উল্টোপথে হাঁটে আইসিসি!

আইসিসির নতুন সিদ্ধান্ত আয়ারল্যান্ডের মতো উদীয়মান ক্রিকেট শক্তিদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে ছবি: এএফপি
আইসিসির নতুন সিদ্ধান্ত আয়ারল্যান্ডের মতো উদীয়মান ক্রিকেট শক্তিদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে ছবি: এএফপি

উল্টো পায়ে হাঁটা বোধ হয় একেই বলে! ক্রিকেটের বিশ্ব সংস্থা আইসিসির কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার মতো লোকের অভাব নেই এই পৃথিবীতে। কিন্তু এটা বোধহয় কেউ ভাবেননি যে বিশ্বকাপ আসরটাকে এরা সত্যি সত্যিই দশ দলের প্রতিযোগিতায় পরিণত করবে! কিন্তু আদতে হতে যাচ্ছে এটাই। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় পরের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা ১৪ থেকে নামিয়ে নিয়ে আনা হচ্ছে ১০-এ।
আইসিসি যেন এমন সিদ্ধান্ত না নেয়, সে ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন অনেকেই। শচীন টেন্ডুলকার পর্যন্ত ক্রিকেটের বিশ্ব সংস্থার এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। বলেছিলেন, বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দল কমিয়ে নিয়ে আনার অর্থ হচ্ছে ক্রিকেটের বিশ্বায়নকে অস্বীকার করা। কেবল টেন্ডুলকারই নন, রাহুল দ্রাবিড় থেকে শুরু করে অনেক ক্রিকেট গ্রেটই আইসিসিকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ অবধি সবার অনুরোধ-উপরোধকে উপেক্ষা করে আইসিসি বিশ্বকাপে দল কমানোর ওই নেতিবাচক সিদ্ধান্তেই অনড় থাকতে যাচ্ছে।

বিশ্বকাপের দলসংখ্যা ১০-এ নামিয়ে নিয়ে আনায় শঙ্কার মধ্যে পড়েছে আইসিসির সহযোগী সদস্য রাষ্ট্রগুলো। আইসিসির এই সিদ্ধান্তে ভবিষ্যতে বিশ্বকাপ আসরে ক্রিকেটের উদীয়মান দেশগুলোর অংশগ্রহণ রীতিমতো অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। নতুন নিয়মানুযায়ী, ২০১৯ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সুযোগ পাবে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও র‍্যাঙ্কিংয়ের অন্য সাতটি শীর্ষ দেশ (ইংল্যান্ড র‍্যাঙ্কিংয়ে প্রথম আটের মধ্যে থাকবে, এটা ধরে নিয়েই)। বাকি দুটি স্থানের জন্য র‍্যাঙ্কিংয়ের আট ও নয় নম্বর দেশের সঙ্গে বাছাইপর্ব খেলতে হবে আইসিসির সহযোগী দেশগুলোকে। সহযোগী দেশগুলোর অভিযোগ, আইসিসির এই সিদ্ধান্ত বিশ্বকাপকে দশ টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে আবদ্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রকারান্তরে আইসিসির এই সিদ্ধান্ত ক্রিকেটের বিশ্ব আসর থেকে সহযোগী দেশগুলোকে কৌশলে বের করে দেওয়ারই শামিল।

এবারের বিশ্বকাপে অল্পের জন্য কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে পারেনি আয়ারল্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়েকে হারিয়েও শেষ আটে পা রাখতে না পারাটা তাদের জন্য ছিল দুর্ভাগ্যজনকই। আইরিশ অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড রীতিমতো ফুঁসছেন আইসিসির এই সিদ্ধান্তে। তিনি বলেছেন, ‘এর চেয়ে আইসিসি বলে দিক ক্রিকেটটা খেলবে টেস্ট খেলুড়ে দশটি দেশ। আর কেউ নয়, তাতেই তো চুকে-বুকে যায়! তাহলে পৃথিবীর আর কারোরই ক্রিকেট নিয়ে মাথাব্যথা থাকবে না।’

পোর্টারফিল্ডের খুব ইচ্ছা, তিনি আইসিসির ‘ভিশন’টা সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেবেন। তিনি আইসিসির কর্তাদের কাছে জানতে চাইবেন, ক্রিকেট নিয়ে তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাটা। আদৌ তাঁরা ক্রিকেটের বিশ্বায়ন চান কিনা! নাকি কুক্ষিগত করে রাখতে চান হাতে গোনা কয়েকটি দেশের মধ্যে।

আইসিসির মহা ক্ষমতাধর চেয়ারম্যান এর শ্রীনিবাসন অবশ্য মনে করেন, বিশ্বকাপে দল কমিয়ে নিয়ে আসা খেলা হিসেবে ক্রিকেটকে কোনো সমস্যায় ফেলবে। তিনি দল কমিয়ে নিয়ে আসার ব্যাপারটি সহযোগী দেশগুলোকে বঞ্চিত করার ব্যাপার হিসেবেও দেখেন না। তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বকাপ বাছাইপর্বটা হবে র‍্যাঙ্কিংয়ের শেষ দুই টেস্ট খেলুড়ে দেশ ও ছয় সহযোগী সদস্য দেশের মধ্যে। প্রতিটি অংশগ্রহণকারী দলেরই সুযোগ থাকছে বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করার। তিনি দাবি করেছেন, এবারের বিশ্বকাপে সহযোগী দেশগুলোর ভালো পারফরম্যান্সের মূলে রয়েছে আইসিসির সুপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা।

শ্রীনিবাসন যত যা-ই বলুন, বিশ্বকাপে দল কমিয়ে নিয়ে আনার ব্যাপারটি আইসিসির উল্টো পথ যাত্রাই। ১৯৯২ সালে টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর সঙ্গে আইসিসি ট্রফির শীর্ষ তিন দলকে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ করে দিয়েছিল আইসিসি। ক্রিকেটের বিশ্বায়নের পথে সেটা ছিল দুর্দান্ত এক উদ্যোগ। সেই সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতিতেই বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছিল কেনিয়া, হল্যান্ড, আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো। সেই উদ্যোগের ফলেই বিশ্বকাপে খেলে নিজেদের প্রমাণ করে টেস্ট খেলুড়ে দশম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আবির্ভাব। ১৯৯৬ সাল থেকে প্রতিটি বিশ্বকাপেই কোনো না কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশকে হারিয়ে চমকে দিয়েছে সহযোগী সদস্যগুলো। তারপরেও কেন আইসিসির এই উল্টোযাত্রা? কেন? কার স্বার্থে? তথ্যসূত্র: পিটিআই।