এভাবে বোলিং করেননি মাশরাফি, এমন ওভার করেননি সাকিব

মাশরাফি বোলিংয়ে এসেছেন ষষ্ঠ বোলার হিসেবে
মাশরাফি বোলিংয়ে এসেছেন ষষ্ঠ বোলার হিসেবে
>মাশরাফি বিন মুর্তজা ষষ্ঠ বোলার হিসেবে আজ আক্রমণে এসেছেন। যে অভিজ্ঞতা তাঁর ছিলই না। ২২তম ওভারে আক্রমণে আসা সাকিব ডেথ ওভারে ২৩ রান দিয়ে বসেছেন। এক ওভারে এতগুলো রান!

২০ ওভার পেরিয়ে গেছে, সাকিব আল হাসান তখনো আক্রমণে নেই! ২৮ ওভার পেরিয়ে গেল, দেখা নেই মাশরাফি বিন মুর্তজার! আজ ক্লনটার্ফে দলের সবচেয়ে সিনিয়র দুই বোলার নিজেদের আড়ালে রেখেছিলেন। শাবকদের ছেড়ে দিয়ে যেন অলক্ষ্যে পাহারা দিয়েছে দুই সিংহনেতা। তাতে লাভ কতটা হলো, তা শুধু স্কোরবোর্ড দেখে বোঝা কঠিন। আয়ারল্যান্ড বিশাল লক্ষ্য দিল, বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের তিন শ তাড়ার পরীক্ষার সুযোগ। মাশরাফি শেষ পর্যন্ত খুব বেশি রান না দিলেও সাকিব করলেন খরুচে বোলিং। উইকেটশূন্য থাকলেন দুজনই। দুজনের জন্যই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নতুন দুই অভিজ্ঞতা যোগ হলো আজ।

মাশরাফি নিজে আক্রমণে এসেছেন ২৯তম ওভারে। ক্যারিয়ারে এই প্রথম ষষ্ঠ বোলার হিসেবে খেললেন ম্যাশ। যেখানে আগে একবারই পঞ্চম বোলার হিসেবে খেলেছেন। সেটিও চার বছর আগের ঘটনা। সাতবার আক্রমণে এসেছেন চতুর্থ বোলার হিসেবে। নয়বার প্রথম বদলি বোলারের ভূমিকায়। এর আগে ২০৭ ইনিংসে ১৯১ বার মাশরাফি বিন মুর্তজা বোলিং আক্রমণ শুরু করেছেন। ১৬৫ বার প্রথম ওভার করেছেন, ২৬ বার ইনিংসের দ্বিতীয় ওভার।

সাকিবও এলেন ২২তম ওভারে। প্রথম বলেই উইকেট পেতে পারতেন পয়েন্টে সাইফউদ্দিন ক্যাচটা না ফেললে। ওই উইকেটটা পেলেই ৫ হাজার রান ও আড়াই শ উইকেটের ডাবলটা হয়ে যেত। শেষ পর্যন্ত সাকিব শুধু উইকেটশূন্য নন, ৯ ওভারে দিলেন ৬৫ রান। যা আগের দুই ম্যাচে দেওয়া রানের চেয়েও ৫ বেশি। ফেলে দেওয়া ক্যাচটাও ছিল পল স্টারলিংয়ের।

সেই স্টারলিংয়ের কারণেই বাংলাদেশ ২৯৩ রানের লক্ষ্য পেল। সে-ই ভালো। তিন শ তাড়া করে জেতার শক্তিটারও পরীক্ষা হয়ে যাক! তিন শর বেশি রান তাড়া করে বাংলাদেশে জিতেছে মাত্র তিনবার। সত্যি বলতে, ২৫০-এর বেশি তাড়া করে জেতার কীর্তিই আছে মোটে ১০টি। প্রায় সমান্তরালে চলা ইংল্যান্ড-পাকিস্তান সিরিজের সম্পন্ন দুই ম্যাচে ৪ ইনিংসে ১৪৫১ রান উঠেছে! দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩৭৩ রান করেও ইংল্যান্ড ম্যাচ জিতেছে মাত্র ১২ রানে। তৃতীয় ম্যাচে ৩৫৮ রান করেও পাকিস্তান রক্ষা পায়নি। ইংল্যান্ড জিতেছে ৬ উইকেট আর ৩১ বল হাতে রেখে! বিশ্বকাপে তিন শ যে করতেই হবে, তার বার্তা দিয়ে রাখছে ডাবলিন থেকে বিমানে খুব কাছের দূরত্বে চলতে থাকা সেই সিরিজ।

উইকেট হাতছাড়া নয়, সাকিবের হতাশাটা, তাঁর বলে পরপর দুটি ক্যাচ পড়েছে। ছবি: এএফপি
উইকেট হাতছাড়া নয়, সাকিবের হতাশাটা, তাঁর বলে পরপর দুটি ক্যাচ পড়েছে। ছবি: এএফপি

আজ সিনিয়ররা ব্যাকসিট নেওয়ায় সুযোগটা মুঠোয় পুরে নিলেন আবু জায়েদ। নিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচেই তুলে নিলেন ৫ উইকেট। সাকিব-মাশরাফিদের আড়ালে থাকার সুবিধাটা মোসাদ্দেকও দু হাত ভরে নিয়েছেন। মেহেদী মিরাজের অনুপস্থিতিতে আজ ৮ ওভার বল করে মাত্র ৩২ রান দিয়েছেন। দুই বছর আগের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ৩ ওভারে তাঁর ৩ উইকেট নেওয়ার স্মৃতি নিশ্চয়ই এখনো অনেকেরই মনে আছে। বাংলাদেশের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ম্যাচে মোসাদ্দেককেও একটু ঝালিয়ে রাখা আখেরে কাজেই দেবে।

ফাইনাল আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল বলে ক্লনটার্ফের ম্যাচটি বাংলাদেশ নিল পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপলক্ষ হিসেবে। মাশরাফিই নিজেকে নিয়ে সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটা করলেন। ডেথ ওভারের চাপ নেন না—এমন সমালোচনাকে এই সিরিজে পাল্টা জবাবই দিচ্ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই সহজ জয়ের মূল ভূমিকা ছিল তাঁর শেষের বোলিংয়ের জাদু। প্রথম ম্যাচে ৫ বলের মধ্যে তিন উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দিয়েছিলেন আসল ধাক্কা। দ্বিতীয় ম্যাচে টানা দুই ওভারে তুলে নিয়েছেন ক্যারিবীয়দের সেরা দুই ব্যাটসম্যানকে। প্রথম ম্যাচেও সেঞ্চুরি ও ফিফটি করা ব্যাটসম্যান দুজন তাঁর শেষের শিকারের ঝুলিতে ছিল।

কাল ২৯তম ওভারে এসে করলেন টানা ৮ ওভার। নিজের অষ্টম ও ইনিংসের ৪৩তম ওভারে ১৯ রান দিয়েছিলেন বলেই হয়তো নিজেকে সরিয়ে নিলেন। না হলে আগের ৭ ওভারে ইকোনমি রেটটা কিন্তু দারুণ ছিল—৪.১৪। নিজের শেষ দুটি ওভার আর করা হলো না। সাকিবও নিজের শেষ ওভারটি আর করেননি। বল তিনিও খারাপ করছিলেন না। ৮ ওভারে দিয়েছিলেন ৪২ রান। কিন্তু ইনিংসের ৪৬তম ওভারেই দিলেন ২৩ রান। প্রথম ৪ বলেই যে দিয়েছিলেন ২১ রান! সাকিবের ক্যারিয়ারেও এটি এক ওভারে সর্বোচ্চ খরুচে বোলিং!

আজ অবশ্য বাংলাদেশের বিলাসিতার দিন। ব্যাটিংয়েও রান-বিলাসী হয়ে উঠছেন ব্যাটসম্যানরা!