এখন চোটও উপভোগ করেন সাইফউদ্দিন

মিরপুর একাডেমি মাঠে কাল অনুশীলনে সাইফউদ্দিন।ছবি: শামসুল হক

গত কয়েক দিন ব্যস্ত ছিলেন বালুর ওপর ভারসাম্য ঠিক রাখার অনুশীলনে, যা ছিল পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের পুনর্বাসনের অংশ। তবে গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে এসেই একা একা বোলিং শুরু করলেন। চোট থেকে ফেরার পর কালই প্রথম বোলিং করলেন সাইফউদ্দিন।

প্রথমে ছোট রানআপে দুই ওভার। পরে লম্বা রানআপে তিন ওভার। এক স্টাম্প দাঁড় করিয়ে উইকেটে স্পট বোলিংয়ের কিছু চিহ্ন রেখে হাত ঘুরালেন। দেখেই মনে হচ্ছিল তিনি কিছুটা হলেও ছন্দে ফিরছেন। গতকাল বোলিং করেছেন ৬০ ভাগ জোর দিয়ে। আজ করবেন ৮০ ভাগে। অনুশীলন শেষে সাইফউদ্দিন জানালেন, ১০ জানুয়ারি জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু হলে বোলিং করবেন পুরোদমে।

জাতীয় দলের কোচরা এসে সম্পূর্ণ ফিট সাইফউদ্দিনকেই দেখতে চাইবেন। ক্যাম্পে যোগ দিতে কাল ঢাকায় এসেছেন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো, পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসন ও ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক।

বল হাতে ছন্দে ফেরার চেষ্টায় সাইফউদ্দিন।
ছবি: প্রথম আলো

সাইফউদ্দিনকে এমন ফেরার লড়াই কদিন পরপরই করতে হয়। ছোট্ট আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার, কিন্তু চোট-আঘাতের সঙ্গে লড়াইটা নতুন নয়। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই চোটের কারণে থেমে থেমে চলছে সাইফউদ্দিনের ক্রিকেট-যাত্রা।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও তা–ই। ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলেছেন চোটের সঙ্গে লড়ে। একই কারণে বিশ্বকাপের ঠিক পরেই শ্রীলঙ্কায় যেতে পারেননি। একই বছর ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি দিয়ে ক্রিকেটে ফিরলেও আবার চোটে পড়ে পাঁচ মাসের জন্য দলের বাইরে। গত বছর মার্চে জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে আবার দলে ফেরেন সাইফউদ্দিন।

এরপর করোনার লম্বা বিরতি শেষে বিসিবি প্রেসিডেন্ট কাপে খেলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতে খেলার আগেই দুর্ভাগ্যজনকভাবে আবার চোটে পড়েন সাইফউদ্দিন। সেই চোট পুরোপুরি না সারতেই আবার মাঠে নামেন। খেলেন বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের তিনটি ম্যাচ।

অভ্যাস হয়ে গেছে। এসব নিয়েই পেস বোলারের জীবন।
চোট নিয়ে প্রশ্নে বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন

পরে এমআরআই করলে দেখা যায় চোট এখনো সারেনি। শঙ্কা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজে সাইফউদ্দিনকে পাওয়া নিয়ে। পরে অবশ্য সময়মতো সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

তবে কত দিন সুস্থ থাকেন, সেটিই চিন্তার বিষয়। চোট যেন সাইফউদ্দিনের ঘরের কোণেই ঘাপটি মেরে বসে থাকে। সুযোগ পেলেই জেঁকে বসে কখনো পিঠে, কখনো হ্যামস্ট্রিংয়ে। আজকাল সাইফউদ্দিনও চোট–সম্পর্কিত প্রশ্ন শুনলে হেসে ফেলেন।

চোট নিয়ে প্রশ্নে তাঁর উত্তর শুনে মনে হয়, যেন এ প্রশ্নের অপেক্ষাতেই ছিলেন তিনি, ‘অভ্যাস হয়ে গেছে। এসব নিয়েই পেস বোলারের জীবন। আর জীবনে চাপ না থাকলে উপভোগ করা যায় না।’

সাইফউদ্দিনকে আগামী দুই মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ড সিরিজ মিলিয়ে খেলতে হবে সম্ভাব্য ছয়টি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এর মাঝে আবার কয়েকটি প্রস্তুতি ম্যাচও আছে। ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে বিকেএসপিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ আছে। তার আগে নিজেদের মধ্যে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ।

ইংল্যান্ডে ২০১৯ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের সব ম্যাচে খেলা হয়নি সাইফউদ্দিনের, পিঠের ব্যথার কারণে মাঝে এক ম্যাচে বিশ্রাম নিতে হয়েছিল। ২০২১ আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছর। এ মুহূর্তে দলের একমাত্র পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে সাইফউদ্দিন সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। কিন্তু চোট সামলে তিনি কতটা দিতে পারেন দলকে, সেটাই দেখার অপেক্ষা আপাতত।