এক শ হতে আর এক বাকি বাংলাদেশের

৯৯তম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্ট অভিষেক হলো মাহমুদুল হাসানেরফাইল ছবি: প্রথম আলো

অধিনায়ক মুমিনুল হক ইঙ্গিতে যা বলেছিলেন সেটাই সত্য হলো। ডানহাতি-বাঁহাতি সমন্বয়ের জন্য নাজমুল হোসেনকে ইনিংস উদ্বোধনের দায়িত্ব দেয়নি বাংলাদেশ দল। ডানহাতে ব্যাট করতে জানেন আর সে সঙ্গে ইনিংসের ওপরের দিকে খেলেন, এ বিবেচনায় ঢাকা টেস্টে অভিষেক করিয়ে দেওয়া হলো মাহমুদুল হাসানকে। জয় ডাকনামের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী ব্যাটসম্যান কঠিন এ পরীক্ষা জয় করতে পারলেই হয় এখন।

গত টেস্টেই অভিষিক্ত হয়েছিলেন ইয়াসির আলী। বাংলাদেশের ৯৮তম টেস্ট খেলোয়াড় দ্বিতীয় ইনিংসে মাথায় আঘাত পাওয়ার আগে ভালো ব্যাট করছিলেন। তবে দ্বিতীয় টেস্টে সাকিব আল হাসান ফেরায় তাঁকে বসিয়ে রাখা হয়েছে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে। ওদিকে সাইফ হাসানের অসুস্থতা ও টিম ম্যানেজমেন্টের ‘ম্যাচ আপ’-তত্ত্ব মিলিয়ে অভিষেক হয়ে গেল মাহমুদুলের। বাংলাদেশের ৯৯তম টেস্ট খেলোয়াড় এখন মাহমুদুল।

এক ম্যাচ খেলেই দল থেকে ছিটকে গেলেন ইয়াসির
ফাইল ছবি

টেস্ট ক্রিকেটে ২১ বছর হলো বাংলাদেশের। এ ২১ বছরে ১২৬টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ১২৬ টেস্ট খেলতেই বাংলাদেশ ৯৯ জন ক্রিকেটারকে টেস্ট টুপি দিয়েছে। এ ৯৯ জনের মধ্যে এখনো ক্যারিয়ারের পর্দা নামাননি ৩৬ জন (মোহাম্মদ আশরাফুল তাঁদের একজন)। অর্থাৎ কারও ক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব মনে হলেও, দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেই হোক বা নির্বাচকদের কোনো তত্ত্বে টিক চিহ্ন দিয়ে, এ ৩৬ জনের পক্ষে এখনো নিজেদের টেস্ট ম্যাচের সংখ্যা বাড়িয়ে নেওয়া সম্ভব, বাকি ৬৩ জনের সে সুযোগ নেই।

২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন ১১ জন। তাঁদের মধ্যে বিকাশ রঞ্জন দাসের (মাহমুদুর রহমানের) ক্যারিয়ার ওখানেই থমকে গেছে। ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েই ইতি টানা এই বাঁহাতি পেসারের মতোই বাংলাদেশের হয়ে মাত্র একটি টেস্ট খেলেছেন আরও ১১ জন। তাঁদের মধ্যে অবশ্য ইয়াসির আলী, শরিফুল ইসলাম ও মাহমুদুল হাসানের ক্যারিয়ার মাত্র শুরু হলো। দুই বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল ইসলাম বা নাজমুল ইসলামও টেস্ট খেলার আশা জিইয়ে রাখতে পারেন, বাকি সাতজনের ক্ষেত্রে সেটা বলার সুযোগ নেই।

শ্রীলঙ্কায় এক টেস্ট খেলেছেন শরীফুল
ফাইল ছবি

দুই টেস্ট খেলেই থেমে গেছেন তিনজন। তাঁদের মধ্যে আরিফুল হকের এখনো কাগজে-কলমে সম্ভাবনা বেঁচে রয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে তিন সংখ্যাটাই সবচেয়ে বেশি ক্রিকেটারদের জন্য ‘অপয়া’ হয়ে আছে। ঢাকা টেস্টে খেলা খালেদ আহমেদসহ মোট ১১ জন ৩টি টেস্ট খেলেছেন। তাঁদের মধ্যে খালেদ ছাড়া মোসাদ্দেক হোসেনও চাইলে টেস্ট খেলার আশা দেখতে পারেন, বাদবাকিদের সে সম্ভাবনা নেই।

বাংলাদেশের হয়ে ১০ বা এর কম টেস্ট খেলেছেন—এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা ৪৩। অর্থাৎ অবসর নিয়েছেন বা আর খেলার সম্ভাবনা নেই, এমন ক্রিকেটারদের (৬৩ জন) মধ্যে ৫৯ ভাগ ক্রিকেটারই ১০টির বেশি টেস্ট খেলতে পারেননি। বর্তমানে খেলছেন বা ক্ষীণ সম্ভাবনা এখনো আছে, এমন আরও ১৭ জন ক্রিকেটারের টেস্ট সংখ্যা ১০ বা এর কম। বাংলাদেশের পক্ষে এখন পর্যন্ত ২০ বা এর বেশি টেস্ট খেলেছেন মাত্র ২০ জন।

টেস্ট ক্যাপ বিলানোয় বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে জিম্বাবুয়ে
ফাইল ছবি

পরিসংখ্যানে পরিষ্কার, বাংলাদেশে টেস্ট অভিষেকের ব্যাপারটা এখনো পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। আপাত সমাধান হিসেবে টেস্ট অভিষেক করিয়ে দেওয়া হয় অনেক ক্রিকেটারকে। তারপর যখন কয়েকটি টেস্টে ফল মেলে না, তখন আবার তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়। ১২৬ টেস্টে ৯৯ জন ক্রিকেটারের টেস্ট অভিষেকের বাংলাদেশের এই পরিসংখ্যানকে ছাড়িয়ে গেছে শুধু জিম্বাবুয়ে। এখন পর্যন্ত ১১৫ টেস্ট খেলা জিম্বাবুয়ের পক্ষে এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলেছেন ১২০ জন।

তবে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট বদলে গেছে ২০০৩ সালে। দেশটির শাসনব্যবস্থা নিয়ে ২০০৩ বিশ্বকাপে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে দলটির একটি প্রজন্ম হারিয়ে গেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। এরপর জোড়াতালি দিয়ে দল সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় জিম্বাবুয়ের সব ধরনের পরিসংখ্যানই একটু ভয়ংকর দেখায়। এর আগপর্যন্ত প্রথম ১০ বছরে জিম্বাবুয়েতে ৫৬ জন ক্রিকেটারের টেস্ট অভিষেক হয়েছিল, আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৫৯।

শ্রীলঙ্কাই টেস্ট ক্যাপ দেওয়ায় সবচেয়ে কৃপণ
ফাইল ছবি

টেস্ট ক্রিকেটার ও টেস্টের অনুপাত সংখ্যায় বর্তমানে জিম্বাবুয়েই শুধু বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের একদম গাঁ ঘেঁষে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪৪৫টি টেস্ট খেলা দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলেছেন ৩৪৮ জন ক্রিকেটার, এরপরই আছে ইংল্যান্ড। ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়ে উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন দলের সফরে যাওয়ার ফল হিসেবে ৬৯৮ জন ক্রিকেটার ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট খেলছেন। একই সঙ্গে টেস্ট খেলতে শুরু করেও মাত্র ৪৬০ জনকে টেস্ট ক্যাপ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তবে টেস্ট ক্যাপ দেওয়ায় সবচেয়ে কৃপণ শ্রীলঙ্কা। ২৯৯টি টেস্ট খেলতে মাত্র ১৫৭ জন ক্রিকেটার ব্যবহার করেছে দেশটি।