এমন একটা সকালই তো চেয়েছিল বাংলাদেশ

ব্ল্যাকউডকে ফেরানোর পর বাংলাদেশের উচ্ছ্বাস।ছবি: শামসুল হক

এনক্রুমা বোনার। জশুয়া দা সিলভা।

টেস্ট সিরিজজুড়ে বাংলাদেশের মাথাব্যথার দুই নাম। এঁদের দুজনকেই কিংবা অন্তত একজনকে ফেরাতে পারলে সকালটা সর্বাঙ্গসুন্দর বলা যেত। তবু যা হয়েছে, বাংলাদেশের জন্য সেটাও বা কম কী! সেশনে ২৭ ওভারে বাংলাদেশ রান দিয়েছে ৫৭, উইকেট তুলে নিয়েছে ৩টি। এমন একটা সকালই তো চেয়েছিল বাংলাদেশ!

৬ উইকেটে ৯৮ রান নিয়ে মধ্যাহ্নবিরতিতে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রিজে অবশ্য বাংলাদেশের দুই মাথাব্যথা হয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যানই আছেন, এটাই বাংলাদেশের জন্য একমাত্র অস্বস্তির দিক। বোনার অপরাজিত আছেন ৩০ রানে, দা সিলভা ২০ রানে। দুজনই বেশ ধীরস্থিরভাবে খেলছেন। বোনার এরই মধ্যে ইনিংসে ১০৭ বল খেলে ফেলেছেন, চার মেরেছেন মাত্র ২টি। ৪টি চার মারলেও দা সিলভার ইনিংসও হয়ে গেছে ৫২ বলের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের লিড অবশ্য এরই মধ্যে হয়ে গেছে ২১১ রানের।  

পিচ এরই মধ্যে স্পিনারদের দিকে হাত বাড়াতে শুরু করেছে। বোলারদের বোলিং মার্কের জায়গায় পড়ে বল হঠাৎ লাফিয়ে উঠছে, নয়তো বাঁক নিচ্ছে। বাংলাদেশ যেহেতু এই পিচে পঞ্চম দিনে ব্যাট করবে, তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের যত কম রানে গুটিয়ে দেওয়া যায়, এ-ই ছিল পরিকল্পনা। তৃতীয় দিন বিকালে কাল ৩ উইকেট নিয়ে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে বাংলাদেশকে অনেকটা এগিয়ে নিয়েছিলেন স্পিনাররা।

আবু জায়েদ শুরুতেই জোড়া ধাক্কা দিয়েছেন।
ছবি: প্রথম আলো

আজ সকালে প্রথম সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আরও বেশি দুর্বল করে দেবে বাংলাদেশ, সেটিই ছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের আশা। আবু জায়েদ ও তাইজুল ইসলাম মিলে তা-ই করেছেন। আবু জায়েদ প্রথমে ফেরান জোমেল ওয়ারিকান ও কাইল মেয়ার্সকে। এরপর তাইজুল ফেরান জার্মেইন ব্ল্যাকউডকে। দিনের প্রথম ১৪ ওভারেই ৩ উইকেট!

অবশ্য শুধু বোলারদের কথা বললে উইকেটকিপার লিটন দাস একটু অভিমান করতে পারেন। ব্ল্যাকউডকে ফেরাতে তাইজুলের দারুণ ডেলিভারির পাশাপাশি তাঁর গ্লাভসের ক্ষিপ্রতার অবদানও তো কম নয়। দারুণ ক্ষিপ্রতায় ব্ল্যাকউডকে স্টাম্পড করে দিয়েছেন লিটন।

সকালে একটা সময় পর্যন্ত শঙ্কা ছিল, চট্টগ্রামের মতো মিরপুর টেস্টেও বুঝি রিভিউ না নেওয়ার মাশুল দিতে হবে বাংলাদেশকে! চট্টগ্রামে যে কাইল মেয়ার্স ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছিলেন, সেই মেয়ার্সকেই ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। মুমিনুলরা রিভিউ না নেওয়ায় বেঁচে যান মেয়ার্স। কিন্তু আক্ষেপে বেশিক্ষণ বাংলাদেশকে পুড়তে দিলেন না আবু জায়েদ।

দিনের ১২তম ওভারের প্রথম বলে মেয়ার্সকে এলবিডব্লু করে দিলেন আবু জায়েদ। এর আগে দিনের পঞ্চম ওভারে জোমেল ওয়ারিকানকেও এলবিডব্লু করে ফিরিয়েছেন আবু জায়েদই। মিরপুরে আজ চতুর্থ দিন সকাল টেস্টের ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছিল। বাংলাদেশের জন্য টেস্টে জয়ের সম্ভাবনা বাড়াতে আজ সকালে দ্রুত কয়েকটি উইকেট তুলে নেওয়ার কোনো বিকল্প ছিল না। আবু জায়েদ ও তাইজুল নিশ্চিত করলেন, অন্তত এ দিকটিতে বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে।

ব্ল্যাকউডকে স্টাম্পড করে দিলেন লিটন।
ছবি: প্রথম আলো

দিনের পঞ্চম ওভারেই আনন্দের উপলক্ষ বাংলাদেশের। ওয়ারিকানকে ফেরালেন আবু জায়েদ। আম্পায়ার আঙুল তুলতে কিছুক্ষণ সময় নিয়েছেন। অন্য প্রান্তে থাকা এনক্রুমা বোনারের সঙ্গেও অনেকক্ষণ ধরে আলোচনা করলেন ওয়ারিকান। এদিকে ডিআরএস টাইমারে সেকেন্ডের ঘরে সংখ্যা কমছেই। ১৫, ১৪,...৮, ৭,...। ওয়ারিকানরা তখনো আলোচনা করেই যাচ্ছেন। তবে কি রিভিউ নেবেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যান?

সেকেন্ডের ঘরে শেষ পর্যন্ত ০ এসে গেল। বোনারের সঙ্গে আলোচনা শেষে মাথা নাড়িয়ে ড্রেসিংরুমের পথে হাঁটা শুরু করলেন ওয়ারিকান। এলবিডব্লু! ৩ উইকেটে ৪১ রান নিয়ে কাল দিন শেষ করা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শুরুতেই ধাক্কা দেওয়া গেল!

দিনের শুরুতে উইকেট ফেলে দেওয়ার আনন্দ যদি থাকে, আবু জায়েদের ওই ওভারের শেষ বলকে ঘিরেই একটা রিভিউর সিদ্ধান্তে হতাশা ঘিরে ধরে বাংলাদেশকে। চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টের মতো এই টেস্টেও রিভিউ না নিয়ে উইকেট ফেলার সুযোগ হারিয়েছে বাংলাদেশ। তা-ও কার উইকেট! চট্টগ্রামে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশকে বলতে গেলে একাই হারিয়ে দেওয়া মেয়ার্সের!

আবু জায়েদের ওভারের শেষ বলটা খেলতে চেয়েছিলেন মেয়ার্স। বল চলে যায় উইকেটের পেছনে লিটন দাসের হাতে। বাংলাদেশ আবেদন করে। আম্পায়ার সাড়া দেননি। বাংলাদেশও পরে রিভিউ নেয়নি। বোলার আবু জায়েদ কিংবা উইকেটকিপার লিটন দাস—কারও আবেদনেই তেমন জোর ছিল না। কেউই রিভিউ নেওয়ার জন্য বলেননি অধিনায়ক মুমিনুলকে।

কিন্তু পরে রিপ্লেতে দেখা গেল, রিভিউ নিলে মেয়ার্স আউট হয়ে যেতেন। আলট্রাএজ প্রযুক্তি দেখাল, বল মেয়ার্সের ব্যাট ছুঁয়ে গেছে। চট্টগ্রামে এই বোনার-মেয়ার্স জুটিই বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছে, এই জুটিটা ভেঙে দেওয়ার সুযোগ হেলায় হারাল বাংলাদেশ!
আবু জায়েদই পরে ফেরালেন মেয়ার্সকে। আম্পায়ার এলবিডব্লুর সিদ্ধান্ত দিলে মেয়ার্স রিভিউ নেন। কিন্তু বাঁচতে পারেননি।

তার কিছুক্ষণ পরই আবার বাংলাদেশের উচ্ছ্বাস। তাইজুলের বলে ফরোয়ার্ড ডিফেন্সিভ শট খেলতে চেয়েছিলেন ব্ল্যাকউড। ব্যাটে-বলে হয়নি, বল চলে যায় লিটনের হাতে। শট খেলতে গিয়ে ব্ল্যাকউডের পা দাগ থেকে একটু বেরিয়ে যায়। একটু বলতে মিলিমিটারের ব্যবধান! অতটুকুই যথেষ্ট হলো লিটনের জন্য।