এখনো ঘোরের মধ্যে আছি

কিউই কণ্ঠ
কিউই কণ্ঠ

প্রথমেই বলে রাখি, ব্রেন্ডন ম্যাককালামের মতো অনুপ্রেরণাদায়ী অধিনায়কের নেতৃত্বে খেলতে পারলে ভালো লাগত। অসাধারণ এক টিম ম্যানেজমেন্ট পাশে নিয়ে সে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের সবচেয়ে জাদুকরি মুহূর্তের চিত্রনাট্য লিখেছে। খেলোয়াড়েরা ওকে সম্মান করে, অনুসরণ করে। ব্যাট হাতে সে অসাধারণ। আর যেভাবে আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজায় তা অভূতপূর্ব। চার স্লিপ ও এক গালি, ভাবা যায়! কিন্তু এটাই ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, আগ্রাসী এক বিজয়ী!
ম্যাচ শেষ হওয়ার ঘণ্টা খানেক পর এই কলাম লিখতে বসেছি। সত্যি বলছি, আমি এখনো ঘোরের মধ্যে। কত দিন ধরে ক্রিকেটে আছি কিন্তু কখনোই আজকের মতো দর্শক দেখিনি নিউজিল্যান্ডে। যতটা আশা করা হয়েছিল ঠিক ততটাই নাটকীয় হয়েছে ম্যাচটা। মাঠের নাটকীয়তার সঙ্গে দারুণভাবেই মানিয়েছে এসব দর্শককে। ম্যাচের মতোই বর্ণিল ছিলেন এঁরা। ম্যাচের অবস্থা যাই হোক না কেন সারাক্ষণই গ্যালারি মাতিয়ে রেখেছেন।
নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা খুশিতে কেঁদেছে। কেঁদেছে আমাদের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বিরাও, তবে ওরা কেঁদেছে হতাশায়। আমি বলব জয়টা নিউজিল্যান্ডেরই প্রাপ্য ছিল। ওরাই বেশি কার্যকর ক্রিকেট খেলেছে। জয়ের খিদেটাও ওদের বেশি ছিল, মাঠে নির্মমও ছিল বেশি। কেউ একজন ম্যাচের পর আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারটা ঠিক হাতে উঠেছে কিনা? ও রকম ঝোড়ো সূচনা এনে দেওয়ার পর পুরস্কারটা কি ম্যাককালামের প্রাপ্য ছিল না?
আমি বলেছি এলিয়টকে দেওয়াই ঠিক হয়েছে। বিরুদ্ধপরিবেশে সে অসাধারণ দৃঢ়তা দেখিয়েছে। সে যেভাবে ইনিংস গড়েছে, যেভাবে গ্যাপ খুঁজে নিয়েছে ও শেষে বড় শট খেলেছে এককথায় রোমাঞ্চকর। দিন শেষ ওর ওই ছক্কাটাই তো পার্থক্য গড়েছে। কোনো সন্দেহ নেই টুর্নামেন্টের সেরা ম্যাচ এটাই। আর এতে মাথা ঠান্ডা রেখে যেভাবে খেলল এলিয়ট, অন্য আর কাকে ম্যাচসেরার পুরস্কার দেওয়া যেত!
তবে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য দুঃখও লাগছে। চোকার তকমাটা আর দূর করতে পারল না দলটি। তবে আমি বলব এই সেমিফাইনালে ওরা চোক করেনি। সাহসের সঙ্গেই লড়েছে। কিছু সুযোগ হারানো ছাড়া ফিল্ডিংয়ে ওরা দুর্দান্তই ছিল। অন্য সব দল যেখানে ট্রফি জেতার জন্য খেলেছে, সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকানরা খেলেছে দেশের ক্রিকেটে পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে। তাই বাড়তি একটা চাপ ছিল ওদের ওপর।
তার পরও প্রোটিয়াদের পারফরম্যান্স প্রশংসাযোগ্য। আমার কাছে ওরাই টুর্নামেন্টের সেরা দল ছিল। কিন্তু পারল না। স্টেইনের ফিটনেসটা বড় হয়ে উঠল। পঞ্চম বোলারের অনুপস্থিতিও ওদের ভুগিয়েছে। ২০১৯ বিশ্বকাপের জন্য এখন আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। কাজটা মোটেও সহজ নয়।
তাসমান সাগরের ওপারে ভিন্ন এক পরিবেশই এখন অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। আমরা এমসিজির ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে পেলে দর্শকেরা আমাদের ভয়ানক যন্ত্রণাই দেবে। ৯০ হাজার শত্রুভাবাপন্ন দর্শক আমাদের হুমকি। এত দর্শকের সামনের খেলার অভ্যাস তো নিউজিল্যান্ডের নেই। তবে যেভাবে আমরা টানা আটটি ম্যাচ জিতেছি তাতে বিশ্বকাপ ট্রফি নাগালের মধ্যেই দেখছি। তার পরও আমি অস্ট্রেলীয় দর্শকের কথা ভেবে ফাইনালে ভারতের সঙ্গেই খেলতে চাইব।
হৃদয় ভারত বললেও মস্তিষ্ক বলছে ভিন্ন কথা। সিডনির সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াই নিরঙ্কুশ ফেবারিট। ভারত প্রতি ম্যাচেই উন্নতি করছে এটা মনে রেখেও কথাটা বলছি। অস্ট্রেলিয়াকে টপকাতে হলে নতুন বলটা ভালোভাবে সামলাতে হবে ভারতীয়দের। তার মানে মিচেল স্টার্কের আগ্রাসন সামাল দেওয়ার চ্যালেঞ্জ থাকছে। ভারত এটা সামলে ৩০০ রান তুলতে পারলে ভালো সুযোগই থাকবে ওদের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বেশি ভুল করে পার পাওয়া যাবে না। আজ যেমন ভুলের মাশুল গুনল দক্ষিণ আফ্রিকা! (হকআই)।