এক আত্মা একই ব্যথা মেসি–সুয়ারেজের

লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেজ—যখন বার্সেলোনায় ছিলেন দুজন।
এএফপি ফাইল ছবি

দুই ধারি তলোয়ারের মতো লা লিগায় প্রতিপক্ষ দলের রক্ষণকে তছনছ করছিলেন দুজন। তাঁরা ‘দুজন’ হয়েছিলেন ত্রিফলা ভেঙে যাওয়ায়—নেইমার ২০১৭ সালে বার্সেলোনা ছাড়ার পর। তারপর থেকে মেসি-সুয়ারেজ মিলে টানছিলেন বার্সার আক্রমণভাগ। ভেঙে যায় সেটিও। লুইস সুয়ারেজকে একরকম ‘গলাধাক্কা’ দিয়েই বের করে দিয়েছে বার্সা। এখন পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক হলেও বনিবনা হচ্ছিল না মেসির সঙ্গেও। দুই বন্ধুর মনের ব্যথাটা তাই একইরকম।

ব্যথা? তা নয় তো কী! বার্সেলোনা বোর্ড ও সভাপতির ওপর মেসির অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। গত চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ছিটকে পড়ার পর ক্ষোভ উগরে বার্সা ছাড়তে চেয়েছিলেন মেসি। অনেক জল ঘোলা হওয়ার পর সিদ্ধান্তটা পাল্টান আর্জেন্টাইন তারকা। সুয়ারেজকে সঙ্গে নিয়ে চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন বার্সার শিরোপা অভিযান। কিন্তু কাতালান ক্লাবটির পরিচালক-পর্ষদ ও নতুন কোচ রোনাল্ড কোমান তা হতে দেননি। কোমান এসে সোজাসাপ্টাই বলে দেন তাঁর পরিকল্পনায় নেই সুয়ারেজ। এরপর আর বন্ধুর সঙ্গে একই ক্লাবে থাকা হয়নি মেসির। ঠিকানা পাল্টে সুয়ারেজ এখন আতলেটিকো মাদ্রিদের। বার্সাকে নিয়ে তাই সাম্প্রতিক সময়ে দুজনের অভিজ্ঞতা মোটামুটি একইরকম—কষ্টকর।

মেসি পরে সবকিছু স্বাভাবিক করে নেওয়ার ঘোষণা দিলেও সুয়ারেজকে কি তাঁর মনে পড়ে না? সুয়ারেজেরও কি মেসিকে মনে পড়ে না? উরুগুয়ে তারকার জন্য মেসির মন পোড়ে বলেই তাঁর বিদায়ের সময় ইনস্টাগ্রামে বার্সাকে ধুয়ে দিয়েছিলেন মেসি। আজ ২০২২ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে চিলিকে হারানোর পর এ নিয়েই কথা বললেন উরুগুয়ে স্ট্রাইকার সুয়ারেজ। বার্সা ছাড়ার পর মেসির কাছ থেকে এমন কথা শোনার প্রত্যাশাই করেছিলেন তিনি, ‘মেসির কথায় বিস্মিত হইনি, তাকে আমি খুব ভালো করেই জানি। তার ও আমার কষ্ট একইরকম।’

বার্সার ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা সুয়ারেজ সোজাসাপ্টাই বলেন, ‘তার (মেসির) মনে হয়েছে ফর্মের কারণে ওরা আমাকে লাথি মেরে বের করেছে। অন্যভাবেও (ক্লাব) এটা করতে পারত। ছয়টা বছর (বার্সায়) থেকেছি, এতে তারও খারাপ লেগেছে। সে আমার বন্ধু এবং এটা জানে দুজন কী পরিমাণ ভোগান্তির মধ্যে ছিলাম। পরিবার আমাকে সুখী দেখতে চেয়েছে। বার্সেলোনায় অদ্ভুত কিছু ব্যাপার ছিল—অনেকটাই এমন আমাকে আলাদা রাখা হতো কারণ ম্যাচের জন্য বিবেচনা করা হতো না।’

আতলেতিকো তারকার ভাষ্য, ‘এ বিষয়গুলোর জন্য সময়টা খারাপ কাটছিল। পরিবার আমার মনের কষ্টটা টের পাচ্ছিল। এ কারণে তারা আমাকে সুযোগটা লুফে নিতে উৎসাহ জোগায়। আতলেতিকোর প্রস্তাব পাওয়ার পর এক মুহূর্তও দ্বিধা করিনি। হ্যাঁ, আমাকে অনেক কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে তবে আতলেটিকোতে সুখেই আছি।’ গত মাসে মাদ্রিদের ক্লাবটির হয়ে অভিষেক ম্যাচে জোড়া গোলের পাশাপাশি একটি গোলও করান সুয়ারেজ।

সুয়ারেজের বিদায়ের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুখ খুলেছিলেন মেসি। ইনস্টাগ্রামে উগরে দিয়েছিলেন আবেগ, ‘বেশ কয়েক দিন ধরেই আভাস পাচ্ছিলাম এমন কিছু হতে যাচ্ছে, তবু আজ যখন লকার রুমে ঢুকলাম ব্যাপারটার গুরুত্ব পুরোপুরি টের পেলাম। তোমার সঙ্গে প্রতিদিন কাটাতে না পারা কী কঠিনই না হবে! সেটা মাঠে যেমন, মাঠের বাইরেও। তোমার অভাব খুব ভালোভাবে টের পাব আমি। কতগুলো বছর, কত শত মাতে (দক্ষিণ আমেরিকান পানীয়), কত লাঞ্চ, ডিনারের স্মৃতি...প্রতিটি দিন একসঙ্গে কাটানো সময়ের অনেক স্মৃতি যা ভোলা যাবে না কখনো।’

ক্লাবের ফর্ম জাতীয় দলেও টেনেছেন সুয়ারেজ।
ছবি: রয়টার্স

প্রিয় বন্ধুর বিদায়ের সময়টায়ও বার্সেলোনা সভাপতি বার্তোমেউয়ের বোর্ড যা করেছে, সেটা মানতে পারেননি মেসি। ইনস্টাগ্রামে সেই পোস্টে লিখেছিলেন, ‘তোমাকে অন্য কোনো জার্সিতে দেখাটা খুব অদ্ভুত ব্যাপার হবে, আর তোমার মুখোমুখি হওয়ার ব্যাপারটা তো আরও বেশি। ক্লাবের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবেই বিদায়টা প্রাপ্য ছিল তোমার, ব্যক্তিগত ও দলীয় শিরোপা জয়ের আনন্দের মধ্যে। যেভাবে তোমাকে ক্লাব থেকে বের করে দিল ওরা, এটা তোমার প্রাপ্য ছিল না কোনোভাবেই। কিন্তু সত্যিটা হলো, সাম্প্রতিক সময়ে (ক্লাবে) যা হচ্ছে, তাতে আমি কোনো কিছুতেই আর অবাক হই না।’