আমিরের অবসরের জন্য পাকিস্তান বোর্ডকে ধুয়ে দিলেন আসিফ

পাকিস্তান দলের বোলিংয়ে এক সময় ভরসা ছিলেন মোহাম্মদ আমির ও মোহাম্মদ আসিফ
ছবি: টুইটার

পাকিস্তানের ক্রিকেটের ইতিহাসই অনেক নাটকীয়তা আর টুইস্টে ভরা। তার সর্বশেষ পালা বোধ হয় দেখা গেল মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাঁহাতি ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ আমিরের অবসরের মধ্য দিয়ে।

পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) ক্রিকেট পরিচালনা কতটা বিতর্ক ছড়ায়, সেটির সর্বশেষ উদাহরণ রেখে দলের ম্যানেজমেন্ট ও বোর্ডকে দায়ী করে ক্রিকেটের তিন সংস্করণ থেকেই অবসর নিয়েছেন আমির।

তাঁর অবসরের পর থেকেই পাকিস্তানের ক্রিকেটের ভক্ত, সাবেক ক্রিকেটার ও বিশেষজ্ঞ অনেকেই আমিরের সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলছেন।

এবার আমিরের অবসর নিয়ে কথা বলেছেন ২০১০ সালে স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে আমিরের দুই 'দোসরে'র একজন মোহাম্মদ আসিফ।

ফিক্সিংয়ের অন্ধকার জগতে জড়িয়ে ফাস্ট বোলিংয়ে নিজের দুর্দান্ত প্রতিভার জলাঞ্জলি দিয়েছেন আসিফ নিজেও। তবে আমিরের অবসরটা তিনি মেনে নিতে পারছেন না।

তাঁর চোখে আমির তাড়াহুড়ো করেছেন সিদ্ধান্ত নিতে। তবে আমিরকে ঠিকভাবে দেখভাল করতে না পারায়, ধীরে ধীরে এমন সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দেওয়ায় পিসিবিকেও একহাত নিয়েছেন আসিফ!

একসময়ের কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরামের উত্তরসূরি ভাবা হতো আমিরকে। ইনসুইং, আউটসুইং, বাউন্সার, ইয়র্কার, রিভার্স সুইং...কী ছিল না আমিরের হাতে! পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার হওয়ার সব রসদ তাঁর ছিল। কিন্তু অকালে হলো অমিত প্রতিভার অবহেলায় অপচয়।

আমিরের মতো আসিফও নিজের দুর্দান্ত প্রতিভার জলাঞ্জলি দিয়েছেন
ফাইল ছবি: এএফপি

ফিটনেসের কারণ দেখিয়ে টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন আগেই, গত বছর জানুয়ারির পর আর টেস্ট খেলা হয়নি আমিরের। কিন্তু সাদা বলের ক্রিকেটে তাঁকে আরও অনেক দিন দেখার সুযোগ আর পাওয়া যাচ্ছে না।

'আমিরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে যা হয়েছে, সেটার জন্য পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড আর মোহাম্মদ আমির দুই পক্ষই দায়ী'—দ্য ক্রিকেটার ওয়েবসাইটে আমিরের অবসর নিয়ে নিজের ভাবনা জানাতে গিয়ে বললেন আসিফ।

এখানে পিসিবির দোষটা কোথায়, সেটাও ব্যাখ্যা করেছেন, 'ওর (২০১০ স্পট ফিক্সিংয়ের কারণে) নিষেধাজ্ঞার পর পিসিবি ওর ওপর অনেক ভরসা রেখেছিল, ওকে অনেক সুযোগও দিয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি ওর কাছ থেকে ওরা কী চায়, সে ব্যাপারে নমনীয়তার অভাব ছিল পিসিবিতে।'

আমিরের অবসর চাইলেই এড়ানো যেত বলেও মনে হচ্ছে আসিফের, 'সবকিছু মিলিয়েই বর্তমান এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, পাকিস্তান ক্রিকেটের মঙ্গলের জন্যই যেটাকে এড়ানো উচিত ছিল। পাশাপাশি আমি এটাও মনে করি যে আমির সিদ্ধান্তটা নিতে একটু বেশি অধৈর্য হয়ে গেছে। আরও ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।'

দলের ম্যানেজমেন্ট ও বোর্ডকে দায়ী করে অবসর নেন আমির
ছবি: টুইটার

গত দুই বছরে জাতীয় দলে সময়টা খুব যে ভালো কেটেছে আমিরের, তা বলা যাবে না। মাঝেমধ্যে অবশ্য প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছেন।

গত বিশ্বকাপে কিংবা তার আগে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পাকিস্তানকে শিরোপা জেতানোর পথে বেশ ভালো বোলিং করেছেন। তবে এই মুহূর্তে নিউজিল্যান্ড সফরে থাকা পাকিস্তানের ৩২ জনের দলে তাঁকে নেওয়া হয়নি।

সেটিই হয়তো আমিরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে শেষ প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।

'মানসিক যন্ত্রণা'কে কারণ দেখিয়ে সেটির শেষ টানতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছেন আমির।

টেস্ট থেকে আগেই অবসর নেওয়া আমিরকে সাদা বলের ক্রিকেটে পাকিস্তান আরও ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারত বলে মনে হচ্ছে আসিফের, 'কোনো সন্দেহ নেই নিজের সেরা ছন্দে মোহাম্মদ আমির এখনো ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা রাখে। ফিটনেসের কারণে আমির টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছে, যেটা আমার কাছে সত্যিকারের কারণ বলেই মনে হয়েছে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তটা মেনে নিয়ে ওর দক্ষতাকে ছোট সংস্করণের ক্রিকেটে কাজে লাগানোর বদলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড তাদের অনড় মনোভাবের কারণে ওকে (আমির) সব সংস্করণেই হারাল।'

শোয়েব আখতারের মতো সাবেক অনেক ক্রিকেটার আমিরের অকাল অবসরে অখুশির কথা জানিয়েছেন। রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস তো আমির ও পিসিবির মধ্যে সমঝোতা করার পাশাপাশি আমিরকে আরও ভালোভাবে বোলিংয়ের কিছু দিক দেখিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন!

আসিফের মনে হচ্ছে, আমিরের সিদ্ধান্তটা ভুলই হয়েছে, ‘(পাকিস্তানের) কোচিং দলের সদস্যদের আর টিম ম্যানেজমেন্টের অনেক দোষ থাকা সত্ত্বেও আমার কাছে মনে হয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া আমিরের ভুল সিদ্ধান্ত।’