আফিফ-নাঈমদের ম্যাচ জেতাতে বললেন মাহমুদউল্লাহ

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি–টোয়েন্টিতে ৩৩ বলে ৪৫ রান করেছেন আফিফ হোসেন।
ছবি: এএফপি

ওয়ানডের তুলনায় ফিল্ডিং প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ভালোই ছিল। কিন্তু যতটা ভালো হওয়া দরকার, ততটা নয়। এর খেসারত দিতে হয়েছে হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে। আগে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ড করে ২১০ রান। আরেকটু চেষ্টা করলে, বিশেষ করে ফিল্ডিংটা আরেকটু ভালো করতে পারলে নিউজিল্যান্ডকে ১৮০ থেকে ১৯০ রানের মধ্যে আটকে রাখা যেত।

তবে ছোট বাউন্ডারির সেডন পার্কে এই রান তাড়া করাও খুব একটা কঠিন হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বরাবরের মতো হতাশ করেছেন বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। জোড়ায় জোড়ায় উইকেট হারিয়ে জয়টাকে দূরের বাতিঘর বানিয়ে ফেলেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত ১৪৪ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে হারটাও তাই ৬৬ রানের বড় ব্যবধানে।

৩৩ বলে ৪৫ রান করার পথে দারুণ কিছু শট খেলেছেন আফিফ হোসেন।
ছবি: এএফপি

তামিম ইকবালের ছুটি ও মুশফিকুর রহিমের চোটের কারণে বাংলাদেশকে আজ একঝাঁক তরুণ খেলোয়াড় নিয়ে দল সাজাতে হয়েছে। এ দুজন না থাকায় দলের সমন্বয় করতে হয়েছে তরুণ দিয়ে। আর এর ফলে তরুণদের ওপর দায়িত্বটাও বেশি ছিল। এই যেমন তামিম না থাকায় লিটন দাসের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করতে নেমেছেন মোহাম্মদ নাঈম। মুশফিক ছিলেন না বলে মিডল অর্ডারে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হয়েছে আফিফ হোসেনকে। মেহেদী হাসানের কাঁধেও ছিল বাড়তি দায়িত্ব।

এ ছাড়া এই ম্যাচে অভিষেক হয়েছে স্পিনার নাসুম আহমেদ ও পেসার শরিফুল ইসলামের। নাসুম ভালো বোলিং করেছেন, আফিফের ৪৫ রান স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশের রানটা ভদ্রোচিত করেছে। তবে তরুণদের কাছে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর চাওয়া আরও বেশি, ‘আফিফ, নাঈম ও দুই অভিষিক্তের মতো ক্রিকেটারদের জন্য এটা ভালো সুযোগ ছিল বিশ্বকে তাদের সামর্থ্য দেখানোর। আমরা যেহেতু অভিজ্ঞদের পাচ্ছি না, আমাদের এভাবেই মানিয়ে চলতে হবে। ওদের ম্যাচ জেতাতে হবে। কারণ ওরা প্রতিভাবান, বাংলাদেশকে ম্যাচ জেতানোর সামর্থ্যও ওদের আছে।’

ইনিংস ওপেন করতে নেমে ১৮ বলে ২৭ রান করেছেন মোহাম্মদ নাঈম।
ছবি: এএফপি

তবে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে সেই পুরোনো সমস্যা ব্যাটিংই মনে হয় বেশি হতাশ করেছে। ম্যাচ শেষে তিনি বলছিলেন, ‘বোলাররা যথেষ্ট ভালো করেছে। নাসুম অভিষেকে দারুণ করেছে। তবে আবারও ব্যাটিংয়ে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে এনেছি আমরা। গুচ্ছাকারে উইকেট হারালে...আমার মনে হয় এভাবে করলে হবে না। দ্বিতীয় ম্যাচে আমাদের ফিরে আসতে হবে।’

উন্নতি হলেও ফিল্ডিংয়ে যে ভুলভাল হয়েছে, সেটিও আলাদা করে উল্লেখ করেছেন মাহমুদউল্লাহ। ৪৭ রানের সময় নাসুম আহমেদের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে সহজ ক্যাচ ধরে বাউন্ডারি লাইনে পা দিয়ে নিশ্চিত আউটকে ছক্কায় বানিয়ে দিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। এ ছাড়া বাউন্ডারি লাইনে অনেকটা শিথিলই ছিল দলের ফিল্ডিং। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ নিজেই বাউন্ডারি লাইনে ছিলেন মন্থর। ম্যাচ শেষে মাহমুদউল্লাহ বলছিলেন, ‘১৯০ হলে তাড়া করার মতো ছিল, তবে একটু পিচ্ছিল ফিল্ডিং, একটু বেশি বাউন্ডারি হজম করেছি। তবে যেটা বললাম, ব্যাটিং ইউনিটকে জ্বলে উঠতে হবে।’

শুরুতে আশা জাগানিয়া ব্যাটিং করেছেন মোহাম্মদ নাঈম।
ছবি: এএফপি

আজ বড় স্কোর তাড়া করার মতোই শুরু করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ইশ সোধির লেগ স্পিনে চার উইকেট হারিয়ে সব এলোমেলো হয়ে যায়। মাহমুদউল্লাহ বলেছেন, ‘ইশ সোধি অভিজ্ঞ, সে কন্ডিশনকে কাজে লাগায় দারুণভাবে। এখানে বল একটু গ্রিপ করছিল। আসলে একই ভুল বারবার করলে হবে না আমাদের, দ্বিতীয় ম্যাচে নিজেদের একটু তুলে ধরতে হবে।’

ওয়ানডে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচের মতো আজও কিউইদের বিপদ থেকে রক্ষা করেন ব্যাটসম্যান ডেভন কনওয়ে। নাসুমের বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ড দ্রুত দুই উইকেট হারালেও কনওয়ে এসে ক্রাইস্টচার্চ ও ওয়েলিংটনে যা করেছেন আজ হ্যামিল্টনেও তাই করলেন। জুটি বেঁধে নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে গেলেন বড় রানে। যেখান থেকে শুধু জয়ের আশাই নয়, দাপট দেখানো সম্ভব।

টি-টোয়েন্টি সিরিজের আরও দুটি ম্যাচ বাকি। বাংলাদেশকে ভালো করতে হলে থামাতে হবে কনওয়েকে। সেটা ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের পর টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও টের পাচ্ছেন, ‘সে দারুণ ফর্মে আছে, আমার জানা মতে গত ৬-৭ ম্যাচে ৫-৬টি ফিফটি করেছে। তবে আমরা সুযোগ পেয়েছিলাম তাকে আউট করার, নতুন ব্যাটসম্যান আনার, তবে তাকে আটকানোর উপায় বের করতে হবে।’