আমিরের মতে, পাকিস্তানের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ না জেতার কারণ ইমরান

প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপচারিতায় বিস্ফোরক পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী তারকা আকিব জাভেদ। ফাইল ছবি
প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপচারিতায় বিস্ফোরক পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী তারকা আকিব জাভেদ। ফাইল ছবি

করোনার এই সময় মাঠে ক্রিকেট নেই। খেলোয়াড়েরা কাটাচ্ছেন অলস সময়। কিন্তু এ সময়েও ম্যাচ পাতানো নিয়ে কিছু বিস্ফোরক মন্তব্য করে আলোচিত হয়েছেন পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য, সাবেক ফাস্ট বোলার আকিব জাভেদ। 

তিনি সম্প্রতি প্রথম আলোর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ সাক্ষাৎকারে হয়েছেন আরও বিস্ফোরক, খোলামেলা। বলেছেন, সাবেক সতীর্থ ওয়াসিম আকরামের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক সব সময়ই উত্তপ্ত। একই সঙ্গে বলেছেন, তাঁর আরেক সাবেক সতীর্থ আমির সোহেল মনে করেন ১৯৯২ সালের পর পাকিস্তানের বিশ্বকাপ না জেতার কারণ হতে পারেন ইমরান খানও।

আকিবকে প্রশ্ন করা হয়েছিল সাম্প্রতিককালে আমির সোহেলের এক মন্তব্যের সূত্র ধরে। আমির কিছু দিন আগে বলেছিলেন, ১৯৯২ সালের পর পাকিস্তান ক্রিকেটে ওয়াসিম আকরামের সবচেয়ে বড় অবদান, দেশকে বিশ্বকাপ জিততে না দেওয়া। আকিব আমিরের এই কথার সঙ্গে একমত না হলেও এ প্রসঙ্গে টেনে এনেছেন পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে, 'আমি আমিরের কথার সঙ্গে একমত নই। সে হয়তো নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তান ক্রিকেটে ম্যাচ পাতানোর বিভিন্ন ঘটনার কথা মনে করে এটা বলেছে। আমির মনে করে ১৯৯২ সালের পর পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জিততে না পারার কারণ ইমরান খান। উনি তাঁর মতো আরও একজন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে হয়তো চাননি। কারণ এটা হয়তো তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রক্রিয়াটাকে ধীর করে দিত।'

আকিবের মতে বিশ্বকাপ জিততে ভাগ্যও লাগে, 'বিশ্বকাপ জিততে ভাগ্যও লাগে। নির্দিষ্ট সময়ে দলের সবাইকে জ্বলে উঠতে হয়। বিশ্ব সেরা দল ক্রিকেটারদের নিয়েও দক্ষিণ আফ্রিকা কখনোই বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। চোকার হিসেবে তাদের যে পরিচয় রটে গেছে, সেটা থেকেও কখনোই বেরিয়ে আসতে পারেনি তারা।'

ম্যাচ পাতানো নিয়ে সব সময়ই সোচ্চার আকিব। বলেছেন, এই ম্যাচ পাতানো নিয়ে সোচ্চার হওয়ার কারণেই মাত্র ২৮ বছর বয়সে শেষ হয়ে গেছে তাঁর ক্যারিয়ার, 'বিচারপরতি মালিক কাইয়ূম কমিশনের সামনে আমি সাক্ষ্য দিয়েছিলাম ম্যাচ ফিক্সিং ইস্যুতে। তখন আমি পাকিস্তান দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের নাম বলি, যারা ম্যাচ পাতানোর অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল। এর পরপরই আমাকে খেলা ছাড়তে বাধ্য করা হয়। ২৮ বছর বয়সেই আমি খেলা ছেড়ে দিই। একটু আগেভাগেই। আরও কয়েক বছর হয়তো খেলতে পারতাম, তবে ফিক্সিং ইস্যুতে আমি এখনো লড়ে যাচ্ছি। আমি এখনো বিশ্বাস করি, ম্যাচ পাতানোর বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থান কাউকে না কাউকে নিতে হতোই।'


ওয়াসিম আকরামের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন আকিবের? এ প্রশ্নের উত্তরে কোনো রাখঢাক না রেখেই বলেছেন, 'কখনো খুব ঠান্ডা, কখনো উত্তপ্ত।' তবে আরেক 'ডব্লু' ওয়াকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা মোটামুটি, 'ওর সঙ্গে আমার কাজের সম্পর্ক।'


এক সময় ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনিসের ছায়ায় খেলতে হয়েছে তাঁকে। অথচ, তাঁর মতো ফাস্ট বোলার দুনিয়ার যেকোনো দেশের হয়েই অনায়াসেই হতেন প্রথম পছন্দ। এটি নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই, নিজেকে দুর্ভাগাও ভাবেন না তিনি, 'এ বিষয়ে কিছু বলাটা কঠিন। তবে আমি ওই সময়টা উপভোগই করেছি। দলে আমার নির্দিষ্ট ভূমিকা বা দায়িত্ব থাকত। ওয়াকার বা ওয়াসিমও যে সে সময় ধারাবাহিকভাবে পারফরম করে গেছে, ব্যাপারটা এমন নয়। আমাকে অনেক সময় অর্পিত দায়িত্ব পালনে স্রোতের বিপরীতে বোলিং করে যেতে হয়েছে। আমি আমার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন ছিলাম। কোনো খেলোয়াড় যদি তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন না থাকে, তাহলে তাঁর পক্ষে দীর্ঘদিন খেলে যাওয়া কঠিন।'

(প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপচারিতায় বাংলাদেশের ক্রিকেটসহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী তারকা আকিব জাভেদ। সেগুলো পড়তে চোখ রাখুন প্রথম আলো অনলাইনে)