আমার দেশ, আমার দল

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভালো–খারাপ, দুই সময়েরই সঙ্গী সুবর্ণা মুস্তাফাফাইল ছবি

আমার সব সময়ই প্রত্যাশা থাকে, বাংলাদেশ দল ভালো করবে। বাংলাদেশ ভালো খেললেই শুধু বাহবা দেব, খারাপ খেললে চিনি না—আমি কখনোই এমন মানসিকতা পোষণ করি না। ভালো-খারাপ মিলিয়েই আমার দেশ, আমার দল।

বাংলাদেশ দলে এই মুহূর্তে সাকিব, মুশফিক, মুস্তাফিজ আছে; তরুণদের মধ্যে আফিফ ভালো খেলছে। সব মিলিয়ে দলটা খুবই ভালো। তবে ক্রিকেট নিয়ে আগাম কোনো কিছু বলাটা ঠিক নয়। ক্রিকেটটা শুধু একটা নির্দিষ্ট দিনের ২২ গজের খেলা। হ্যাঁ, ফেবারিট থাকতেই পারে, সেটা আলাদা কথা। তারপরও বলব, এখনকার আধুনিক ক্রিকেটে ফলাফলটা নির্দিষ্ট দিনের পারফরম্যান্সের ওপরই নির্ভর করে আসলে। কদিন আগের কথাই ধরুন। ভারতের মতো টেস্ট দল শুরুতে হতাশ করলেও পরে তো আবার তারাই সিরিজ জিতে গেল!

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ১৬টি দেশ খেলছে। এ ধরনের টুর্নামেন্টগুলোর মজাই হচ্ছে, যেকোনো মুহূর্তে অঘটন ঘটতে পারে। আর বাংলাদেশ নিয়ে আশার কথা, দলটা সম্প্রতি বড় বড় দলকে হারিয়ে বিশ্বকাপে গেছে। হ্যাঁ, আবুধাবিতে আমরা দুটি প্রস্তুতি ম্যাচেই হেরেছি। তবে আশাবাদী, বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোতে আমাদের ছেলেরা ঠিকই ভুলগুলো শুধরে নেবে। বাংলাদেশ সফল হবে।

করোনা মহামারির প্রকোপ অনেকটা কমে গেলেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে সবাইকেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কোনো দলের কেউ যেন অসুস্থ হয়ে না পড়ে। খেলাটা সুন্দরভাবে শেষ হোক, এটাই আমার প্রত্যাশা।

বিশ্বকাপের সব কটি খেলাই দেখব আশা করি। বাংলাদেশের বাইরে শ্রীলঙ্কা, অবশ্যই ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলাও ভালো লাগে। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে চূড়ান্ত পর্যায়ের পেশাদার মনে হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দেখলেও মনে হয়, শেষ বলটা পর্যন্ত তারা ম্যাচে থাকতে চেষ্টা করে থাকে। খেলাটা ছেড়ে দেয় না। অস্ট্রেলিয়াও কখনো হতাশ হয় না।

প্রিয় দলকে সমর্থন দিতে মরুর দেশেও হয়তো গ্যালারিতে থাকবে লাল–সবুজ বাংলাদেশ

ক্রিকেটের আরেকটা ব্যাপার আমার ভালো লাগে। দর্শকদের মধ্যে খেলা নিয়ে, দল নিয়ে যতই মার মার, কাট কাট অবস্থা থাকুক; বিভিন্ন দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে কিন্তু একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই থাকে। বিশেষ করে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আইপিএল, বিগ ব্যাশ, সিপিএলে যে খেলাগুলো হয়; সেখানে দেখা যায়, বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে একধরনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

আগে ভারত-পাকিস্তান বা বাংলাদেশ-ভারতের খেলার মধ্যে যে ধরনের প্রতিহিংসা থাকত, সেটা কিন্তু এখন আর থাকে না। এখন সবাই খেলাটা উপভোগ করে, ইদানীংকালের খেলা দেখে আমার তা–ই মনে হয়। কোভিডও হয়তো এর একটা কারণ। খেলার পরিবেশ এখন অনেক বদলে গেছে। খেলাকে তারা এখন খেলা হিসেবেই দেখে, ব্যক্তিগত আক্রোশের জায়গায় পরিণত করে না।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আবার একটু আসি। বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহর এই দলের ভালো করার সামর্থ্য নিয়ে আমার মনে কোনো প্রশ্ন নেই। তবে এটাও ঠিক, ক্রিকেটে যেদিন খেলাটা হয়, ওই দিনের পরিস্থিতি, আবহাওয়া, টসে কে জিতল—ফলাফলের ওপর এই সবকিছুরও প্রভাব থাকে। খেলোয়াড়েরা তো অনুশীলন করেই, অনেক পরিশ্রম করে ওরা। কিন্তু সবই পণ্ড হয়ে যেতে পারে, যদি আসল জায়গায় সবকিছু নিজেদের পক্ষে না থাকে। এটাই ক্রিকেট আসলে। বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যাঁরা কোচ আছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই আমাদের দলকে সেভাবে প্রস্তুত করবেন।

ক্রিকেট দুনিয়ায় বাংলাদেশকে শক্তিশালী অবস্থানেই দেখেন সুবর্ণা
ফাইল ছবি

খেলায় মনঃসংযোগ ও আত্মবিশ্বাস খুব বড় ব্যাপার। ফুটবলের দিকে যদি তাকাই, আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের ফুটবলটা খুব আবেগপ্রবণ। লাতিন আমেরিকান ফুটবলের মজাও এ জন্যই। তারা খুবই আবেগনির্ভর। জার্মানরা যেভাবে ফুটবল খেলে, দেখে আমার তো মনে হয় মাঠের মধ্যে ১১টি রোবট খেলছে! হয়তো সে জন্যই তারা ভালো করে। তারপরও মানুষ লাতিন আমেরিকান ফুটবলের জন্য পাগল। কারণ, তাদের মধ্যেই আছেন একজন পেলে, একজন ম্যারাডোনা, একজন মেসি, একজন নেইমার। আমার কাছে এটাই বড়।

আমার মনে হয়, বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে ভালো জায়গায় আছে। আমাদের খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত অর্জন আছে। আমাদের সাকিবের মতো একজন খেলোয়াড় আছে। ধারাভাষ্যকারদের বলতে শুনি, ও নাকি একাই একটা ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। সাকিব বারবারই তা প্রমাণ করেছে।

মাশরাফির সঙ্গে একদিন আমার কথা হচ্ছিল, সাকিবের নাম বলতেই ও বলল, ‘আপা, সাকিব স্পেশাল।’ এটাই সত্যি। সাকিব, মাশরাফিরা চিন্তাশীল ক্রিকেটার। তারা খেলাটা ৮০ শতাংশ মাথায়ই খেলে ফেলে, বাকি ২০ শতাংশ খেলে মাঠে। যুগ যুগ ধরে বড় ক্রিকেটাররা তা–ই করে এসেছেন। ব্রায়ান লারা, শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাবিড়—তারা সবাই ক্রিকেটটা মাথা দিয়েই খেলেছে।

ধোনির তো বুদ্ধি গিজগিজ করে মাথায়। বর্তমান সময়ের খেলোয়াড়দের মধ্যে বিরাট কোহলির কথা বলব। সে–ও ক্রিকেটটাকে একবারে ভেজে খেয়েছে বলে মনে হয়। বোলার বল করার আগেই জেনে যায়, বলটা কী হতে যাচ্ছে।

আমার বিশ্বাস, আমাদের বাংলাদেশ দলেও এখন এমন ক্রিকেটার আছে। বিশ্বকাপে তাদের কাছেই বেশি আশা। তারা আমার দেশ, আমার দলের পতাকাকে উঁচিয়ে ধরবে বিশ্বদরবারে।

সুবর্ণা মুস্তাফা: অভিনেত্রী ও সাংসদ