এভাবে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সম্ভব?
বাংলাদেশের মাটিতে—আরও নির্দিষ্ট করে বললে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে—টি–টোয়েন্টিতে সর্বশেষ কোন দল ইনিংসে ন্যূনতম দেড় শ রানের দেখা পেয়েছে?
অন্তত এ বছরে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ বছর ঘরের মাঠে—শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ছয়টি টি–টোয়েন্টি খেলেছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কাল সিরিজের প্রথম টি–টোয়েন্টি।
এর মধ্যে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের তোলা ১ উইকেটে ১৩১ রানই এ বছর ঘরের মাঠে এই সংস্করণে এক ইনিংসে কোনো দলের সর্বোচ্চ স্কোর। প্রতিপক্ষ দলের ইনিংস বিবেচনায় নিলে অস্ট্রেলিয়ার ৭ উইকেটে ১২১ (দ্বিতীয় ম্যাচে)।
খুঁজতে খুঁজতে পেছাতে হবে গত বছরের মার্চে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টি–টোয়েন্টিতে শেরেবাংলায় ৩ উইকেটে ২০০ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। তাড়া করতে নেমে জিম্বাবুয়ে ১৫২ রানে অলআউট হয়। বাংলাদেশের মাটিতে সেই ম্যাচেই টি–টোয়েন্টিতে সর্বশেষ কোনো দল ইনিংসে ন্যূনতম দেড় শ রান তুলতে পেরেছিল।
হুট করে এই পরিসংখ্যান টেনে আনার কারণ হার্শা ভোগলের একটি টুইট। ভারতের এই খ্যাতনামা ধারাভাষ্যকার কাল টুইট করেন, ‘আমি ঠিক জানি না, বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রতিক সময়ে খেলা টি–টোয়েন্টি ম্যাচ অংশগ্রহণকারী দলগুলোর কোনো উপকারে আসছে কি না, লক্ষ্য যদি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হয়।’
অক্টোবর–নভেম্বরে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত হবে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এ সংস্করণে উইকেট এমনিতেই রানপ্রসবা বানানো হয়, ওমান ও আরব আমিরাতের উইকেট তো ব্যাটিংবান্ধব। বিশেষজ্ঞরা এখনই বলছেন, টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উইকেট হবে দুই শ রানের।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজ খেলে বিশ্বকাপে পা রাখবে বাংলাদেশ দল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪–১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে হয়তো আত্মবিশ্বাস মিলেছে, কিন্তু যে উইকেটে খেলা হয়েছে, তার সঙ্গে উত্তর মেরু–দক্ষিণ মেরু ব্যবধান হবে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উইকেটের।
এমনকি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কাল যে উইকেটে খেলা হয়েছে, সাকিব আল হাসানের ভাষায় তা ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের চেয়েও কঠিন।’ মাত্র ৬০ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড। টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে এটি কিউইদের যৌথভাবে সর্বনিম্ন রানের ইনিংস, ২০১৪ সালে এই বাংলাদেশের মাটিতেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একই রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড। তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশও ভুগেছে।
৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে মাহমুদউল্লাহর দল ম্যাচটা জিতেছে ৭ উইকেটে। ছোট লক্ষ্য তাড়া করতেই ১৫ ওভার খেলতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ম্যাচে ছড়ি ঘোরান দুই দলের স্পিনাররা। উইকেটে বল এসেছে থেমে, বাঁকনির্ভর এবং অপ্রত্যাশিত আচরণও করেছে।
অস্ট্রেলিয়া অবশ্য বাংলাদেশ সফরে পূর্ণ শক্তির দল পাঠায়নি। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবেন—এমন বেশির ভাগ খেলোয়াড়কে বাংলাদেশ সফরে পাঠায়নি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আয়োজিত হবে আইপিএলের বাকি অংশ—স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা সেখানে খেলে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সারবেন।
নিউজিল্যান্ড তো বিশ্বকাপের আলাদা দলই গঠন করেছে, সে দলের কাউকে পাঠায়নি তারা বাংলাদেশ সফরে। বিশ্বকাপের আগে আইপিএলে খেলার সুযোগ আছে, আর বিশ্বকাপের আগে বেশি ক্রিকেট খেলে ‘বার্নআউট’ হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। আর বাংলাদেশের উইকেট তো আছেই। সব বুঝেই হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দুই দলের ম্যানেজমেন্ট। হিসেবে তাই প্রস্তুতিতে পিছিয়ে পড়ল শুধু বাংলাদেশ।
অবশ্য শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সাম্প্রতিক টি–টোয়েন্টি সিরিজে তাকালে আরও কিছু দলের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। গত জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কার মাটিতে তিন ম্যাচ টি–টোয়েন্টি সিরিজ ২–১ ব্যবধানে জেতে ভারত। এর মধ্যে শুধু এক ম্যাচে কোনো দলের ইনিংস ন্যূনতম দেড় শ রান টপকে যায়। যদিও সেটি ভারতের পূর্ণ শক্তির দল ছিল না।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া দলের সফরে টি–টোয়েন্টি সিরিজে অবশ্য ব্যাটসম্যানদের ভুগতে দেখা যায়নি। পাঁচ ম্যাচের সেই সিরিজে দশ ইনিংসের মধ্যে পাঁচ ইনিংসে দলীয় রান ১৮০ থেকে ১৯৯ রানের মধ্যে ভেতর ছিল।
বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্নটা তাহলে শুধু বাংলাদেশ ঘিরে? এখানকার উইকেট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রসিকতাও কম হচ্ছে না। কেউ কেউ রসিকতা করে বলছেন, ‘দ্য হানড্রেড’ ভুলে যান, বাংলাদেশে টি–টোয়েন্টিই একটা আলাদা সংস্করণ।
অর্থাৎ টি–টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের জায়গা থেকে অন্যান্য প্রায় সব দেশের ভেন্যুতে খুনে মেজাজের ও হাই স্কোরিং ক্রিকেট হলেও বাংলাদেশের মাটিতে যেন তার উল্টো!
বাংলাদেশের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজে নিউজিল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত কোচ হিসেবে আসা গ্লেন পোকনেলের কথাই ধরুন।
কাল ম্যাচ শেষে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এবং আমাদের জন্য (উইকেট) খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমরা আর ২৫টা রান বেশি করতে পারলে ম্যাচটা আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো। এখন তাই এই দুই দিনের মধ্যে (কাল ও আজ, আগামীকাল দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টি ম্যাচ) চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে ১০০ রান তুলব।’