আফিফ কেন ফিফটি করে উদ্যাপন করেননি

ম্যাচের একপর্যায়ে মোসাদ্দেকের সঙ্গে সলাপরামর্শ আফিফের। ফিফটির পর উদযাপন নয়, সতীর্থকে শুধু জড়িয়ে ধরেছিলেন আফিফ। ছবি: শামসুল হক
ম্যাচের একপর্যায়ে মোসাদ্দেকের সঙ্গে সলাপরামর্শ আফিফের। ফিফটির পর উদযাপন নয়, সতীর্থকে শুধু জড়িয়ে ধরেছিলেন আফিফ। ছবি: শামসুল হক
>

দলের চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেললেন আফিফ। পেলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম ফিফটি। অথচ ফিফটির পর উদ্‌যাপনই করলেন না ১৯ বছর বয়সী তরুণ এ ব্যাটসম্যান

বিনা উইকেটে ২৬ থেকে চোখের পলকে সেটি হয়ে গেল ৪ উইকেটে ২৯ রান। একটা সময় বাংলাদেশের স্কোর হয়ে গেল ৬ উইকেটে ৬০। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও হারের শঙ্কায় সাকিবরা। দলের এ ঘোরতর বিপর্যয়ে ব্যাটিংয়ে নামলেন আফিফ হোসেন

এ বিপর্যয়ে মোসাদ্দেক হোসেনকে নিয়ে শুরু আফিফের লড়াই। ভয়ডরহীন, ইতিবাচক ক্রিকেটে কী দুর্দান্ত ইনিংসই না খেললেন। চরম বিপর্যয়ে পরাজয়ের চোখরাঙানি উপেক্ষা মনোবল শক্ত রেখে এমন ইনিংস যাঁরা খেলতে পারেন, তাঁরাই তো স্মৃতির পাতায় শক্ত জায়গা করে নেন। কদিন আগে অ্যাশেজেতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেডিংলি টেস্টে বেন স্টোকস যেমনটা খেলেছিলেন। অবশ্য ইনিংসের মহিমা কিংবা সংস্করণ, সিরিজ, প্রতিপক্ষ বিবেচনায় স্টোকসের অপরাজিত ১৩৫ রানের ইনিংসের সঙ্গে আফিফের ২৬ বলে ৫২ রানের ইনিংসের তুলনা করা ঠিক নয়। তবে দুজনের একটা জায়গায় বেশ মিল থাকল—বিপর্যয়ে সাহসী মনোভাবে বুক চিতিয়ে লড়াই। আরও একটি মিল, স্টোকস সেঞ্চুরির কর উদ্‌যাপন করেননি। উদ্‌যাপন করেছেন ম্যাচ জেতানোর পর।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ফিফটি, সেটিও এল চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে। তবুও ফিফটি করার পর কোনো উদ্‌যাপন করেননি আফিফ। ফিফটি করার পর মোসাদ্দেক হোসেন তাঁকে যখন জড়িয়ে ধরলেন, তিনি ডাগ আউটে সতীর্থদের ইঙ্গিত করলেন পানির বোতল আনার। ফিফটির পর কেন উদ্‌যাপন করেননি, সংবাদ সম্মেলনে আফিফ সেটির ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে, ‘যখন ফিফটি হয়েছে খেয়াল করিনি। তখন চিন্তায় ছিল ম্যাচ যেন শেষ করতে পারি। ভাবনা ছিল ম্যাচ শেষে একটা উদ্‌যাপন করব। ম্যাচটা শেষ করতে পারিনি, তার আগে আউট হয়ে গেছি।’ আউট হয়ে অবশ্য তাঁর দুঃখ নেই। বরং বহুদিনের একটা ইচ্ছে পূরণ হয়েছে আফিফের, ‘সবারই ইচ্ছে থাকে এমন ইনিংস খেলে দেশকে জেতানোর। আজ (কাল) আমার সেই ইচ্ছাটা পূরণ হয়েছে।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে তাঁর গত বছরই। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটা টি-টোয়েন্টি খেলেই আবার বাদ। তার আগে বিপিএলে আলো ছড়িয়েছেন। দুর্দান্ত খেলেছেন গত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। দেশের ক্রিকেটে তিনি পরিচিত মুখ। সাবেক এ বিকেএসপির ছাত্র টপ অর্ডারে দ্যুতি ছড়িয়েছেন বিসিবির ইমার্জিং দলের হয়েও। কদিন আগে সুযোগ পেয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) খেলার। কিন্তু অনাপত্তিপত্র (এনওসি) পাননি বিসিবির। আফিফ সাধারণত ব্যাটিং করেন টপ অর্ডারে। কাল নেমেছেন আটে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে জিজ্ঞেস করেছেন, আফিফ কেন আরও আগে নামেনি। আফিফের অবশ্য এতে কোনো আপত্তি নেই। টিম ম্যানেজমেন্ট যেখানেই খেলাবে সেখানেই তিনি খেলতে রাজি, ‘দল যেখানেই আমাকে ভালো মনে করবে সেখানেই ভালো করার চেষ্টা করব।’

বিপর্যয়ে মোসাদ্দেককে নিয়ে যখন লড়ছিলেন, গ্যালারি থেকে ভেসে এসেছে ‘আফিফ-আফিফ’ স্লোগান। দর্শকেরা যেভাবে তাঁকে উৎসাহিত করেছে, খুলনায় বেড়ে ওঠা ১৯ বছর বয়সী এ তরুণ ব্যাটসম্যান তাতে ভীষণ অভিভূত, ‘এ অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না। অনেক দিন পর জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি এবং এমন একটা ভালো ইনিংস খেলার সুযোগ পেয়েছি। দর্শকেরা অনেক খুশি, আমার কাছে এটা অনেক আনন্দের ছিল।’

মাত্রই দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা আফিফ উইকেটে যতটা প্রাণখুলে ব্যাটিং করেছেন, সংবাদ সম্মেলনে যেন সেটির বিপরীত, মনখুলে কথা বলছেন না। মুখে হাসিও নেই। এক সাংবাদিক রসিকতার সুরেই প্রশ্ন করলেন, তবে কি চওড়া হাসির অপেক্ষায়? গাম্ভীর্য ভেঙে আফিফ এবার কলস্বরে হেসে ওঠেন, ‘সম্ভবত!’