আইপিএলের সূচিতে কোহলির লাভ, ধোনির ক্ষতি?

মহেন্দ্র সিং ধোনি ও বিরাট কোহলিফাইল ছবি: এএফপি

অনেক জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে আইপিএলের দিন-তারিখসহ সবকিছু জানা গেল। আগামী ৯ এপ্রিল শুরু হবে এবারের আইপিএল। কোন কোন ভেন্যুতে খেলা হবে, কোন ফরম্যাটে খেলা হবে, সবই গতকাল জানিয়েছে আইপিএলের আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

৯ এপ্রিল চেন্নাইয়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে টুর্নামেন্ট। লিগ পর্বে ৫৬টি ম্যাচ হবে ৬টি ভেন্যুতে। এর মধ্যে চেন্নাই, মুম্বাই, কলকাতা ও বেঙ্গালুরুতে হবে ১০টি করে ম্যাচ। আর আহমেদাবাদ ও দিল্লিতে হবে ৮টি করে।

স্বাভাবিকভাবেই সূচি ঠিক হওয়ার পর থেকে এতে কার লাভ হলো আর কার ক্ষতি, এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। তাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণে এখন পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে, ভারতের সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির দল চেন্নাই সুপার কিংসই এবারের সূচিতে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়তে পারে।

আর সবচেয়ে বেশি সুবিধা হতে পারে ভারতের বর্তমান অধিনায়ক বিরাট কোহলির দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর।

আগের সব আসরের চেয়ে এবারের আইপিএল একটা জায়গায় পুরোপুরি ভিন্ন। যে মাঠেই খেলা হোক, এবার সব ম্যাচ ‘নিরপেক্ষ ভেন্যু’তে হচ্ছে বলে ধরে নেওয়া হবে। সে কারণে এবার হোম ও অ্যাওয়ে ম্যাচের হিসাব থাকবে না।

করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতেই এত নিয়মের অদল-বদল। লিগ কমিটি জানিয়েছে, সূচি এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে দলগুলোকে গ্রুপ পর্বে সর্বোচ্চ তিনবার ভেন্যু বদলাতে হয়। এতে করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি কিছুটা কমবে।

কিন্তু হোম আর অ্যাওয়ে পদ্ধতির সুবিধা, নিজের মাঠে খেলতে পারা না-পারার হিসাবগুলো তো ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলবেই। কারণ ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো খেলোয়াড় কেনার সময় নিজেদের মাঠের আকার, আয়তন, সেখানে কোন ধরনের খেলোয়াড় ভালো করতে পারেন...সেসব হিসাব করেই কেনে।

সে কারণে এবার দলগুলো নিজেদের মাঠে নিজেদের সমর্থকদের সামনে খেলার সুবিধার পাশাপাশি কৌশলগত কিছু সুবিধাও হারাবে। নিজেদের মাঠে একের পর এক ম্যাচ জিতে পয়েন্ট তালিকার সেরা চারে থাকার পরিকল্পনায়ও এবার বদল আসতে পারে। এর আগে প্রতিবারই নিজেদের মাঠে ভালো করা দলগুলোকে টুর্নামেন্টের নকআউট পর্বে যেতে দেখা গেছে। এবার তাতে বদল আসছে নিশ্চিত।

ঘর-পোড়া চেন্নাই?

নিজেদের মাঠের কন্ডিশন কীভাবে কাজে লাগাতে হয়, সেটি সম্ভবত চেন্নাইয়ের মতো করে আর কেউ দেখাতে পারেনি আইপিএলে। চিপক স্টেডিয়ামটাকে নিজেদের দুর্গ বানিয়ে ফেলেছে ধোনির দল। নিজেদের মাঠে খুব বেশি হার দেখেনি বলেই আইপিএলে একের পর এক মৌসুমে প্লে-অফ খেলেছে চেন্নাই।

গত মৌসুমে প্রথমবার প্লে-অফ খেলতে পারেনি ধোনির দল। গত মৌসুমে টুর্নামেন্টটা ভারতে না হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে হওয়ার সঙ্গে ধোনিদের প্লে-অফে খেলতে না পারা শুধুই কাকতাল হয়তো নয়।

চেন্নাই এবার মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে খেলবে ৫টি ম্যাচ, দিল্লির ফিরোজ শাহ-তে ৪টি, বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামীতে ৩টি আর কলকাতার ইডেন গার্ডেনে ২টি। অর্থাৎ, লিগ পর্বের ১৪ ম্যাচের ১০টিই খেলবে বাইরের মাঠে। এই মাঠগুলোর সবই পাটা পিচ আর ছোট সীমানার জন্য পরিচিত।

স্পিনারদের জন্য অতটা বন্ধুত্বের হাত বাড়ায় না স্টেডিয়ামগুলো। আর চিপক স্টেডিয়ামের স্পিন-সহায়ক উইকেট মাথায় রেখে স্পিন-নির্ভর আক্রমণ গড়া চেন্নাই সুপার কিংসের তাতে ঝামেলায় পড়তে হতে পারে।

স্পিন-সহায়ক নয়, এমন পিচে ইমরান তাহির, রবীন্দ্র জাদেজা, মঈন আলী, কর্ন শর্মা, আর সাই কিশোরের মতো চেন্নাইয়ের স্পিনারদের পক্ষে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের রান আটকানো কঠিন চ্যালেঞ্জই হবে। আর অন্যদিকে চেন্নাইয়ের যে ফাস্ট বোলাররা আছেন, তাঁদের কারোরই গতি একেবারে আগুনে-গোলা নয়।

দীপক চাহার, লুঙ্গি এনগিডি, শার্দুল ঠাকুর, জশ হ্যাজলউড, স্যাম কারেন, ডোয়াইন ব্রাভো...লাইন-লেংথ প্রায় নিখুঁত রাখতে না পারলে, বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং করতে না পারলে চেন্নাইয়ের এই পেসারদের জন্য কাজটা কঠিনই হয়ে যাবে।

শুরুতেই ভাগ্যবান বেঙ্গালুরু?

প্রথম ম্যাচে জিততে যাচ্ছে কোহলির বেঙ্গালুরু—এমনটা চাইলে মনে মনে ধরে নিতে পারেন বেঙ্গালুরু সমর্থকেরা। অতীত রেকর্ড তো তা-ই বলে! টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই রোহিত শর্মার মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে খেলবে বেঙ্গালুরু।

আর রেকর্ড বলছে, ২০১২ আইপিএলের পর আট বছরে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ জিততে পারেনি মুম্বাই! রেকর্ড পাঁচবার শিরোপা জেতা মুম্বাইয়ের বিপক্ষে জয় পেলে সেটি শুরুতেই বেশ এগিয়ে দেবে কোহলিদের।

সূচিতেও এবার কোহলিদের জন্য বেশ সুবিধাই আছে বলে মনে হচ্ছে। গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে কোহলিরা প্লে-অফে খেলেছেন, যা এর আগের চার বছরে করতে পারেননি। গতবার যে পেরেছেন, এর একটা বড় কারণ ছিল, গত বার নিজেদের স্টেডিয়ামে, অর্থাৎ চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে খেলতে হয়নি কোহলিদের।

আকারে ছোট বেঙ্গালুরুর এই স্টেডিয়ামের তুলনায় বেশ বড় ছিল আমিরাতের স্টেডিয়ামগুলো। যে কারণে বেঙ্গালুরুর স্পিনারদের গতবার অত বেশি মার খেতে হয়নি। যেটা এর আগে প্রায় প্রতি আসরেই খেতে হতো! অন্য মৌসুমগুলোতে ‘হোমে’ যে সাত ম্যাচ খেলতে হতো, এবার সেগুলোর সব চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে খেলতে না হওয়া কোহলিদের জন্য সুবিধারই বটে।

হ্যাঁ, প্রশ্ন উঠতে পারে, ভারতের অন্য স্টেডিয়ামগুলোই-বা কী এমন হাতি-ঘোড়া যে সেখানে কোহলির দলের স্পিনাররা একেবারে কামান দাগাবেন? তা না পারলেও কোহলির হাতে বিকল্প হিসেবে গতির ঝড় তোলার জন্য কাইল জেমিসন, মোহাম্মদ সিরাজ, নবদীপ সাইনি, কেইন রিচার্ডসনদের পেসাররা আছেন।