স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের হার ততক্ষণে পুরোনো খবর। বিশ্বকাপের শহর মাসকাটে গতকালের আলোচনা টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে। আজ ওমানকে হারালে আশা বেঁচে থাকবে। এরপর পরশু পাপুয়া নিউগিনি। দুটি ম্যাচে জেতার সঙ্গে রানরেটের হিসাবও করতে হতে পারে মাহমুদউল্লাহদের। মাসকাটের আনাচকানাচে থাকা প্রচুর ক্রিকেট অনুরাগী বাংলাদেশিদের সঙ্গে কয়েক প্রস্থ কুশল বিনিময়ের পরই শুরু হয় এসব প্রশ্ন।
কিন্তু পাকিস্তানি কেউ বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিশ্বকাপ সম্ভাবনা নিয়ে আগ্রহ দেখাবেন, এটা অপ্রত্যাশিতই ছিল। মাসকাটের রুহি রোডের এক পাকিস্তানি রেস্টুরেন্টের মালিক আমজাদ হোসেন সেই অপ্রত্যাশিত কাজই করলেন। আপ্যায়ন পর্ব শেষে যখন চায়ের আড্ডা চলছিল, তখন তিনিও এসে যোগ দিলেন আলোচনায়। আলোচনার বিষয়বস্তু ক্রিকেট বলেই আমজাদকে গ্রহণ করতে সমস্যা হলো না কারোরই।
এসেই উর্দুতে বলছিলেন, ‘আহা রে! স্কটল্যান্ডের সঙ্গে এটা কী করল বাংলাদেশ? আমার খুব খারাপ লেগেছে। আমি ভেবেছিলাম এখানে সব কটি ম্যাচই জিতবে বাংলাদেশ। তোমাদের দলটাকে আমার খুব পছন্দ। ওরা মনে হয় স্কটিশদের হালকাভাবে নিয়েছিল। এটা উচিত হয়নি। তা না হলে এমন খেলার কথা নয়।’
প্রথম ম্যাচের হারে বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপের যাত্রাপথে কোথায় কোথায় ভাঙন ধরল, সেটির হিসাবও বলে দিচ্ছিলেন তিনি। পাকিস্তানি হয়েও বাংলাদেশ দলের খেলার খবর রাখার কারণটাও অপ্রত্যাশিত ছিল, ‘বাংলাদেশই আমার পছন্দের দল। এরপর নিউজিল্যান্ডকে খুব ভালো লাগে।’
নিজ দেশ পাকিস্তানকে নাকি তাঁর খুব একটা পছন্দ নয়। রাজনীতিই নাকি পাকিস্তানের ক্রিকেটটা নষ্ট করছে, ‘আমাদের দিয়ে কিছু হবে না। সব জায়গায় রাজনীতি ঢুকে গেছে। এখন আর ভালো লাগে না। আগে সব ম্যাচ খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতাম। এখন আর টানে না।’
এবারের বিশ্বকাপেও তিনি পাকিস্তানের ভালো করার তেমন সম্ভাবনা দেখেন না। এরপর অল্পতে ঝরে পড়া পাকিস্তানি একঝাঁক সাবেক ক্রিকেটারের নাম নিয়ে আক্ষেপ করলেন আমজাদ। পাকিস্তানি নামগুলো বলতে বলতেই পছন্দের বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের নামও জুড়ে দিলেন তিনি।
তামিম ইকবালকে নাকি তাঁর খুব পছন্দ। পাকিস্তান সুপার লিগে নিয়মিত খেলেন বলেই তামিমের ভক্ত তিনি। মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহরও ভূয়সী প্রশংসা করলেন। দুজনের ক্রিকেট মাঠের আচার–আচরণ নাকি তাঁর মনে ধরে, ‘ভালো ক্রিকেটার হতে হলে ভালো মানুষও হতে হয়। এই দুজনকে দেখলে সেটাই মনে হয়। মাহমুদউল্লাহকে মাঠে কতই না শান্ত লাগে। দেখতেই ভালো লাগে।’
অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি বিন মুর্তজাও নাকি পাকিস্তানিদের কাছে বেশ সম্মানিত। কিন্তু সাংসদ হওয়ায় নাকি মাশরাফির প্রতি তাঁর ভালোবাসা কিছুটা কমে গেছে, ‘ক্রিকেটারকে যেভাবে মানুষ ভালোবাসবে, এমপিকে সেভাবে ভালোবাসবে না। এটাই স্বাভাবিক।’
আরেক তারকা সাকিব আল হাসানের নামটা নিতে না নিতেই মুখ কেমন যেন কালো হয়ে গেল আমজাদের। বড় ক্রিকেটার হলেও ক্রিকেট মাঠে সাকিবের আচার–আচরণ নাকি তাঁর পছন্দ নয়। আইসিসির নিষেধাজ্ঞা, মাঠে মেজাজ হারিয়ে স্টাম্প উপড়ে ফেলার ঘটনাগুলো মনে করিয়ে দিলেন সঙ্গে সঙ্গেই, ‘এসব না করলে সে আরও বড় ক্রিকেটার হতে পারত। এমন জায়গায় চলে যেত, যেখানে তাঁকে কেউই ধরতে পারত না।’
এ ছাড়া নতুন বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের প্রত্যেককেই নাকি তাঁর খুব পছন্দ। বাংলাদেশ প্রথম পর্বের বাকি দুই ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে গিয়ে বড় কিছু করে ফেলবে, এমনই প্রত্যাশা এই পাকিস্তানি ক্রিকেট–ভক্তের।