আগুন লেগে যাচ্ছে ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজে

অস্ট্রেলিয়ার অনুশীলনে কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার ও অধিনায়ক টিম পেইনছবি: টুইটার

রাত পোহালেই শুরু হবে সিডনি টেস্ট। কথা যা হওয়ার সিরিজের এই তৃতীয় টেস্ট নিয়ে হবে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক টিম পেইনকে আজ কথা বলতে হলো ব্রিসবেন টেস্ট নিয়ে। চতুর্থ এই টেস্ট মাঠে গড়ানোর আগেই জমিয়ে তুলেছে সিরিজ।

চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতায় ভারত-অস্ট্রেলিয়া। প্রথম দুই টেস্টে দুই দলের খেলোয়াড়েরা বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থানে থেকেই খেলেছেন। ভারত কিংবা অস্ট্রেলিয়া শিবির থেকে কেউ প্রতিপক্ষকে খোঁচা মেরে টুঁ শব্দটি করেনি।

ঝামেলার শুরু ব্রিসবেনে পৌঁছে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে, ভারতীয় দল এ নিয়ে আপত্তি তোলার পর। ভেন্যু পাল্টানোর দাবিও উঠেছে।

না, বোর্ডে (বিসিসিআই) আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তি জানায় ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। যদিও সমস্যাটা প্রায় সমাধান হয়ে আসার পথে।

কোয়ারেন্টিনের আগের নিয়ম অনুযায়ী অজিঙ্কা রাহানেদের মাঠ থেকে ফেরার পর শুধু নিজের কামরাতেই থাকতে হতো।

কিন্তু নিয়মটি পাল্টে খেলোয়াড়দের হোটেলের মধ্যে থাকার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। এদিকে পেইনের এসব নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই, কিংবা ভারতীয় দলের আচরণে তিনি ‘হতাশ’ নন। সিরিজের শেষ টেস্টটি মাঠে গড়ায় কি না, তা নিয়ে ‘অনিশ্চয়তা’য় ভুগছেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক।

অনিশ্চয়তা? না, দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো কথা হয়নি। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে গুঞ্জন আছে, কোয়ারেন্টিন নিয়ম নিয়ে কঠোর হলে ভারত ব্রিসবেনে না–ও যেতে পারে।

বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার নাথান লায়ন বলেছিলেন কোয়ারেন্টিন নিয়ে এত অভিযোগ না করে ‘মানিয়ে নিতে’ এবং অভিযোগগুলো ‘গিলে নিতে’। ভারতীয় দলের শিবির থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জবাব দেন, খেলোয়াড়েরা ‘চিড়িয়াখানার জন্তু-জানোয়ার নয়।’

এই যখন পরিস্থিতি, তখন ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের মূল রসায়নটা ফেরানোর ঘোষণা দিলেন পেইন। যুদ্ধ!

হ্যাঁ, একরকম যুদ্ধই। আগের দুই টেস্টে যা দেখা যায়নি, শরীরী ও মুখের ভাষাতেও খেলাটা যে একরকম ‘যুদ্ধ’ই, তা বুঝিয়ে দেওয়া। কোয়ারেন্টিন নিয়ে তীব্র হওয়া বিতর্ক—এই যে এই আগুন উসকে দিয়েছে, সেটিও বুঝিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। এর সঙ্গে একটি খোঁচা, অস্ট্রেলিয়া প্রয়োজনে ‘মুম্বাইয়ে গিয়েও চতুর্থ টেস্ট খেলতে রাজি।’

অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে পেইনের ভাষ্য, ‘এটা (পরিস্থিতি) উত্তপ্ত হচ্ছে। কিছু কিছু বিষয় ঘটছে, একটু বাগ্‌যুদ্ধও লেগে গেছে। ক্রিকেটের বাইরেও এই টেস্টটা হবে ভীষণ আকর্ষণীয়।’

ব্রিসবেন টেস্ট না হওয়ার অনিশ্চয়তাও লুকিয়ে রাখতে পারেননি পেইন, ‘ভেতরে ভেতরে সবাই একটু চিন্তা ও উত্তেজনার মধ্যে আছে। তাদের (ভারত) শিবির থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র বলেছে, চতুর্থ টেস্ট তারা কোথায় খেলতে চায়, কোথায় চায় না। আমি শুধু বলব, বিষয়টি একটু হলেও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছে।’

এই অনিশ্চয়তা কেন, সেটাও বুঝিয়ে বলেছেন পেইন, ‘ক্রিকেট বিশ্বে ভীষণ শক্তিশালী ভারতের মতো কোনো দলের কাছ থেকে যখন এমন কথা শুনবেন, তখন এমনটাই হবে (চতুর্থ টেস্ট ব্রিসবেনে হবে না), তা মনে হওয়াই স্বাভাবিক।’

১৯৮৮ সাল থেকে ব্রিসবেনের গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়া টেস্ট হারেনি। ভারতের শেষ সফরেও গ্যাবায় কোনো ম্যাচ হয়নি। আর এই সিরিজের যে অবস্থা, তাতে নিষ্পত্তিটা শেষ ম্যাচেও হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে চতুর্থ টেস্টের ভেন্যু পাল্টানোর প্রস্তাব অস্ট্রেলিয়া দলের ভালো চোখে না দেখাই স্বাভাবিক।

কিন্তু পেইন সোজাসাপ্টাই বলেছেন, ভেন্যু নিয়ে তাঁর কোনো ভাবনা নেই। টেস্ট মাঠে গড়ালেই সব ঠিক। এ নিয়ে খোঁচাও মারেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক, ‘এখন পর্যন্ত যতটুকু জানি, এটা গ্যাবাতেই হবে। কিন্তু সেদিনের টিম মিটিংয়ের মতোই বলছি, যদি আমাদের হুট করে বলেন, টেস্টটা কাল মুম্বাইয়ে শুরু হবে, আমরা উড়োজাহাজে চড়ে বসব এবং খেলব।’