আমি আশা নিয়ে বাঁচতে চাই

আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। ক্ষুদ্র এক অণুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো

বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক। ছবি: প্রথম আলো

ডায়েরি লেখার অভ্যাস আমার নেই। ঘরে বন্দী থাকার সময়টাতে যদি ডায়েরি লিখি, ভাবছি কী লিখতাম! দিনের শুরুটা কীভাবে হলো, সেটিই সম্ভবত আগে লিখতাম।

গতকালের কথাই বলি। ঘুম থেকে উঠে দুই ঘণ্টা জিম করলাম। ৯টার দিকে নাশতা সেরে দুই ঘণ্টা সিনেমা দেখলাম। এরপর দুই ঘণ্টা ঘুম। ঘুম থেকে উঠে একটু হাঁটাহাঁটি। দেড়টার দিকে দুপুরের খাবার, বিকেলটা বিছানায় গড়াগড়ি। রাত ৮টার দিকে খাবার খেয়ে খানিকক্ষণ গল্প-স্বল্প করে রাত ১০টা-১১টার দিক ঘুমাতে গেলাম। এভাবেই কেটে গেল করোনাভাইরাস আক্রান্ত আরও একটা দিন।

কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে করোনা নিয়ে নানা খবর। আমি করোনার খবর কম শোনার চেষ্টা করি। বেশি শুনলে আতঙ্ক, ভয় লাগে বেশি। যেহেতু বের হচ্ছি না ঘর থেকে, কিছুটা তো নিরাপদ বোধ করছি। কিছুক্ষণ পর পর স্যানিটাইজার কিংবা সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছি।

সারাক্ষণ বাসায় থাকি, কাজের ব্যস্ততা নেই। অতীতের অনেক কিছুই মনে পড়ে। অবশ্য নিজের পুরোনো ইনিংস বা খেলার ব্যাপারগুলো আমার স্মৃতিতে একটু কমই আসে। সেদিন আমার একটা ইনিংসের ভিডিও দেখছিলাম, কিন্তু শেষ করতে পারিনি। যখন টেকনিক্যাল কিছু দেখার প্রয়োজন হয়, তখনই নিজের ব্যাটিংয়ের ভিডিও দেখি।

এখন অবশ্য অন্য ব্যাটসম্যানদেরও প্রচুর ভিডিও দেখছি। শচীন টেন্ডুলকারের অনেক পুরোনো একটা ইনিংস দেখছিলাম। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তরুণ শচীন, ওই ইনিংসটা। বাংলাদেশের একটা পুরোনো খেলা দেখলাম সেদিন। আশরাফুল ভাইয়ের অনেকগুলো ইনিংস দেখা হয়েছে এর মধ্যেই। ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম টেস্টে মুত্তিয়া মুরালিধরনের মতো বোলার নিয়ে গড়া শ্রীলঙ্কার বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে কী দুর্দান্ত সেই সেঞ্চুরি!

ক্রিকেটের বাইরে নেটফ্লিক্সে কিছু সিরিজ, মুভি দেখেও সময় কাটে। ঘরে বসে খুব বেশি ক্রিকেটীয় কিছু করার সুযোগ নেই। ফিটনেসের কাজটা করছি। স্কিলের কাজ নিয়ে আপাতত খুব বেশি ভাবছি না। আমার কেন জানি মনে হয়, নেট করতে পারছে না, ব্যাটিং-বোলিং করতে পারছে না... এসব কারণে ক্রিকেটারেরা সবাই অনেক ক্ষুধার্ত হয়ে আছে। আমার তো বিশ্বাস, খেলা শুরু হলে সবার সেই রকম পারফরম্যান্স হবে।

কেন এমন মনে হচ্ছে? আসলে লম্বা বিরতির পর খেলতে নামলে খেলাটা তখন আর চাপের মনে হয় না। সেটা অনেক উপভোগের হয়। আনন্দেও হয়। ঘরে থাকতে থাকতে সবার মধ্যে এক ধরনের একঘেয়েমি চলে আসছে নিশ্চয়ই। না খেলতে খেলতে বিরক্তি পেয়ে বসছে। খেলা যখন শুরু হবে, দেখা যাবে ছেলেবেলার সেই আনন্দটা ফিরে এসেছে। যখন আমরা শুধু মনের আনন্দেই খেলতাম।

তবে খেলা যে কবে শুরু করতে পারব, সেটির কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমাদের অনেকগুলো টেস্ট সিরিজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে কিছু স্থগিত করা হয়েছে। এটা নিয়ে অবশ্য ভেবে খুব বেশি লাভ হবে না। আমাদের হাতে তো কিছু নেই। যেহেতু সিরিজগুলো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ, এমন না যে আর হবেই না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হতেও পারে।

আর এখন খেলার চেয়ে বেঁচে থাকার চিন্তাটাই বড়। কঠিন এই পরিস্থিতিতে নিজে কীভাবে বাঁচব, পরিবারকে কীভাবে রক্ষা করব, সেটা নিয়েই বেশি ভাবছি। আমার মনে হয় সবাই তা-ই ভাবছে। আগে পরিস্থিতি ঠিক হোক তখন না হয় খেলা নিয়ে ভাবা যাবে। তবে করোনা নিয়ে ভয়, আতঙ্ক যা-ই থাক, আমি আশা নিয়ে বাঁচতে চাই।