আবাহনী–মোহামেডানে ঝাঁজ নেই, আশরাফুলের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ

ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে মোহাম্মদ আশরাফুলছবি: বিসিবি

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের দোতলা থেকে আবাহনীর লম্বা একটা পতাকা নেমে এসেছে নিচের স্ট্যান্ড পর্যন্ত।

ওপরের স্ট্যান্ডের একপাশে কিছু সমর্থকের ভিড়। তাঁদের সামনে দুইটি পতাকা, একটি হাতে নিয়ে ওড়াচ্ছেন কেউ। আবাহনীর সমর্থন একটু দৃশ্যমান হলেও মোহামেডানের অমন কিছু খুঁজে পাওয়া গেল না। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর সঙ্গে মোহামেডানের লড়াইটাও শেষ পর্যন্ত হলো একতরফাই।

বোলারদের সমন্বিত পারফরম্যান্সের পর হনুমা বিহারি, জাকের আলী, মোসাদ্দেক হোসেনের অর্ধশতকের সঙ্গে আফিফ হোসেনের ৪৮ রানের ইনিংসে ৬ উইকেট ও ২২ বল বাকি থাকতেই মোহামেডানের ২৫৫ রান পেরিয়ে গেছে আবাহনী। মোহামেডানের পাকিস্তানি তারকা মোহাম্মদ হাফিজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স চাপা পড়ে গেছে আবাহনীর বড় জয়ে। এবারের লিগে নিজের সর্বোচ্চ ইনিংসটা (৭০) খেলেছেন হাফিজ, পরে বোলিংয়েও নিয়েছেন ১ উইকেট। এই জয়ে ৭ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট হলো আবাহনীর, পয়েন্ট টেবিলে অবস্থান তিন নম্বরে। অন্যদিকে ৬ ম্যাচে ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে মোহামেডান পড়ে আছে আটে।

মিরপুরে আবাহনী-মোহামেডানের লড়াই উত্তাপ না ছড়ালেও রোমাঞ্চ মিলেছে দিনের অন্য দুই ম্যাচে। ইউল্যাব গ্রাউন্ডে পারভেজ রাসুলের ৫১ বলে ৬৫ রানের ইনিংসে ভর করে প্রাইম ব্যাংককে ১ বল ও ১ উইকেট হাতে রেখে হারিয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। বিকেএসপিতে মোহাম্মদ আশরাফুলের লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ার–সেরা ১৪১ রানের ইনিংস পাল্টা শতকে প্রায় ম্লান করে দিয়েছিলেন ফজলে রাব্বী। তবে শেষ পর্যন্ত ফজলের রূপগঞ্জ টাইগার্সকে হারিয়েছে আশরাফুলের ব্রাদার্স ইউনিয়ন।

মোহামেডানকে হারিয়ে আবাহনীর খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস
ছবি: প্রথম আলো

আবাহনী-মোহামেডান

টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা মোহামেডান ৫৯ রানের মধ্যে হারায় দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে। তবে তৃতীয় উইকেটে রুবেল মিয়াকে নিয়ে ১১৫ রানের জুটি গড়েন মোহাম্মদ হাফিজ। প্রিমিয়ার লিগে পান নিজের দ্বিতীয় অর্ধশতক, আউট হন ৭০ রান করে। রুবেল ফেরেন ৫১ রানে। তবে এরপর ঠিক রানের গতি বাড়াতে পারেনি মোহামেডান, মাহমুদউল্লাহর ৩৭ বলে ৪২ রানের ইনিংসের পরও ১ ওভার বাকি থাকতে ২৫৫ রানেই অলআউট। তানজিম হাসান ৩ উইকেট নেন ৩৩ রানে, ৩৬ রান দিয়ে ২ উইকেট আফিফের।

রান তাড়ায় ৩৯ রানের মধ্যেই ফিরে আসেন মোহাম্মদ নাঈম ও মুনিম শাহরিয়ার। নাঈম ১০ বল খেলে কোনো রান না করেই রানআউট হয়েছেন, দারুণ শুরু করা মুনিম ২৫ বলে ৩১ রান করে শিকার হয়েছেন পয়েন্টে নাজমুল ইসলামের দুর্দান্ত ক্যাচের। বিহারি ও জাকেরের ৯৮ রানের তৃতীয় উইকেটে জুটিতে চাপ সামাল দেয় আবাহনী। ৮০ বলে ৫৯ রান করা বিহারি ও ৮৯ বলে ৬০ রান করা জাকের খেলেছেন ধীর গতিতেই।

তবে রান ও বলের পার্থক্যের চাপ আবাহনী টের পায়নি মোসাদ্দেক হোসেন ও আফিফ হোসেনের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে। ৫৬ বলে ৮৫ রান যোগ করেছেন দুজন। ৩৮ বলে ৪৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন আফিফ, মোসাদ্দেকও অপরাজিত ৫২ রান করতে খেলেছেন ৩৭ বল। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচসেরা হয়েছেন আফিফ।

ম্যাচ শেষে আবাহনী ও মোহামেডানের খেলোয়াড়দের শুভেচ্ছা বিনিময়
ছবি: প্রথম আলো

শেখ জামাল-প্রাইম ব্যাংক

টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানের সঙ্গে মেহেদী হাসানের অবদানে শেখ জামাল তোলে ২৬৫ রান। দারুণ ফর্মে থাকা এনামুল হক করেছেন ৬১ বলে ৭৭, তিনে নামা অভিমন্যু ঈশ্বরণ অপরাজিত ছিলেন ৮১ বলে ৬২ রান। বিনা উইকেটে ১২০ থেকে ৩৩ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল তারা, আটে নামা মেহেদী হাসানের ৪১ বলে ৪০ রানের ইনিংসে পায় লড়াই করার মতো সংগ্রহ।

রান তাড়ায় সৈকত আলীর ৬৪ বলে ৬৫ রানের পর তিনে নামা ইমরুল কায়েসের ৭৯ বলে ৫২ রানের ইনিংসে ভালো শুরু পায় শেখ জামাল। তবে মিডল অর্ডারে ইনিংস বড় করতে পারেননি কেউ, ১৪১ রানে ৫ উইকেট হারায়া তারা। সাতে নামা পারভেজ রসুল এরপর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ৩৭ রানের জুটির পর সানজামুল ইসলাম, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে নিয়ে এগিয়ে নেন শেখ জামালকে। জয় থেকে ২৭ রান দূরে নবম উইকেট হারায় তারা, তবে দমেননি রসুল। শেষ ওভারে রবিউলকে চার-ছয়ের পর দুই নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন।

৭ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে এখন টেবিলের দুইয়ে আছে শেখ জামাল।

মোহাম্মদ আশরাফুল: লিস্ট এ ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ
ফাইল ছবি

ব্রাদার্স-রূপগঞ্জ টাইগার্স

৪৫তম ওভারে ১০০ বলে ১০০ রান করা ফজলে রাব্বি ফেরার পরই মূলত আশা শেষ হয়ে যায় রূপগঞ্জ টাইগার্সের। নাসুম আহমেদ ১৩ বলে ২২ রানের ক্যামিও খেলেছিলেন, কিন্তু ১৪ বল বাকি থাকতে জয় থেকে ২৫ রান দূরেই থামতে হয় তাঁদের।

এর আগে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ব্রাদার্স বড় সংগ্রহ পায় আশরাফুলের ১৩৯ বলে ১৪১ রানের অপরাজিত ইনিংসে। ১৬টি চারের সঙ্গে তিনি মারেন একটি ছয়, ছাড়িয়ে যান লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ২০১৮ সালে করা ১২৭ রানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসকে।

মাইশুকুর রহমান ও চতুরঙ্গা ডি সিলভা করেন বিপরীতমুখী অর্ধশতক। মাইশুকুর ৬৮ রান করতে খেলেন ৯২ বল, ডি সিলভা ৫১ রান করেন মাত্র ২৫ বলে। ইনিংসে চারটি চারের সঙ্গে ৩টি ছয় মারেন ডি সিলভা।

৭ ম্যাচে এটি মাত্র দ্বিতীয় জয় ব্রাদার্সের।