্র্যাঞ্চাইজির তহবিল থেকে আইপিএলে গেছে!

ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম পেয়েছেন মোহাম্মদ কাইফ। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব তাঁকে কিনেছিল আড়াই লাখ ডলারে।

২০১১ আইপিএল
২০১১ আইপিএলে নতুন করে চিন্তা করা শুরু করে। সৌরভ গাঙ্গুলীকে ছেড়ে দেয় তারা। শুধু অধিনায়ক হিসেবে পাওয়ার জন্য গৌতম গম্ভীরের জন্য ২৪ লাখ ডলার খরচ করেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। ওদিকে ইউসুফ পাঠানের জন্যও নিলামে ২১ লাখ ডলারের ডাক তুলেছে তারা। বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম উঠেছিল মাহেলা জয়াবর্ধনের। তাঁকে পেতে কোচি টাস্কার্স ১৫ লাখ ডলার খরচ করেছে।

ম্যাক্সওয়েলকে ঘিরে প্রতিবারই আগ্রহ থাকে
ফাইল ছবি: আইপিএল

২০১২ আইপিএল
ধোনির মতোই আরেকটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করেছে চেন্নাই সুপার কিংস। এবার অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজাকে পেতে ২০ লাখ ডলার খরচ করেছে তারা। এ মৌসুমেও সবচেয়ে দামি বিদেশি ক্রিকেটার হয়েছেন মাহেলা জয়াবর্ধনে। এবার তাঁকে পেতে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস খরচ করেছে ১৪ লাখ ডলার।

২০১৩ আইপিএল
পরের বছরই মেগা নিলাম, মাত্র এক বছর ধরে রাখা যাবে খেলোয়াড়দের। এ বছর তাই খেলোয়াড় টানায় খুব বেশি উৎসাহী ছিল না দলগুলো। এর মাঝেও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ১০ লাখ ডলারে দলে নিয়েছিল মুম্বাই। ওদিকে অভিষেক নায়ারকে পেতে পুনে ওয়ারিয়র্স নিলামে ৬ লাখ ৭৫ হাজার ডলার ব্যয় করেছে।

২০১৪ আইপিএল
মেগা নিলামে চমক দেখিয়েছেন যুবরাজ সিং। নিলামে তাঁর জন্য ১৪ কোটি রুপি দাম হাঁকিয়েছে বেঙ্গালুরু। বিদেশি ক্রিকেটার খুঁজতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি দর চড়িয়েছে দিল্লি। কেভিন পিটারসেনকে পেতে ৯ কোটি রুপি দিয়েছে দলটি।

২০১৫ আইপিএল
আগের বছর দলকে প্রত্যাশিত ফল এনে দেননি যুবরাজ। তাই তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিল বেঙ্গালুরু। সেই যুবরাজকেই নিলামে ১৬ কোটি রুপি দিয়ে কিনেছে দিল্লি। আইপিএলের নিলামের ইতিহাসে সবচেয়ে দামের রেকর্ড ছিল এটি। বিদেশি খেলোয়াড়ের পেছনে ব্যয়েও এগিয়ে ছিল দিল্লি। শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে তারা নিয়েছিল ৭ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে।

তাঁরা দুজন
ছবি: প্রথম আলো

২০১৬ আইপিএল
নিলামে সবচেয়ে বেশি দাম পেয়েছিল শেন ওয়াটসন। বেঙ্গালুরু তাঁকে কিনেছিল ৯ কোটি ৫০ লাখে। দেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে চমকে দিয়েছিলেন পবন নেগি। মাত্র ৩০ লাখ রুপির ভিত্তিমূল্যের এই স্পিনারকে পেতে এমনই টানাটানি পড়েছিল যে দিল্লিকে ৮ কোটি ৫০ লাখ রুপি খরচ করতে হয়েছে। তবে সেবার সবচেয়ে বেশি দাম পেয়েছিলেন ধোনি। তাঁর চেন্নাই ম্যাচ ফিক্সিং কাণ্ডে নিষিদ্ধ হওয়ায় নতুন দল রাইজিং পুনে সুপার জায়ান্টসে গিয়েছিলেন। পুনে তাঁকে পেতে ১২ কোটি ৫০ লাখ রুপি খরচ করেছিল।

২০১৭ আইপিএল
রাইজিং পুনে এবারও দরাজ হাতে খরচ করেছে। বেন স্টোকসের জন্য ১৪ কোটি ৫০ লাখ রুপি ব্যয় করেছে। স্থানীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে কর্ণ শর্মার জন্য ৩ কোটি ২০ লাখ রুপি ব্যয় করেছে মুম্বাই।

২০১৮ আইপিএল
মেগা নিলামে লাভ হয়েছে বেন স্টোকসের। ইংলিশ অলরাউন্ডারকে নিতে রাজস্থান রয়্যালসের খরচ হয়েছিল ১২ কোটি ৫০ লাখ ইউরো। ওদিকে ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম উঠেছিল জয়দেব উনাদকাটের। ১১ কোটি ৫০ লাখ ইউরোতে তাঁকেও নিয়েছিল রাজস্থান।

আইপিএলের নিলামের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার মরিস
ছবি: টুইটার

২০১৯ আইপিএল

উনাদকাটকে পরের মৌসুমেই ছেড়ে দেয় রাজস্থান। কিন্তু তাতে এই বাঁহাতি পেসারের খুব একটা ক্ষতি হয়নি। ২০১৯ সালে নিলামে যে সবচেয়ে বেশি দাম এই পেসারই পেয়েছেন। তাঁকে আবারও কিনেছে রাজস্থান। এবার অবশ্য ৮ কোটি ৪০ লাখ রুপিতেই কিনতে পেরেছে তারা। ওদিকে কখনো জাতীয় দলে না খেলা বরুণ চক্রবর্তীকে একই দামে কিনেছে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে ইংলিশ স্যাম কারেনকে ৭ কোটি ২০ কোটি রুপিতে নিয়েছিল পাঞ্জাব।

২০২০ আইপিএল

টেস্টের সেরা বোলার প্যাট কামিন্সকে টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে দামি পেসার বানিয়েছে কলকাতা। ১৫ কোটি ৫০ লাখ ইউরোতে সবচেয়ে দামি বিদেশি ক্রিকেটারের রেকর্ড ভেঙেছে। ওদিকে ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম পেয়েছেন লেগ স্পিনার পীযূষ চাওলা। চেন্নাইয়ের তহবিল থেকে খসেছে ৬ কোটি ৭৫ লাখ রুপি।

২০২১ আইপিএল
ক্রিস মরিসকে পেতে পাগল হয়ে উঠেছিল তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। আর তাতেই ৭৫ লাখ রুপির ভিত্তিমূল্যের দক্ষিণ আফ্রিকানের দাম উঠেছিল ১৬ কোটি ২৫ লাখ! আইপিএলের নিলামের ইতিহাসের আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে তাতে। কাইল জেমিসন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও ঝাই রিচার্ডসনও ১৪ কোটি রুপি বা তার বেশি পেয়েছেন। মাত্র এক মৌসুমের জন্য বলে ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্য অতটা হাহাকার ওঠেনি। এর মাঝেও জাতীয় দলে না খেলা কৃষ্ণাপ্পা গৌতম ৯ কোটি ২৫ লাখ রুপি বাগিয়েছেন চেন্নাইয়ের কাছ থেকে।