এক ম্যাচেই কোহলি, ডি ভিলিয়ার্স, ম্যাক্সওয়েলকে তুলে নেওয়া কে এই হরপ্রীত?

ডি ভিলিয়ার্সকে ফেরানোর পর হরপ্রীত ব্রারের উল্লাস।ছবি: টুইটার

শৈশবে ব্যাটসম্যান হতে চেয়েছিলেন। স্পিনের প্রতি ভালোবাসাটা পরে জন্মেছে। পাঞ্জাবে অনূর্ধ্ব-১৯ জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় ২০১৪ সালে এক ইনিংসে একাই নিয়েছিলেন ১০ উইকেট।

তারও দুই বছর আগে অনূর্ধ্ব-২২ দলে দলের এক ম্যাচে ইনিংসে নেন ৯ উইকেট। হরপ্রীত ব্রারের বাঁ হাতের আঙুলে প্রতিভার ঝলকটা তাই আগেই দেখা গিয়েছিল। তবু আইপিএল পর্যন্ত উঠে আসতে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়েছে তাঁকে।

আইপিএলে কাল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে পাঞ্জাব কিংসের ৩৪ রানের জয়ে দারুণ খেলেছেন হরপ্রীত। এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে মৌসুমে নিজের প্রথম ম্যাচেই ম্যাচসেরা—১৭ বলে ২৫ রানের পর ১৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট।

অথচ পাঞ্জাব কিংসের এই বাঁহাতি স্পিনারের আইপিএল খেলাই হতো না। তাঁর বাবা আছেন পাঞ্জাব পুলিশে। আইপিএলে কপাল খুলছিল না হরপ্রীতের। ঘরোয়ায় জুনিয়র দলগুলোয় ভালো করেও পাঞ্জাব দলে নিয়মিত হতে পারছিলেন না।

সাত বছরে চারবার ট্রায়াল দেওয়ার পর ২০১৯ সালে ২০ লাখ রুপিতে তাঁকে কেনে পাঞ্জাব। এর আগে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসেও ট্রায়াল দিয়েছেন দুই বছর। অপেক্ষার সে সময়ে হরপ্রীতের সামনে ক্রিকেটের বাইরে দুটি রাস্তা খোলা ছিল—বাবার মতো পুলিশে যোগ দাও, নয় তো পড়াশোনার ভিসা নিয়ে কানাডা যাও।

পাঞ্জাবেরই সাবেক ক্রিকেটার গুরকিরাত সিং মোহালি জেলা দলে খেলার সুযোগ করে দেন হরপ্রীতকে। সেখান থেকে পাঞ্জাব সিনিয়র দলে উঠে আসার পর হরপ্রীত আজ এখানে—তাঁর ৪ ওভারের স্পেলে আউট বিরাট কোহলি, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও এবি ডি ভিলিয়ার্স!

ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে এখনো প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি হরপ্রীত। দেশটির ঘরোয়া ক্রিকেট কত শক্তিশালী, তা এখান থেকে কিছুটা আন্দাজ করে নেওয়া যায়। নিজের প্রথম দুই ওভারে ১৭ রান দেন তিনি। কোহলি একটি ছক্কা ও চার মারেন। কিন্তু তাতে দমে যাননি হরপ্রীত।

তিনি জানতেন ফেরার সুযোগ পাবেন, ‘কোহলির কাছে মার খাওয়াটা পাত্তা দিইনি, কারণ বোলার হিসেবে ফেরার সুযোগ পাব জানতাম। আইপিএলে আমার প্রথম উইকেট ছিল কোহলির। এটা ছিল বিশেষ কিছু।’

নিজের তৃতীয় ওভারে ফিরে প্রথম দুই বলেই কোহলি ও ম্যাক্সওয়েলকে তুলে নেন হরপ্রীত। ওই ওভারটা ছিল উইকেট মেডেন। নিজের পরের ওভারের প্রথম বলে ডি ভিলিয়ার্সকে তুলে নেন তিনি। বেঙ্গালুরুর মিডলঅর্ডার ভেঙে যায় এতেই। হরপ্রীতিও পেয়ে যান স্বপ্নের মতো ৩টি উইকেট!

শহরের দেয়ালে এক ক্রিকেট একাডেমির বিজ্ঞাপন দেখে ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলেন হরপ্রীত। মাকে গিয়ে কথাটা বলার পর জবাব এসেছিল, ‘ইচ্ছা করলে হতে পারো, কিন্তু হৃদয় উজাড় করে চেষ্টা করতে হবে।’

মায়ের এভাবে বলার কারণটা হরপ্রীতের তখন মোটামুটি বোধগম্য। তাঁর পরিবারে অন্য ভাইয়েরা ক্রিকেটার হওয়ার চেষ্টা করেও ‘আর্থিক সমস্যা’র কারণে পারেনি। হরপ্রীত হৃদয় উজাড় করে চেষ্টা করেছিলেন বলেই তো তাঁর হাতে ধরা দিলেন কোহলি, ম্যাক্সওয়েল ও ডি ভিলিয়ার্স!