আম্পায়ারদেরও পরীক্ষা উইন্ডিজ সিরিজে

বাংলাদেশের আম্পায়ারদের টেস্ট পরিচালনার সুযোগ মিলতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে।ছবি: প্রথম আলো

‘টেস্ট ম্যাচ করে মরে গেলেও কোনো দুঃখ নেই’—কথাটা বলছিলেন আইসিসির আন্তর্জাতিক প্যানেলের এক বাংলাদেশি আম্পায়ার। বাংলাদেশি আম্পায়ারদের জন্য টেস্ট ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ পাওয়া যে কত বড় ব্যাপার, সেটি বোঝা যায় এই কথাতেই। বাংলাদেশ টেস্ট খেলছে ২০ বছর ধরে। অথচ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মাত্র চারজন আম্পায়ারই টেস্ট ম্যাচে মাঠে দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘদিন পর আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে আবারও মাঠে দেখা যাবে বাংলাদেশি আম্পায়ারদের।

আইসিসির নতুন নিয়মের কারণেই তৈরি হয়েছে এই সুযোগ। করোনাকালের নিয়ম—ম্যাচ পরিচালনা করতে হবে স্থানীয় আম্পায়ার দিয়ে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দুটি টেস্ট ম্যাচে তাই মাঠের দরজা খুলে যেতে পারে বাংলাদেশের আম্পায়ারদের সামনে। টেস্টে ম্যাচ পরিচালনার জন্য সাধারণত এলিট প্যানেলের আম্পায়ার নেওয়া হয়। বাংলাদেশে এলিট প্যানেলের আম্পায়ার নেই। আছেন চারজন ইন্টারন্যাশনাল প্যানেলের আম্পায়ার—শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ, মাসুদুর রহমান, গাজী সোহেল ও তানভির আহমেদ। সুযোগটা তাই তাঁদেরই পাওয়ার কথা।

টেস্ট ম্যাচ পরিচালনা বাংলাদেশের আম্পায়ারদের জন্য বিরাট ব্যাপার।
ছবি: প্রথম আলো

টেস্ট ক্রিকেটে যখন ছিল স্বাগতিক আম্পায়ারের যুগ, বাংলাদেশের আম্পায়ারদের মধ্যে তখন দুটি টেস্টে মাঠে ছিলেন আখতারউদ্দিন শাহীন। একটি করে টেস্ট ম্যাচ পরিচালনা করেছেন মাহবুবুর রহমান ও শওকাতুর রহমান। ২০০২ সালে ক্রিকেট প্রবেশ করে নিরপেক্ষ আম্পায়ারের যুগে। এরপর বাংলাদেশের একমাত্র এনামুল হকই টেস্ট ম্যাচে আম্পায়ারিং করেছেন। সেটিও ২০১২ সালের কথা। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের কেউ টেস্ট ম্যাচে আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন না করলেও বর্তমানে বিসিবির চিফ আম্পায়ার্স কোচ এনামুল আশাবাদী, সুযোগ পেলে নিজেদের প্রমাণ করতে পারবেন বাংলাদেশের আম্পায়াররা। ‘গত ১০ বছরে আমাদের কেউ হয়তো টেস্ট ম্যাচ করেনি। কিন্তু আমরা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ পরিচালনা করছি। টেস্ট ম্যাচেও আমরা টিভি আম্পায়ার ছিলাম। আমার মনে হয়, যারা আছে, তারা কাজটা করতে পারবে। এটা আমাদের প্রমাণ করার সুযোগ’—কাল আম্পায়ারদের একটি প্রশিক্ষণ কোর্স শেষে বলেছেন এনামুল।

সর্বশেষ এনামুল হক টেস্ট ম্যাচে আম্পায়ারিং করেছেন।
ছবি: প্রথম আলো।

স্থানীয় আম্পায়ারদের দিয়ে ম্যাচ পরিচালনার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা অবশ্য সুখকর হয়নি নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশেই। কদিন আগে নিউজিল্যান্ড সফর শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডার স্বাগতিক আম্পায়ারদের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। করোনাকালেও তিনি নিরপেক্ষ আম্পায়ার দাবি করেছেন। ভারত-অস্ট্রেলিয়ার চলমান মেলবোর্ন টেস্টেও আম্পায়ারিং প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আর বাংলাদেশের তো এই অভিজ্ঞতা আছেই। দুই বছর আগে বাংলাদেশ সফরে এসে আম্পায়ারিংয়ের মান নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের তখনকার টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক কার্লোস ব্রাফেট।

এবারও যখন সামনে নিজেদের প্রমাণের পরীক্ষা, এনামুল সাহস পাচ্ছেন বাড়তি ডিআরএসে। স্বাগতিক আম্পায়ারদের ভুলত্রুটির কথা মাথায় রেখে আইসিসি দুটি ডিআরএসের জায়গায় তিনটি ডিআরএস ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে। ‘এখন ডিআরএস আছে। ভুল হলেও ক্রিকেটাররা চ্যালেঞ্জ করতে পারবে। এখন তিনবার চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ আছে,’ বলছিলেন এনামুল।

বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক আম্পায়ারদের মধ্যে পরিচিত মুখ শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ।
ছবি: প্রথম আলো

করোনাকালে ম্যাচ রেফারিও থাকবেন স্বাগতিক দেশের। বাংলাদেশের নিয়ামুর রশিদ ও আখতার আহমেদ আছেন আইসিসির ম্যাচ রেফারির তালিকায়। আম্পায়ারদের সঙ্গে ম্যাচ রেফারিদের জন্যও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজটি হবে পরীক্ষার। বিসিবির ম্যাচ রেফারিদের প্রধান রকিবুল হাসানের আশা, সুযোগটা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশি ম্যাচ অফিশিয়ালদের খরা কিছুটা হলেও কাটবে, ‘আইসিসি নিশ্চয়ই দেখবে তারা এখানে কেমন করে। ভালো করলে আমাদের একটা দাবি তো থাকবেই ভবিষ্যতের জন্য।’