আইপিএলের যে রেকর্ডগুলো ভাঙা প্রায় অসম্ভব

আইপিএলে অবিশ্বাস্য কিছু রেকর্ড আছে ক্রিস গেইলের।ফাইল ছবি: টুইটার

ভারতে করোনার ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই আগামী ৯ তারিখ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে আইপিএল। আটটা ফ্র্যাঞ্চাইজি নামবে শিরোপা পাওয়ার লড়াইয়ে।

আর এই শিরোপাকে পাখির চোখ করে রেকর্ড ভাঙা–গড়ার খেলার মেতে উঠবেন প্রায় প্রত্যেক খেলোয়াড়। গত ১৩টি মৌসুমেও যা দেখা গেছে। তা সত্ত্বেও আইপিএলে এমন কিছু রেকর্ড আছে, যা ভাঙা কার্যত অসম্ভব।

এমন পাঁচটি রেকর্ড নিয়েই আজকের এই আয়োজন। রেকর্ডগুলো কী কী, দেখে নিন একনজরে!

অভিষেকেই ৬ উইকেট

যশপ্রীত বুমরা, লাসিথ মালিঙ্গা, ট্রেন্ট বোল্ট, জেমস প্যাটিনসন, জেসন বেহরেনডর্ফ, মিচেল ম্যাকলেনাহান, নাথান কোল্টার-নাইলদের কল্যাণে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের পেস বিভাগে এককালে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আলজারি জোসেফও খেলতেন, তা ভুলেই গেছেন হয়তো অনেকে।

কিন্তু টানা দুবারের আইপিএলজয়ী মুম্বাইয়ের হয়ে জোসেফের এমন এক রেকর্ড আছে, যা বুমরাদের নেই। শুধু বুমরা কেন, আইপিএলের ইতিহাসের কোনো বোলারেরই নেই। আদৌ কারও হবে কি না, তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এক ম্যাচে ৬ উইকেট পাওয়ার কীর্তি তো আর রোজ রোজ হয় না! তা–ও আবার নিজের অভিষেকে!

এক সময় মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে খেলতে আলজারি জোসেফ।
ছবি: টুইটার

হ্যাঁ, ঠিক সেটাই করেছিলেন জোসেফ। আইপিএলে নিজের অভিষেকেই নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে অত বেশি রান স্কোরবোর্ডে জমা করতে পারেননি রোহিত শর্মা-কুইন্টন ডি ককরা। কাইরন পোলার্ডের শেষ দিকের ছোটখাটো এক ঝড়ের ওপর ভর করে ৭ উইকেটে ১৩৬ রান তুলেছিল মুম্বাই।

কিন্তু সেই রানকেই হায়দরাবাদের জন্য পাহাড়সম বানিয়ে দিয়েছিলেন জোসেফ। চতুর্থ ওভারে বল করতে এসে নিজের গতির জাদু দেখানো শুরু করেন এই ক্যারিবীয়। একে একে জোসেফের কাছে পরাস্ত হয়ে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন ডেভিড ওয়ার্নার, বিজয় শঙ্কর, দীপক হুদা, রশিদ খান, ভুবনেশ্বর কুমার ও সিদ্ধার্থ কল।

৯৬ রানেই গুটিয়ে যায় হায়দরাবাদ। সে ম্যাচে হায়দরাবাদের হয়ে খেলতে নামেননি বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। তবে সাকিবকে ছাড়া নেমে সে ম্যাচে হায়দরাবাদের রশিদ বা মোহাম্মদ নবীরাও তেমন কিছুই করতে পারেননি।

অভিষেকে ৬ উইকেট পাওয়ার কীর্তি কেউ খুব তাড়াতাড়ি করে দেখাতে পারবেন বলে মনে হয় না।

প্রথম পাওয়ার প্লের তাণ্ডব
ইনিংসের শুরুটা যেন ঝোড়ো হয়, সে কারণে ক্যারিবীয় স্পিনিং অলরাউন্ডার সুনীল নারাইনকে লোয়ার অর্ডার থেকে টেনে ওপেন করানোর ফাটকাটা কলকাতা নাইট রাইডার্স বহুদিন ধরেই খেলছে।

সে কৌশল সফলও হয়েছে যেমন, মুখ থুবড়েও পড়েছে অনেকবার। তবে সফল যখনই হয়েছে, প্রতিপক্ষের বোলাররা কচুকাটা হয়েছেন। ২০১৭ সালে বিরাট কোহলিদের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ম্যাচটার কথাই ধরুন, প্রথম পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে অস্ট্রেলিয়ান লিন আর ক্যারিবীয় নারাইন মিলে তুলেছিলেন ১০৫ রান।

১৭ বলে ৫৪ রান করেছিলেন নারাইন, ওদিকে লিন ২২ বলে ৫০। দুজন মিলে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন আটটা, চার ১১টা। শেষমেশ কলকাতাই ম্যাচটা জেতে ৬ উইকেটে। পাওয়ার প্লেতে ১০৬ রান আদৌ আর কেউ কখনো তুলতে পারবে কি না, প্রশ্ন তোলাই যায়!

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু অধিনায়ক বিরাট কোহলি।
ছবি: টুইটার

বিরাট কোহলির রানবন্যা
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু কখনো আইপিএলের শিরোপা জিততে পারেনি ঠিক, কিন্তু দলটার অধিনায়ক বিরাট কোহলি যে ট্রফি জেতার জন্য নিজের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেননি, সেটা হয়তো তাঁর পাঁড় দুশমনও কখনো বলবেন না।

এমনই এক মৌসুম ছিল ২০১৬ সালে। টি-টোয়েন্টির এই টুর্নামেন্টে কোহলি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন মোট চারটা, রান তুলেছিলেন ৯৭৩। স্বাভাবিকভাবেই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকও কোহলিই হয়েছিলেন। তাতেও লাভ হয়নি। ফাইনালে মোস্তাফিজুর রহমানের সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কাছে হেরে বসে বেঙ্গালুরু।

সে ম্যাচেও ৫৪ করেছিলেন কোহলি। কিন্তু আট রানে ম্যাচ জিতে যায় হায়দরাবাদ। এক আইপিএল মৌসুমে বিরাট কোহলি ছাড়া ন্যূনতম ৮০০ রান করার কীর্তি আর কারও নেই। আদৌ হবে কি না, সন্দেহ।

ক্রিস গেইলের মহাকাব্য
কলকাতা নাইট রাইডার্স, কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে আইপিএল খেললেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইলের আসল তাণ্ডব দেখা গেছে বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর জার্সিতেই।

২০১৩ সালে দেখা গিয়েছিল আরও ভালোভাবে। পুনে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়ার বোলারদের সামনে সেদিন সাক্ষাৎ যম হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন ‘ইউনিভার্স বস’। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেটে ২৬৩ রান তুলেছিল বেঙ্গালুরু। গেইল একাই করেছিলেন ১৭৫। তা–ও আবার কি, কারোর সাধ্যই হয়নি তাঁকে আউট করার।

২০ ওভারের ম্যাচে ১১ ওভার একাই খেলেছিলেন। ১৩ চার আর ১৭ ছক্কা মেরেছিলেন, অর্থাৎ পাঁচ ওভার শুধু চার আর ছক্কা মেরেই কাটিয়েছিলেন গেইল। এক ভুবনেশ্বর কুমার আর লুক রাইট ছাড়া গেইলের সংহারী রূপ সবাই দেখেছিলেন। পরে এক ওভার হাত ঘুরিয়ে ২ উইকেট নিয়ে আক্ষরিক অর্থেই দিনটা নিজের করে নিয়েছিলেন গেইল।
এক ইনিংসে ১৭৫ বা তাঁর চেয়েও বেশি রান আর কি কখনো দেখবে আইপিএল? প্রশ্নটা সময়ের হাতে তোলা থাক!

আইপিএলে এক ওভারে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ক্রিস গেইলের।
ছবি: টুইটার

এক ওভারে ৩৭ রান!

এই রেকর্ডটাও গেইলের। ২০১১ সালে কোচি টাসকার্স কেরালার বিপক্ষে এক ওভারে ৩৭ রান নিয়েছিলেন গেইল!

কী? আশ্চর্য লাগছে তো? লাগাই স্বাভাবিক। এক ওভারের ছয় ওভারে ছয়টা ছক্কা মারলেও তো ৩৬–এর বেশি রান জোগাড় করা যায় না যেখানে, সেখানে গেইল করেছিলেন আরও ১ রান বেশি। আর গেইল সাইক্লোনের ভুক্তভোগী হতে হয়েছিল কেরালার বাঁহাতি মিডিয়াম পেসার প্রশান্ত পরমেশ্বরমকে। বেচারা একটা বল ‘নো’ করেছিলেন, সে এক বলেই ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন গেইল। অর্থাৎ ৬টি নয়, ওই ওভারে ৭টি বল খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন গেইল। তিনটি চারের পাশাপাশি মেরেছিলেন চারটি ছক্কা।

এই রেকর্ড আর কেউ কি ভাঙতে পারবেন, মনে হয় না!

সব্যসাচী যুবরাজ

২০০৯ সালে প্রীতি জিনতার কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের আইকন খেলোয়াড় হিসেবে খেলতেন যুবরাজ। অলরাউন্ডার হিসেবে তিনি যে কত উঁচু মানের, সেটা সে মৌসুমে বেশ ভালোভাবেই জানান দিয়েছিলেন এই বাঁহাতি তারকা। রান করেছিলেন ৩৪০। তবে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য ঘটনা হলো, বল হাতে হ্যাটট্রিক করেছিলেন দুই-দুইবার!

বোলার যুবরাজের আগুনে পুড়েছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও ডেকান চার্জার্স। বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ইনিংসের ১১তম ওভারের শেষ দুই বলে রবিন উথাপ্পা ও জ্যাক ক্যালিসকে আউট করার পর নিজের পরের ওভারের প্রথম বলে আউট করেন মার্ক বাউচারকে। ম্যাচে ৩ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ওপেনার হিসেবে ব্যাট করতে নেমে ৫০ রান তোলেন যুবরাজ।

কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের আইকন খেলোয়াড় হিসেবে খেলতেন যুবরাজ।
ছবি: টুইটার

ডেকান চার্জার্সের বিপক্ষেও একই কাহিনি। হ্যাটট্রিকটা এক ওভারে না এসে এবারও দুই ওভারে আসে যুবরাজের। শিকার হন হার্শেল গিবস, বেনুগোপাল রাও ও অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। কোনো ভালো বোলার হয়তো এক মৌসুমে দুটি হ্যাটট্রিক নিতেও পারবে। কিন্তু ব্যাট হাতে ৩৪০ রান? একই সঙ্গে এই দুই কীর্তি গড়া অসম্ভবই বটে।