‘একটু’র আক্ষেপ নিয়ে ফিরল শ্রীলঙ্কা

এমবুলদেনিয়ার বলে আশা দেখছিল শ্রীলঙ্কা।
ছবি: এসএলসি

বিন্দু বিন্দুতে সিন্ধু হলে, এতগুলো ‘একটু’তে কী হয়?

শ্রীলঙ্কা দল আজ যখন গলে মাঠ ছাড়ছিল, তাদের আক্ষেপ যে অনেকগুলো ‘একটু’ নিয়ে। ইশ্‌, যদি আরেকটু বেশি রান করতে পারত দল। উইকেটের পেছনে যদি আরেকটু ভালো কিপিং করতে পারতেন নিরোশান ডিকভেলা। ফিল্ডারদের দক্ষতা যদি আরেকটু ভালো হতো। আর দিনের খেলাটা যদি আরেকটু লম্বা হতো!

এত সব ‘একটু’র আক্ষেপ যদি না থাকত, তবে গল টেস্টে জমজমাট এক পঞ্চম দিন অপেক্ষায় থাকত সবার জন্য। কিন্তু সেটা আর হলো কই। পর্যাপ্ত আলো নেই, এই যুক্তিতে নির্ধারিত সময়ের বেশ আগেই চতুর্থ দিনের খেলা থামিয়ে দিলেন আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা। মাত্র ৭৪ রানের লক্ষ্যে নামা ইংল্যান্ডও ৩৮ রান তুলে হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। সিরিজে এগিয়ে যেতে আগামীকাল আর ৩৬ রান করতে হবে ইংল্যান্ডকে। সেটা করার জন্য হাতে ৭ উইকেট আছে সফরকারীদের।

লরেন্স দিন কাটিয়ে দিয়েছেন।
ছবি: টুইটার

৩৬ রানকে মাত্র বলার উপায় নেই। এই তো গত বছরের শেষ দিকেই ৩৬ রান তুলতেই গুটিয়ে গিয়েছিল ভারত দল। কাল যে গলের স্পিন উইকেটে বিষ নিয়ে নামবেন না লঙ্কান স্পিনাররা, তা কে বলতে পারে? তবু কালকের হিসাব কালকের জন্য। আজ যে ৭ উইকেট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছে ইংল্যান্ড, সে জন্য আলোকস্বল্পতাকে চাইলেই ধন্যবাদ দিতে পারে ইংল্যান্ড।

শ্রীলঙ্কা কাল এই ৩৬ রানকেই অনতিক্রম্য এক পাহাড় বানাতে পারবে কি না বলা যাচ্ছে না, তবে আজ ৭৪ রানের লক্ষ্যটাকে হঠাৎ সুদূরের কোনো লক্ষ্য বলেই বোধ করাচ্ছিলেন লাসিথ এমদুলদেনিয়া ও দিলরুয়ান পেরারা। আর চাপে পড়লে ইংলিশ দলও কতটা আনাড়ি হয়ে উঠতে পারে, সেটাও দেখা গেছে। ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে এমবুলদেনিয়ার স্টাম্পে পড়া বল ছেড়ে দিলেন ডম সিবলি। আগের বলগুলো সব বিশাল বাঁক নিয়ে বাইরে যাচ্ছিল দেখে ছেড়ে দিয়েছিলেন এই ওপেনার। কিন্তু একজন বাঁহাতি স্পিনারের আর্ম বলের কথা ভুলে গেলে কী পরিণতি হয়, সেটি হাতে–কলমে দেখে নিলেন আজ। হলেন বোল্ড!

পরের বলে, অর্থাৎ দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই দ্বিতীয় উইকেট হারাতে পারত ইংল্যান্ড। দিলরুয়ান পেরেরার প্রথম বলটাই জ্যাক ক্রলির ব্যাটে ছোবল দিয়ে উইকেটের পেছনে ডিকভেলার গ্লাভসে আশ্রয় নিতে চেয়েছিল। কিন্তু ডিকভেলা সেটা ধরে রাখতে পারলেন না। জীবন পেয়ে গেলেন ইংলিশ ওপেনার। কিন্তু সে উপহার কাজে লাগাতে জানতে হবে তো! পঞ্চম ওভারেই এমবুলদেনিয়াকে অযথা তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন। গলের উইকেটে চতুর্থ দিনে এমন কিছু করার শাস্তি বুঝে নিয়ে ক্রলি ফিরলেন ৮ রানে।

১২ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানো ইংল্যান্ড পরের উইকেট হারাল আর ২ রান পর। এবার স্পিনবিষে নয়, তবে আতঙ্কে। ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে দ্রুত রান নিতে গিয়ে ভুল–বোঝাবুঝি জনি বেয়ারস্টো ও জো রুটের। শুরুতে রান নেবেন কি নেবেন না, এ নিয়ে দোনোমনা করার দায়ে রানআউট হলেন জো রুট। আগের ইনিংসেই ডাবল সেঞ্চুরিয়ান রুটের এবার মাত্র ১ রান নিয়ে ফেরাটা সবাইকে মনে করিয়ে দিল। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড আসলে অতটা ভালো ব্যাটিং করেনি। রুট একাই দলকে টেনে ছিলেন। ধারাভাষ্যকারের মুখে, ‘গেম অন’। সোজা বাংলায়, এবার তাহলে জমল খেলা।

খেলাটাকে জমিয়ে ক্ষীর বানানোর আরেকটা চেষ্টা করলেন বেয়ারস্টো। আগের ওভারের শেষ বলেই দ্রুত রান তুলতে গিয়ে আউট হয়েছেন অধিনায়ক রুট, এমন অবস্থায় পরের ওভারের প্রথম বলেই বেয়ারস্টো আবার পড়িমরি করে ছুটলেন রান নিতে। আবার একটা থ্রো হলো, কিন্তু বেয়ারস্টোর সৌভাগ্য, এবার আর থ্রোটা সঠিক জায়গায় গিয়ে আঘাত হানল না। নিরাপদ সীমানার বাইরে থাকা বেয়ারস্টোও তাই সে যাত্রা বেঁচে গেলেন।

৭৪ রানকে তখন মাউন্ট এভারেস্টসম এক লক্ষ্য মনে হচ্ছিল। এক দিকে অভিষিক্ত ড্যান লরেন্স, অন্যদিকে স্নায়ুচাপের ছাপ দেখাতে শুরু করা বেয়ারস্টো। স্বপ্ন তাই বাড়ছিল লঙ্কানদের। এর মধ্যেই আবার কখনো বিলাসী ড্রাইভ কখনোবা রিভার্স সুইপ খেলার চেষ্টা করছিলেন দুই ইংলিশ। কিন্তু ভাগ্যকে পক্ষে পেয়েছেন তাঁরা। কখনো ব্যাটে লাগলেও সেটা ফিল্ডারের হাতে যায়নি। আর কখনো বল সবাইকে বিভ্রান্ত করে সীমানায় চলে গেছে, আর ইংল্যান্ড স্বস্তি পেয়েছে—যাক চারটা রান তো কমল!

পাঁচ উইকেট পেয়েছেন জ্যাক লিচ।
ছবি: টুইটার

১৫ ওভার শেষ হতে অন্য কারও হাতে বল তুলে দিচ্ছিলেন লঙ্কান অধিনায়ক দিনেশ চান্ডিমাল। কিন্তু হাসারাঙা ডি সিলভা বলটা হাতে নিয়ে দু-একবার এদিক-ওদিক করার আগেই আম্পায়ারের হস্তক্ষেপ। স্টাম্পের ওপর থেকে বেল ফেলে দিয়ে জানিয়ে দিলেন নাটকীয় দিনটা এখানেই থামাতে হচ্ছে। বেয়ারস্টোর রান তখন ১১, লরেন্সের ৭।

এর আগে ২ উইকেটে ১৫৬ রানে দিন শুরু করা শ্রীলঙ্কা আজ গলের উইকেটের জন্য যথেষ্ট এক লিডের পথেই ছুটছিল। লাহিরু থিরিমান্নের সেঞ্চুরি (১১১) ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের (৭১) ফিফটির সুবাদে একপর্যায়ে ৫ উইকেটে ২৯১ রান করে ফেলেছিল লঙ্কানরা। কিন্তু অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে যোগ্য সংগত কেউ দিতে পারেননি। দলকে ৩৫৯ রানে টেনে নিয়ে যাওয়ার পর ধৈর্য হারিয়ে আউট হয়ে গেছেন ম্যাথুস।

তখন অবশ্য মনে হয়নি সে আউট নিয়ে আক্ষেপ থাকতে পারে। মাত্র ৭৩ রানের লিড আর কতই-বা বড় করতে পারতেন ম্যাথুস। কিন্তু দিন শেষে লিডটা আরেকটু বাড়াতে না পারার আক্ষেপ ঠিকই ফিরে এসেছে।