আর্জেন্টিনা ৫০, ব্রাজিল ৭১

নিজেদের দেশের অন্য খেলার খোঁজ রাখেন তাঁরা?ফাইল ছবি

ডেভিড বেকহাম একবার বলেছিলেন, একটি কারণে তাঁর ফুটবলার না হয়ে ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছা জেগেছিল। ইংলিশ মিডফিল্ডার তখন ক্যারিয়ারের চূড়ায়। ব্র্যান্ড আইকন হিসেবে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে সবাই তাঁকে চেনে। সেই খেলোয়াড়ের তবু ক্রিকেট খেলতে চাওয়ার কারণ ছিল বৃষ্টি। ইংল্যান্ডের আবহাওয়ায় নিয়মিত বৃষ্টি আর প্যাঁচপ্যাঁচে কাদার মধ্যে খেলে ত্যক্ত বেকহাম ক্রিকেটারদের বৃষ্টিবিরতি দেখে ঈর্ষান্বিত হতেন।

বেকহামের সময়টায় ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের যে অবস্থা ছিল, তাতে আর কোনোভাবে ঈর্ষা জন্ম নেওয়ার উপায় ছিল না। তারকাখ্যাতি কিংবা সাফল্য—সব দিক থেকেই ফুটবল এগিয়ে। কিন্তু গত দশকে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটও সাফল্যের দেখা পেয়েছে। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতা দলটি গত সপ্তাহেও এই দুই ফরম্যাটের শীর্ষে ছিল। আর ফুটবল র‍্যাঙ্কিংয়ে কখনো সেরা তিনেই জায়গা হয়নি ইংল্যান্ডের। রাহিম স্টার্লিং বা হ্যারি কেইনদের এখন বৃষ্টি ছাড়াও ক্রিকেট খেলতে চাওয়ার ইচ্ছা জাগতে পারে। কেইনরা তো টটেনহামের ড্রেসিংরুমে নিয়মিত ক্রিকেট খেলেনও!

এ তো গেল ইংল্যান্ডের কথা। বিশ্ব ফুটবলের শীর্ষ দলগুলোর মধ্যে একমাত্র ইংল্যান্ডই ক্রিকেটেও দাপট দেখাচ্ছে। কিন্তু ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা বা জার্মানির কী দশা? তারা কি ক্রিকেট খেলে, খেললেও কেমন খেলে? আজ প্রকাশিত আইসিসির র‍্যাঙ্কিং এ ব্যাপারে একটু হলেও ধারণা দিতে পারে।

ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা ক্রিকেট দল।
ফাইল ছবি

আর্জেন্টিনা যে ক্রিকেট খেলে, সেটা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনেক দিন ধরে যাঁরা অনুসরণ করছেন, তাঁরা ভালোই জানেন। আইসিসি ট্রফিতে ম্যারাডোনার দেশের বিপক্ষে খেলতে হয়েছে বাংলাদেশকে। কিন্তু ব্রাজিল, ইতালি কিংবা পর্তুগালদের ক্রিকেট ইতিহাস নিয়ে খুব কম মানুষই হয়তো জানেন।

২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে সব সদস্যদেশকেই টি-টোয়েন্টিতে আন্তর্জাতিক মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইসিসি। এর ফলে এখন আইসিসির অধীনে থাকা প্রায় এক শ দলের পক্ষেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলা সম্ভব। আর সে সুবাদে আইসিসি র‍্যাঙ্কিংয়ে এখন পর্যন্ত ৮০টি দেশের নাম দেখা যাচ্ছে।

ফুটবল বিশ্বকাপ জিতেছে এমন দেশগুলোর মধ্যে ইংল্যান্ডই যে ক্রিকেটে সবচেয়ে দাপট দেখায়, সেটা তো সবারই জানা। এরপরই আছে ইতালি। চারবারের ফুটবল বিশ্বকাপ জেতা দলটি ক্রিকেটেও খুব একটা পিছিয়ে নেই। রেটিং পয়েন্টে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলা কেনিয়ার চেয়ে মাত্র ১ পয়েন্ট পিছিয়ে ২৬-এ আছে ইতালি। তাদের মতো চারটি ফুটবল বিশ্বকাপ জেতা জার্মানিও ভালোই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলে। টনি ক্রুস-মানুয়েল নয়্যারদের দেশ আছে ৩৩ নম্বরে। ফুটবল বিশ্বকাপজয়ীদের মধ্যে ক্রিকেট র‍্যাঙ্কিংয়ে এরপরই আছে স্পেন। ইউরোপিয়ান অঞ্চলে নিয়মিত ক্রিকেট খেলার সুবাদে সের্হিও রামোসদের স্বদেশিরা ক্রিকেট–বিশ্বের ৪০তম দল।

ইতালিয়ান সাবেক ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ান ভিয়েরিও ক্রিকেট খেলেন।
ছবি: ইনস্টাহ্রাম

দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে ক্রিকেট এখনো খুব বেশি খেলা হয় না। এর প্রভাব টের পাচ্ছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। দুবারের বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা ক্রিকেটে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের চেয়ে এগিয়ে আছে। লিওনেল মেসির দেশ ক্রিকেটে এখন ৫০তম। আর নেইমারদের দেশ আছে আর্জেন্টিনার ২১ ধাপ নিচে।

বিশ্বকাপ ফুটবল জেতা আট দেশের মধ্যে বাকি দুটি উরুগুয়ে ও ফ্রান্স এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পায়নি। উরুগুয়ে ২০১৮ দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকে টপকে ফাইনালও খেলেছে। কিন্তু এখনো আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি না খেলায় র‍্যাঙ্কিংয়ে জায়গা পায়নি তারা। আর অলিম্পিক ক্রিকেটের একমাত্র রুপাজয়ী ফ্রান্স ২০১৮ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে খেললেও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির স্বাদ পায়নি।

মেসি, নেইমার আর রামোসদের দেশের কথা যখন বলা হলো, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বা এদেন হ্যাজার্ডদের দেশ আর কী দোষ করল? ইউরোপজুড়ে ক্রিকেটের জোয়ারে গা ভাসিয়েছে পর্তুগালের মতো দেশও। র‍্যাঙ্কিংয়ে ব্রাজিলের ওপরেই আছে ‘ইউরোপের ব্রাজিল’ পর্তুগাল (৬০)। হ্যাজার্ডের দেশ বেলজিয়াম যেমন এগিয়ে আছে আর্জেন্টিনার চেয়ে। টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ে ৪৩-এ আছে বেলজিয়াম।

ফুটবলের জন্য পরিচিত কিন্তু ক্রিকেটও খেলছে এমন দেশের তালিকায় আছে কাতার (২১), ডেনমার্ক (২৯), নাইজেরিয়া (৩৬), রোমানিয়া (৪২), মেক্সিকো (৪৬), কোস্টারিকা (৫৬), দক্ষিণ কোরিয়াও (৬৪)।