এবারের আইপিএলে ভাঙতে পারে যত রেকর্ড

গতবার শিরোপাজয়ী মুম্বাইয়ের উৎসব।ছবি: এএফপি

আইপিএলকে করোনাভাইরাসের চেয়েও প্রভাবশালী প্রমাণ করে ছাড়ল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। জৈব নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টি করেও অধিকাংশ দেশ যেখানে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ আয়োজন করতে পারছে না, সেখানে বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে খেলোয়াড় নিয়ে আইপিএল আয়োজন করছে ভারত। নিজ দেশে নয় অবশ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাতের তিন শহরে হচ্ছে ১৩তম আইপিএল।

প্রথম ম্যাচেই অপেক্ষা করছে এক বারুদে লড়াই। টুর্নামেন্টের সফল দুই দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ও চেন্নাই সুপার কিংস আজ মুখোমুখি হবে আবুধাবিতে। শুধু ইংল্যান্ডের সুবাদেই গত কিছুদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পেয়েছে সবাই। মধ্যে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ হলেও বিশ্বব্যাপী এ নিয়ে আবেদন খুব একটা ছিল না। তাই আইপিএলের প্রত্যাবর্তন উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। চার-ছক্কার বন্যা আর দুর্দান্ত ক্রিকেট দেখার আশায় বসে আছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। সে সঙ্গে কিছু রেকর্ড ভাঙা-গড়ার অপেক্ষাও আছে।

দেখে নেওয়া যাক কী কী রেকর্ড ভেঙে যেতে পারে এবারের আইপিএলে—

সবচেয়ে বেশি ম্যাচ
আইপিএলে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন সুরেশ রায়না। কিন্তু ১৯৩ ম্যাচ খেলা এই ব্যাটসম্যান এ মৌসুমে ব্যক্তিগত কারণে টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তাই তাঁর অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির সামনে সুযোগ এসেছে এ রেকর্ড নিজের করে নেওয়ার। চোট সমস্যা হয়ে না দাঁড়ালে ১৯০ ম্যাচ খেলা ধোনি এবারই সে রেকর্ড নিজের করে নেবেন।

৫০ জয়
ভারতের অধিনায়ক হিসেবে বিরাট কোহলির ফর্মটা আইপিএলে এলেই খুশি হতো রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। কিন্তু ভারতের হয়ে টানা ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়া কোহলি বেঙ্গালুরুর হয়ে অনেকটাই ব্যর্থ। ১১০ ম্যাচ খেলে এখনো জয়ের ‘ফিফটি’র দেখা পাননি। অবশ্য এবার সেটা হয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছে। ১৪ ম্যাচের সব কটিতেই যে হারার মতো কাণ্ড এখনো দেখা যায়নি। আর মাত্র একটি ম্যাচে জয় পেলেই ধোনি, গৌতম গম্ভীর ও রোহিত শর্মার পর চতুর্থ অধিনায়ক হিসেবে ৫০ ম্যাচ জেতা অধিনায়ক হবেন কোহলি। তবু ধোনি (১০৪), গম্ভীর (৭১) ও রোহিতের (৬০) চেয়ে বেশ পিছিয়ে থাকবেন কোহলি।

অধিনায়ক ধোনির ধারে–কাছে নেই কেউ।
ছবি: এএফপি

৫০০০ রান
আইপিএল পাঁচ হাজার রান গত মৌসুমেই দেখে ফেলেছে। বিরাট কোহলি (৫ হাজার ৪১২) রান বাড়িয়ে নিতে পারলেও রায়নার (৫ হাজার ৩৬৮) সে সুযোগ নেই এবার। রায়নাকে টপকাতে পারবেন কি না, বলা যাচ্ছে না। তবে তাঁদের স্বাভাবিক ফর্ম ধরে রাখতে পারলে রোহিত ও ডেভিড ওয়ার্নার অনায়াসে পাঁচ হাজারের মাইলফলক ছুঁতে পারবেন। রোহিতের দরকার আর মাত্র ১০২ রান, ওয়ার্নারের দরকার ২৯৪।

২০০ ম্যাচ
এ মাইলফলক এবার নিশ্চিতভাবেই ছোঁয়া হবে দুজনের। গ্রুপ পর্বে ১৪ ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবেন রোহিত ও ধোনি। মাইলফলক ছুঁতে ধোনির দরকার আর মাত্র ১০ ম্যাচ, রোহিতের ১২ ম্যাচ।

একজনের ছক্কার ডাবল সেঞ্চুরি হয়ে গেছে, আরেকজনের এখনো অপেক্ষা ১০ ছক্কার।
ছবি: এএফপি

২০০ ছক্কা
ভারতের অধিনায়ক ও সহ–অধিনায়কের সুযোগ আছে আইপিএলে ২০০ ছক্কার ছোট ক্লাবে যোগ দেওয়ার। ১৯৪ ছক্কা নিয়ে চারে থাকা রোহিত ও তিনে থাকা কোহলির (১৯০ ছক্কা) আগে এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন ধোনি (২০৯)। তবে ‘নম্বর ওয়ান’কে ধরা দুজনের কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। ৩২৬ ছক্কা মেরে আক্ষরিক অর্থেই ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন ক্রিস গেইল।

শূন্যের রাজা
আইপিএলে সবচেয়ে বেশি শূন্যের রেকর্ড এখন দুজনের। ব্যাটিং দক্ষতায় দুজন আবার দুই ঘরানার। অদ্ভুত ভঙ্গিতে ব্যাট করা হরভজন সিং ও ব্যাকরণ মেনে নামা পার্থিব প্যাটেল দুজনেরই শূন্যের সংখ্যা ১৩টি। এবার আইপিএলে খেলছেন না হরভজন সিং, ফলে অস্বস্তির রেকর্ড এড়াতে ভালোই লড়তে হবে পার্থিব প্যাটেলকে।

সর্বোচ্চ উইকেট
বাবা অসুস্থ, তাই আইপিএলের সেরা বোলার এবার খেলছেন না। লাসিথ মালিঙ্গার (১৭০) সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ডে তাই চোখ রাখতে পারছেন অমিত মিশ্র। ১৫৭ উইকেট নেওয়া মিশ্রকে অবশ্য এবার দারুণ বল করতে হবে। কারণ, গত মৌসুমে ১১ উইকেট পাওয়া মিশ্রকে এবার গতবারের চেয়েও ৩ উইকেট বেশি পেতে হবে মালিঙ্গার রেকর্ড ভাঙতে চাইলে।

ফিফটির ফিফটি
আইপিএলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক কোহলি হতে পারেন, কিন্তু একটি ক্ষেত্রে ওয়ার্নারের ধারে–কাছে নেই কোহলি। আর সেটা হলো বড় ইনিংস খেলার প্রবণতা। ১৬৯ ইনিংস খেলা কোহলির আইপিএলে ফিফটি আছে ৩৬টি, সে সঙ্গে ৫টি সেঞ্চুরিও। কোহলির চেয়ে ৪৩ ইনিংস কম খেললেও ৪৪টি ফিফটি ওয়ার্নারের। সেই সঙ্গে আরও ৪টি সেঞ্চুরি। এ মৌসুমে মাত্র দুটি ফিফটি করলেই আইপিএলে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিফটির ফিফটি হয়ে যাবে ওয়ার্নারের।

দেড় শ উইকেট
আইপিএলের সর্বোচ্চ দুই উইকেট শিকারির নাম তো জানা হয়েই গেল। তবে মালিঙ্গা-মিশ্র ছাড়া আরও দুজন দেড় শ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। হরভজন ও পীযূষ চাওলা দুজনেরই উইকেটের সংখ্যা ১৫০। পঞ্চম বোলার হিসেবে আইপিএলে ১৫০ উইকেটের ক্লাবে যোগ দিতে ডোয়াইন ব্রাভোর দরকার আর মাত্র ৩ উইকেট।

১০০ জয়
আইপিএলে এক শর বেশি ম্যাচ জিতেছে মাত্র দুটি দল। অনুমিতভাবেই সে দুটি দল টুর্নামেন্টের সফলতম দুই দলই। ১০৭টি জয় মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের আর দুই মৌসুম না খেলেও ১০০ ম্যাচ জিতেছে চেন্নাই সুপার কিংস। এবার তাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্স। সে জন্য অবশ্য বেশ ভালো করতে হবে রাইডার্সকে। আর আট ম্যাচ জিতলেই আইপিএলে সব মিলিয়ে ১০০ জয় হবে শাহরুখ খানের দলের। সে ক্ষেত্রে প্লে-অফও নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার কথা দলটির।

১০০ হার
১০০ জয় না পেলেও এবার ১০০ হার দেখার সম্ভাবনা আছে বেশ কিছু দলেরই। এখন পর্যন্ত আইপিএলে এই ‘কীর্তি’ কোনো দলের নেই। দিল্লি, পাঞ্জাব ও বেঙ্গালুরু সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে এ লজ্জা এড়ানোর। কোহলিরা সাত ম্যাচ জিতলেই বেঁচে যাবেন (৯২ হার)। কিন্তু পাঞ্জাবকে গ্রুপ পর্বে অন্তত ৯ ম্যাচ জিততে হবে, আর সে ক্ষেত্রে প্লে-অফেও থাকতে হবে অপরাজিত। সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় আছে দিল্লি। ৯৭ ম্যাচ হেরে বসা দিল্লিকে এবার ইতিহাসের সেরা ফর্ম দেখাতে হবে লজ্জা থেকে বাঁচতে চাইলে।

২০০ ম্যাচ
১০০ জয় কিংবা ১০০ হার নিয়ে কিছু ‘তবে কিন্তু’ আছে। তবে প্রথম দল হিসেবে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের ২০০ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়ায় কোনো অনিশ্চয়তা নেই। গ্রুপ পর্ব কোনো কারণে বাতিল না হলে রেকর্ডটা হয়ে যাবে সফলতম দলটির। ১৪টি গ্রুপ পর্বের ম্যাচে নিশ্চয়তা নিয়ে আজ খেলতে নামছে গত ১২ মৌসুমে ১৮৭ ম্যাচ খেলা মুম্বাই।

৫০০ চার
রানের আর সব রেকর্ডের মতো এখানেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা কোহলি ও ওয়ার্নারের মধ্যে। বড় ইনিংস খেলায় ওয়ার্নার এগিয়ে থাকলেও চল্লিশের বেশি ইনিংসে ব্যাট করার সুবাদে চার মারায় ওয়ার্নারের চেয়ে এগিয়ে কোহলি। আইপিএলে ৫০০ চারের দেখা পেতে কোহলির অপেক্ষা আর মাত্র ২০টি চারের। আর ওয়ার্নারকে মারতে হবে ৪২টি চার। গত মৌসুমের কথা চিন্তা করলে কাজটা দুজনের জন্য কঠিন কিছু না। গতবার কোহলি ৪৬টি চার মেরেছিলেন আর ওয়ার্নার গড়িয়ে সীমানা পার করেছিলেন ৫৭ বার। এখন পর্যন্ত একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫০০টি চার মেরেছেন শিখর ধাওয়ান। ১৫৮ ইনিংসেই ৫২৪ চার ধাওয়ানের। এবার দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে কাজটা করার সুযোগ ছিল রায়নার (৪৯৩)। কিন্তু তিনি এবার খেলছেন না।