উইন্ডিজ সিরিজেই আগের অবস্থায় ফিরবে সাকিব

বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের পর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ - ঘরোয়া ক্রিকেটে টানা দুই শিরোপাই জিতেছেন মাহমুদউল্লাহ।ছবি: প্রথম আলো

করোনার বিরতির পর যে দুটি টুর্নামেন্ট দিয়ে ক্রিকেট ফিরেছে বাংলাদেশে, দুটিতেই চ্যাম্পিয়ন মাহমুদউল্লাহর দল। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের মতো বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতেও মাহমুদউল্লাহ সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েই শিরোপা জিতিয়েছেন জেমকন খুলনাকে। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ জানালেন টানা দুটি টুর্নামেন্ট জয়ের অভিজ্ঞতার কথা—

প্রশ্ন: লম্বা বিরতির পর টানা দুটো টুর্নামেন্ট জয়। অধিনায়ক হিসেবে এটা কতটা তৃপ্তির?

মাহমুদউল্লাহ: চ্যাম্পিয়ন হলে যে কারোরই ভালো লাগে। সব টুর্নামেন্টে একটা দলের চূড়ান্ত লক্ষ্য থাকে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। ওটা অর্জন করতে পারলে ভালো লাগবেই। সবচেয়ে বড় কথা, গত মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে আমাদের খেলাধুলা বন্ধ ছিল। এরপর ধীরে ধীরে আমরা মাঠে ফিরেছি। দলীয় অনুশীলনের পর প্রেসিডেন্টস কাপ খেললাম। খেলার স্বাদটা আমরা মিস করছিলাম। করোনার সময়ে সবারই কমবেশি পারিবারিক, আর্থিক ও অন্য অনেক সমস্যা ছিল। সেগুলো কাটিয়ে আমরা খেলায় ফিরতে পেরেছি, যেটা আমাদের কাজের জায়গা। এটাই স্বস্তির বিষয়।

প্রশ্ন: দুটো টুর্নামেন্টেই আপনার দলের ফাইনাল খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপনারাই চ্যাম্পিয়ন...

মাহমুদউল্লাহ: প্রেসিডেন্টস কাপে আমরা পিছিয়ে ছিলাম। আমাদের ব্যাগও প্রায় গোছানো হয়ে গিয়েছিল (হাসি)! ভাগ্য ভালো, পরে ফাইনালে উঠলাম এবং ফাইনালেই টুর্নামেন্টে নিজেদের সেরা খেলাটা খেললাম। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতে জেমকন খুলনা দলটা খুব ভালো ছিল। সব বিভাগেই খুব ভারসাম্যপূর্ণ ছিল। ঘরোয়া ক্রিকেটে কোনো দলে নামীদামি ক্রিকেটার থাকলে তাদের ওপর প্রত্যাশা যেমন বেশি থাকে, দায়িত্বও বেশি থাকে। আমরা প্লে-অফ নিশ্চিত করি দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে। এরপর যে ম্যাচটা (গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের বিপক্ষে প্রথম কোয়ালিফায়ার) খেলি, সেটিতে টুর্নামেন্টে নিজেদের সেরা খেলাটাই খেলি। আমাদের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান অনেক বছর ধরেই বিপিএলে দল করছে। এর আগে তাদের দলকে নেতৃত্ব দিয়ে শেষ চারে উঠেছি। কিন্তু যে লক্ষ্যটা ছিল চ্যাম্পিয়নশিপ, সেটা কেন যেন হচ্ছিল না। অবশেষে খুলনা শিরোপা জিতেছে। এ কারণে এবার একটু বেশি খুশি হয়েছি।

অনুশীলনে মাহমুদউল্লাহ।
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন: মঞ্চ যত বড় হয়েছে, ততই আপনাদের পারফরম্যান্স উজ্জ্বল হয়েছে। এটি কি অভিজ্ঞতার কারণেই?

মাহমুদউল্লাহ: হতে পারে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিজ্ঞতা অনেক কাজে দেয়। চাপ কিংবা ম্যাচ বদলে যাওয়া পরিস্থিতি সামলাতে অভিজ্ঞতা অনেক সহায়তা করে। আমাদের দলে অনেক বড় বড় নাম ছিল। সাকিব, ইমরুল, বিজয় (এনামুল), পরে মাশরাফি ভাইও এলেন। বোলিংয়ে আল আমিন, শুভাগত হোম, নাজমুল—সবাই অনেক দিন ধরে খেলছে। তরুণদের মধ্যে শামীম-রিশাদ ছিল। গ্রুপ পর্বে চিন্তা ছিল, কয়েকটা ম্যাচ খুব ভালো খেলে যেন শেষ চারে যেতে পারি। এরপর বাকিটা দেখা যাবে। গ্রুপ পর্বে আট ম্যাচের সব কটি জিতলাম। তবে জানতাম কোয়ালিফায়ার বা নকআউট পর্বে সেরা ক্রিকেটটা খেলতে না পারলে চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না। গ্রুপ পর্বে তাই লক্ষ্য ঠিক করি অন্তত সেরা দুইয়ে (পয়েন্ট তালিকায়) যেন থাকতে পারি, যাতে কোয়ালিফায়ারে এক ম্যাচ হারলেও সুযোগ থাকে। কিন্তু আমরা প্রথম কোয়ালিফায়ারেই জিতেছি, চ্যাম্পিয়নও হয়েছি।

প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে নিজের সেরা ইনিংসটা খেললেন, সেটিও আবার ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে...

মাহমুদউল্লাহ: (হেসে) আলহামদুলিল্লাহ, ইনিংসটা ফাইনালে খেলতে পেরেছি এবং সেটা দলের কাজে এসেছে। টি-টোয়েন্টিতে ছোট-বড় পারফরম্যান্স যদি নির্দিষ্ট দিনে দলের কাজে দেয়, ওটাই যথেষ্ট। মূল সমস্যাটা হয়ে গিয়েছিল, যখন আরিফুল বা দাদাকে (শুভাগত) নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করছিলাম, বড় হওয়ার আগে ভেঙে যাচ্ছিল। এটা চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছিল। তবে আমার লক্ষ্য ছিল অন্তত ১৫০-এর বেশি স্কোর গড়া, তাহলে ওদের জন্য এটা তাড়া করা কঠিন হয়ে যাবে।

প্রশ্ন: সাকিব-মাশরাফিরা আপনার কাজ কতটা সহজ করে দিয়েছিলেন?

মাহমুদউল্লাহ: এমন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় সঙ্গে থাকলে সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সময় সহজ হয়। অধিনায়কত্ব করতে গেলে অনেক সময় সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা বা সংশয় কাজ করে। ওই সময় সাকিব-মাশরাফি-ইমরুলের মতো অভিজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিলে কাজটা সহজ হয়। আপনি এক দৃষ্টিকোণ থেকে যে জিনিস দেখছেন, আপনার অভিজ্ঞ সতীর্থ একই বিষয় ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারেন।

একসঙ্গে সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ।
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন: সাকিবের পারফরম্যান্স প্রত্যাশামতো হয়নি। পুরোনো অবস্থায় ফিরতে তাঁর কোথায় কোথায় উন্নতি করতে হবে বলে মনে করেন?

মাহমুদউল্লাহ: সন্দেহ নেই সাকিব বিশ্বমানের খেলোয়াড়। সে জানে তাকে কখন কী করতে হবে, কতটুকু করতে হবে। এ কারণেই সে র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ খেলোয়াড়ের জায়গাটা ১২-১৩ বছর ধরে রেখেছে। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি চলার সময় সে রাত সাড়ে ১২টায়ও ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে গেছে। ম্যাচের দিন সকালে রানিং করেছে, সুইমিং করেছে। ব্যাটিংয়ে বাড়তি সময় দিয়েছে। ঐচ্ছিক অনুশীলনে নিজ আগ্রহে মাঠে গেছে। টানা ২-৩ ম্যাচ খেলে আমরা অনেকে বিশ্রাম নিয়েছি, সে নেয়নি। নেটে দেড় ঘণ্টা ব্যাটিংয়ের পর বোলিং করেছে। ছন্দে ফিরতে সব চেষ্টাই করছে। আমি নিশ্চিত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেই সে তার আগের অবস্থায় ফিরবে।

প্রশ্ন: গত চার মাস আপনারা ক্রিকেট খেললেন জৈব সুরক্ষাবলয়ে থেকে। সামনে আরও অনেক দিন হয়তো এই ব্যবস্থায় খেলা চালিয়ে যেতে হবে। তা এই কঠিন জীবনে কতটা অভ্যস্ত হতে পারলেন?

মাহমুদউল্লাহ: এখন এটা বাধ্যতামূলক, এ ছাড়া উপায় নেই। এটা মেনে নিতেই হবে। এর সঙ্গে দলের সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা জড়িয়ে। এর দুটো দিকই আছে। ইতিবাচক দিকটাই আগে বলি। যেহেতু নির্দিষ্ট কিছু জায়গার বাইরে যাওয়ার উপায় নেই, সতীর্থদের সঙ্গে অনেক বেশি সময় ব্যয় করার সুযোগ থাকে। তাতে সতীর্থদের দৃষ্টিভঙ্গি আরও ভালো বোঝা যায়, অনেক কিছু জানা যায়। স্বাভাবিক সময়ে হয়তো একটু বিরতি পেলে পরিবারের কাছে ছুটে যেতাম। এখন সেই সময়টা সতীর্থদের সঙ্গে কাটছে। আবার কখনো কখনো একঘেয়েমি পেয়ে বসতে পারে। সেটা যেন না হয়, সে জন্য বিকল্প উপায় বের করতে হবে। একটু পড়াশোনা করলেন, সিনেমা দেখলেন কিংবা এমন কিছুতে ব্যস্ত থাকলেন, যাতে সময়টা একঘেয়ে না হয়ে ওঠে। এতে ক্রিকেটেও মনোযোগ ঠিক থাকবে।

প্রশ্ন: ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ দিয়ে জানুয়ারিতে ১০ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে যাচ্ছেন। লম্বা বিরতির পর কাজটা সহজ হবে না নিশ্চয়ই। চ্যালেঞ্জটা কীভাবে নিচ্ছেন?

মাহমুদউল্লাহ: সব ঠিক থাকলে এই সিরিজ দিয়েই আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে যাচ্ছি। সেটিও আবার ঘরের মাঠে। সিরিজটা ভালো হবে আশা করি। তবে মাথায় রাখতে হবে, আমরা ১০ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরব। এটা ঠিক, আমরা ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে নিজেদের প্রস্তুত করেছি। তবে ঘরোয়া আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মধ্যে পার্থক্য আছে। ফিটনেসের দিক দিয়ে আমরা সবাই খুব ভালো অবস্থানে আছি। এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে মনস্তাত্ত্বিক বাধাগুলো থাকে, সেগুলো যেন দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারি।