‘এক দেশ দুই জাতীয় দল’ নীতিতে ভারতীয় ক্রিকেট?

ভারতীয় ক্রিকেট দুই জাতীয় দল নীতিতে যাচ্ছে?ছবি: রয়টার্স

একই সময়ে দুটি দল একই নামে খেলবে দুটি ভিন্ন জায়গায়? এমন কিছু সম্ভব নাকি! ক্রিকেটের ইতিহাস বলছে, একই সময়ে দুটি স্থানে কোনো দেশের দুটি দলের জাতীয় দল নামেই খেলাটা খুব অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। এই তো বছর কয়েক আগেই অস্ট্রেলিয়া এক দিনের ব্যবধানে পৃথিবীর দুই প্রান্তে দুটি ভিন্ন সংস্করণে মাঠে নেমেছিল। ১৯৩০ সালের ১১ ও ১২ জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভিন্ন দুটি টেস্ট খেলেছিল ইংল্যান্ড। অতটা বাড়াবাড়ি না হলেও কাছাকাছি কিছুরই পুনরাবৃত্তি ঘটাতে যাচ্ছে ভারত। ভারতের দুটি ক্রিকেট দলকে দুই জায়গায় খেলতে দেখা যাবে আগামী আগস্ট মাসে।

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী জানিয়ে দিয়েছেন, আগস্টে শ্রীলঙ্কা সফরে যাবে ভারত। প্রশ্ন জেগেছিল, কীভাবে? ঠিক একই সময়ই তো ইংল্যান্ডের মাঠে টেস্ট সিরিজের জন্য থাকার কথা বিরাট কোহলি–রোহিত শর্মাদের। বিসিসিআই সভাপতি সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাপারটার মীমাংসা করে দিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার সীমিত ওভারের সিরিজে ভারতের ভিন্ন একটি দল খেলবে, যে দলে টেস্ট দলের নিয়মিত খেলোয়াড়েরা তো থাকবেনই না, বদলে যাবে কোচ ও অন্যান্য সাপোর্ট স্টাফও। এরই মধ্যে খবরে প্রকাশ, শ্রীলঙ্কা সফরে ভারতের প্রধান কোচের দায়িত্ব নাকি নিতে যাচ্ছেন রাহুল দ্রাবিড়। এমনকি শ্রীলঙ্কায় বদলে যাবে বোলিং কোচ এবং ব্যাটিং কোচ। মোট কথা, সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি জাতীয় দল নিয়েই শ্রীলঙ্কায় পা রাখবে ভারত।

এর পেছনে একটা ব্যবসায়িক দিকও থাকছে। করোনা মহামারির সময়টা খেলাধুলার জন্য খুবই মন্দা। এই তো কিছুদিন আগেই আইপিএল স্থগিত হয়ে গেল করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার কারণে। গত বছর করোনার কারণে মার্চ থেকে দীর্ঘদিন যাবতীয় ক্রিকেট বন্ধ ছিল ভারতে। সেপ্টেম্বরে বাধ্য হয়েই আইপিএল আয়োজন করতে হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। কিন্তু করোনার এ সময়ে যে আর্থিক ক্ষতি, সেটি এখনো পুষিয়ে উঠতে পারেনি তারা। এবার আইপিএল মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই আর্থিক ক্ষতির ধাক্কা আরও বেশি মনে হচ্ছে বিসিসিআইয়ের কাছে। হিন্দুস্তান টাইমস জানাচ্ছে, করোনার এ সময় আর্থিক ক্ষতি কিছুটা দূর করতেই এই ‘এক দেশ দুই জাতীয় দল’ তত্ত্ব ব্যবহার করার চেষ্টা করছে ভারত। এর মাধ্যমে সিরিজের সংখ্যা বাড়ানো যাবে। লাভের পরিমাণও এতে কম হবে না।

করোনার পরও যদি এই তত্ত্ব এগিয়ে নেওয়া যায়, ক্রিকেট খেলুড়ে অন্য দেশগুলো যদি এ তত্ত্ব গ্রহণ করে, তাহলে গোটা ক্রিকেট দুনিয়াতেই খেলার পরিমাণ অনেকটাই বাড়ানো সম্ভব হবে। তবে ‘এক দেশ দুই জাতীয় দল’ তত্ত্বের কিছু নেতিবাচক দিকও আছে। ভারত যদি একই সময়ে দুটি ভিন্ন জায়গায় খেলে, তাহলে লজিস্টিকসের দিক দিয়ে কিছুটা বেকায়দায় পড়ে যেতে পারে বিসিসিআই। তবে এতে ব্যবসাটা ভালো হবে বলেই মনে করেন বিসিসিআই কর্তারা।

ভারত অবশ্য দ্বিতীয়বারের মতো একই সময় দুটি জাতীয় দল মাঠে নামাবে। ১৯৯৮ সালে কমনওয়েলথ গেমসে প্রথমবারের মতো (এখনো পর্যন্ত শেষবার) ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। সে সময় কমনওয়েলথ গেমসে একটি আলাদা দল পাঠিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। ঠিক একই সময় কানাডায় সাহারা কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলছিলেন আজহারউদ্দিন–টেন্ডুলকাররা।