আগের চেয়ে ভালো খেলবে সাকিব

সাকিব বিকেএসপিতে অনুশীলন শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা সফর সামনে রেখে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর সে শ্রীলঙ্কার সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরবে, এ রকম একটা সম্ভাবনা ছিল। শেষ পর্যন্ত সিরিজটা না হওয়ায় সাকিব অনুশীলন বন্ধ করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়। তবে এর আগ পর্যন্ত ফিটনেস এবং ব্যাটিং-বোলিং নিয়ে ও যে কাজ করে গেছে, তা এককথায় ছিল অসাধারণ। আমার বিশ্বাস, এই অনুশীলনের পর সব দিক থেকেই আগের চেয়ে আরও ভালো হবে সাকিবের খেলা।

গুরু মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সঙ্গে সাকিব আল হাসান
ফাইল ছবি

এক বছর অনেক লম্বা বিরতি। এই বিরতির প্রভাব সাকিবের ফিটনেসেই পড়েছে বেশি। ওজন কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল। আমরা তাই পরিকল্পনা করি, আগে ফিটনেস নিয়ে কাজ করব। ফিটনেসটা পুরোনো অবস্থায় ফিরিয়ে এনে তারপর দক্ষতা বাড়ানোর অনুশীলনে যাব। ফিটনেসের কাজে বিকেএসপির অ্যাথলেটিকস কোচ কাফি ও বক্সিং কোচ ভাষণ বিশেষভাবে সাহায্য করেছে।

ফিটনেসের কাজে বক্সিং অনুশীলন যোগ করাটাকে অনেকে অভিনব ভাবতে পারেন। সাকিবকে বক্সিং অনুশীলন করানোর কারণ, এটা শক্তি ও ক্ষিপ্রতা বাড়ায়, পেশি গঠনে সাহায্য করে। এ ছাড়া ব্যাটিংয়ের ফুটওয়ার্ক ভালো করতেও কাজে লাগে। কারণ, ক্রিকেটের ব্যাটিং-বোলিংয়ের ফুটওয়ার্কের সঙ্গে বক্সিংয়ের ফুটওয়ার্কের অনেক মিল আছে। ফাহিম স্যার (বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন), সাকিব আর আমি আলোচনা করেই অনুশীলনে এটা যোগ করেছি। বক্সিং অনুশীলন সামনের দিনগুলোতে বিশেষভাবে সাহায্য করবে সাকিবকে।

সাকিব আরও শক্তিশালী হয়েই ফিরবেন, মনে করেন তাঁর কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
ফাইল ছবি

ফিটনেসের পর আমরা ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং অনুশীলনে যাই। অনেকে ভাবতে পারেন, সাকিব এত কিছু করল, কিন্তু মাঠে ফেরার আগে কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ তো খেলল না! তবে আমার মনে হয় ম্যাচ না খেলার ঘাটতি সাকিবের থাকবে না। আমরা মাঝ উইকেটে যে মাত্রায় অনুশীলন করেছি, সেটাই সে ঘাটতি পুষিয়ে দেবে। আর ম্যাচ খেলার যে অভিজ্ঞতা, সেটা একজন ক্রিকেটার কখনোই ভোলে না। ব্যাটিং, বোলিংয়ের ছন্দ ফিরতে হয়তো দুই-তিন ম্যাচ সময় লাগতে পারে, কিন্তু খেলাটার মধ্যে ঢুকে যেতে সাকিবের মতো খেলোয়াড়ের একমুহূর্ত সময় লাগার কথা নয়। এটা বলছি; কারণ, আমরা অনুশীলনেও দেখেছি, যে কাজটা তিন সপ্তাহ পর করব বলে পরিকল্পনা করেছিলাম, সাকিব দ্রুত সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় সেটা আমরা এক সপ্তাহের মধ্যেই করতে পেরেছি।

বিকেএসপির ৫ সপ্তাহের অনুশীলনে প্রতিদিন ৩-৪ সেশন কাজ হয়েছে। সাকিব ছোটবেলায় হাই পারফরম্যান্স ইউনিটে যে রকম কঠোর অনুশীলন করেছে, সেটা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। দৌড়, সাঁতার, ওজন নেওয়া, বক্সিং-সবকিছুই ছিল সূচিতে। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে একজন ক্রিকেটার নিজেকে ফিরে পেতে কতটা পরিশ্রম করতে পারে, সেটা সাকিবের কাজ না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। বিকেএসপির অনুশীলনে অবিশ্বাস্য পরিশ্রম করেছে সে।

সাকিবের ভরসার জায়গা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
ফাইল ছবি

ওর ব্যাটিং, বোলিং অনুশীলন দেখে মনে হয়েছে, এক বছর খেলার বাইরে থাকলেও এই দুই জায়গায় দক্ষতা একটুও কমেনি। কিছু কিছু জায়গায় বরং আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। ফিটনেসটা যদি ঠিক রাখতে পারে, আমার বিশ্বাস, এবার আমরা আগের চেয়ে আরও পরিণত সাকিবকে দেখব। আর ওর জন্য একটা ভালো দিক, মাঠে ফিরেই সে ঘরোয়া ক্রিকেটে কিছু ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। ছোটখাটো সমস্যাগুলো এখানে কাটিয়ে উঠতে পারবে। তবে অনুশীলনে যে রকম দেখেছি, আমার তো মনে হয়, সাকিব এ মুহূর্তেই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারে।

সাকিবের একটা ভালো দিক, প্রতি মুহূর্তেই সে আগের চেয়ে ভালো করতে চায়। এখন যেমন আমার মনে হচ্ছে, মাঠে ফিরে সাকিব হয়তো গত বিশ্বকাপের চেয়েও ভালো অবস্থায় যেতে চাইবে। ২০১৯ বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সটাকে ও নিজের জন্য মানদণ্ড হিসেবে ধরে নিয়েছে। এর নিচে কখনো যাওয়া যাবে না-এটাই যেন সাকিবের প্রতিজ্ঞা।