আহমেদাবাদে ভারতের জয়ে ফিরল সাকিব–মিরাজদের স্মৃতি

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও স্পিনজাল বিছিয়েছিল বাংলাদেশফাইল ছবি: প্রথম আলো

হারের পর ইংল্যান্ড অধিনায়ক জো রুটকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, উইকেট কেমন? উত্তরে রুট নিজের ৫ উইকেট পাওয়ার কথা বলেছিলেন। ইংল্যান্ড অধিনায়ক খণ্ডকালীন বোলার। শখের বশে কিংবা একদমই উইকেট না পড়লে বাধ্য হয়ে বল হাতে তুলে নেন। কাল শেষ হওয়া আহমেদাবাদ টেস্টে ভারতের প্রথম ইনিংসে সেই রুটেরই বোলিং পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে কি না ৬.২-৩-৮-৫!

আহমেদাবাদ টেস্টে দুই দিনের মধ্যে ১০ উইকেটে জিতেছে ভারত। এর মধ্যে রুটের বল করার প্রসঙ্গ তুলে আনার কারণ, উইকেটের চরিত্র। ভারতীয় উইকেট এমনিতেই স্পিনবান্ধব, কিন্তু আহমেদাবাদে টেস্টের দুই দিন ধরে যা দেখা গেছে তা নিঃসন্দেহে অনভিপ্রেত।

রবিচন্দ্রন অশ্বিন, অক্ষয় প্যাটেল, জ্যাক লিচের কথা বাদ দিন, রুটের মতো আপাত নিরীহ ধাঁচের অফ ব্রেক বোলারও অবিশ্বাস্য বাঁক পেয়েছেন। স্পিনাররা যে এই উইকেটে রাজত্ব করবেন, সেটি অবশ্য বোঝা গিয়েছিল ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসেই।

প্রথম ইনিংসে ৪৮.৪ ওভার টিকতে পারা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অশ্বিন-অক্ষয় মিলে ৩৭.৪ ওভার বল করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই পরের ইনিংসগুলোয় স্পিনারদের বেশি বল করার কথা। কিন্তু সেটি এতটাই হয়েছে যে রীতিমতো বিশ্বরেকর্ড!

আহমেবাদ টেস্টের তৃতীয় ও চতুর্থ ইনিংসে বল করেছেন শুধু স্পিনাররা—টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৪ বছরের ইতিহাসে এমন নজির এই প্রথম। এর আগে আর কোনো টেস্টে তৃতীয় ও চতুর্থ ইনিংসের পুরোটা সময় শুধু স্পিনাররা বল করেননি।

টেস্টে তৃতীয় ইনিংস মানে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে বল করেন অক্ষয় প্যাটেল, রবিচন্দ্র অশ্বিন ও ওয়াশিংটন সুন্দর। ইংল্যান্ডকে ৮১ রানে অলআউট করে শুধু স্পিনারদের বল করানোর যৌক্তিকতাও প্রমাণ করেছেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি।

চতুর্থ ইনিংসে জয়ের জন্য মাত্র ৪৯ রানের লক্ষ্য পেয়েছিল ভারত। এই স্বল্প সংগ্রহ নিয়ে যতটুকু সম্ভব লড়াইয়ের অস্ত্র হিসেবে ইংল্যান্ড অধিনায়ক রুটও বেছে নিয়েছিলেন স্পিন আক্রমণ। উইকেটের চরিত্র বুঝে এ ছাড়া আর উপায় কি! আর তাই বাঁহাতি স্পিনার লিচের সঙ্গে রুট নিজে নেমে পড়েছিলেন বোলিংয়ে।

তবে এই টেস্টের সঙ্গে আরও একটি টেস্টের খানিকটা মিল আছে। খোলাসা করে বললে, প্রায় তিন বছর আগের সেই টেস্টে চতুর্থ ইনিংস দেখা যায়নি।

যে তিন ইনিংসের খেলা দেখা গিয়েছিল তার মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ইনিংস বল করেছেন শুধু স্পিনাররা। ঠিক ধরেছেন—২০১৮ মিরপুর টেস্ট। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ও ১৮৪ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।

সিরিজের দ্বিতীয় সেই টেস্টে স্বীকৃত কোনো পেসার ছাড়া মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকারের মিডিয়াম পেস আমলে না নিয়েও কথাটা বলা যায়। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সেটাও ছিল স্পিনবান্ধব উইকেট।

আগে ব্যাট করে ৫০৮ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। সেঞ্চুরি করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। এরপর বাংলাদেশকে আর ব্যাট করতে নামতে হয়নি।

প্রথম ইনিংসে ১১১ রানে অলআউট হয় সফরকারী দল। সেই ইনিংসে বল করেছিলেন বাংলাদেশের পাঁচ স্পিনার—সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, তাইজুল ইসলাম ও মাহমুদউল্লাহ।

দ্বিতীয় ইনিংসে ফলোঅন করতে নেমে খানিকটা ভালো ব্যাট করেছিল ক্রেগ ব্রাফেটের দল। ২১৩ রানে অলআউট হয় তারা। এই ইনিংসে সেই পাঁচ স্পিনারকে দিয়ে বল করান অধিনায়ক সাকিব।

বাংলাদেশের স্পিনাররা দুই ম্যাচ টেস্টের সেই সিরিজে ৪০ উইকেট নিয়েছিলেন। দুই টেস্টের সিরিজে সেবারই প্রথম প্রতিপক্ষের সব উইকেট নিয়েছিলেন স্পিনাররা। এ পথে নিজেদের আগের রেকর্ডই ভেঙেছিল বাংলাদেশ।

২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৮ উইকেট নিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্পিনাররা।