কনওয়ের আগের ছয়জন কী করেছিলেন
১৪৪ বছরের ইতিহাস টেস্ট ক্রিকেটের। এর মধ্যে কীর্তিটা আছে শুধু সাতজনের। কতটা বিশেষ এই কীর্তি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কীর্তিটা টেস্ট অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরির!
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান লর্ডস টেস্টের দ্বিতীয় দিনে পরশু সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে কীর্তিটা গড়েছেন নিউজিল্যান্ডের ডেভন কনওয়ে। শেষ পর্যন্ত টেস্ট ক্যারিয়ারে কতদূর যেতে পারবেন কনওয়ে, সে নিয়ে আলোচনা করা এখন অর্থহীন। সে উত্তর ভবিষ্যতের হাতে। তবে আগের ছয়জন কী করেছেন, সেটি দেখে নিতে তো আর সমস্যা নেই!
রেগিনাল্ড টিপ ফস্টার (ইংল্যান্ড)
২৮৭, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, সিডনি, ১৯০৩-০৪
টেস্ট অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তিতে পরে আসা যাক। রেজিনাল ফস্টার ক্রিকেট আর ফুটবল দুই ভুবনেরই কিংবদন্তি। ছেলেদের ফুটবল ও ক্রিকেট দুই দলেই অধিনায়কত্ব ইংল্যান্ডের অধিনায়কত্ব করার কীর্তিটা ফস্টার ছাড়া কারও নেই। ১৯০৩-০৪ মৌসুমে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেক, খেলেছেন ৮টি টেস্ট। তবে ২৮৭ রানের বিশাল এই ইনিংস এখনো অভিষেকে টেস্টে সর্বোচ্চ তো বটেই, এখনো অস্ট্রেলিয়ায় কোনো ইংলিশ ক্রিকেটারেরও সর্বোচ্চ।
কাউন্টি ক্রিকেটে পূর্ণ মৌসুম বলতে এক মৌসুমই খেলেছেন, ১৯০১ সালে সেই মৌসুমে ৫০.৬৬ গড়ে করেছেন ২১২৮ রান। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ৮ টেস্টের ক্যারিয়ারে তাঁর গড় ছিল ৪৬।
জ্যাক রুডলফ (দক্ষিণ আফ্রিকা)
২২২*, বাংলাদেশের বিপক্ষে, চট্টগ্রাম, ২০০২-০৩
চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে চোখধাঁধানো অপরাজিত ২২২ রানের ইনিংসে অভিষেক। এরপর জ্যাক রুডলফ আরও চারটি সেঞ্চুরি করেছেন টেস্টে, এর মধ্যে একটি পার্থে ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ বাঁচানো ১০২। কিন্তু ওই টেস্টের পরই পথ হারান রুডলফ, পরের ১৪ ইনিংসে ৫ ফিফটির জেরে বাদ পড়েন ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্রীলঙ্কা সফরের দল থেকে।
ঘরোয়া ক্রিকেটের ফর্মকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনূদিত করতে না পারার মূল্যই দিতে হয়েছে তাঁকে। পরে অবশ্য আবার ডাক পেয়ে আরও ১৩টি টেস্ট খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে, সব মিলিয়ে তাঁর ৪৮ টেস্টের ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে ৩৫ গড় নিয়ে।
লরেন্স রো (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
২১৪, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, কিংস্টন, ১৯৭১-৭২
চোট ক্যারিয়ারটাকে পূর্ণতা পেতে দিল না! যতটুকু দিয়েছে, তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে আর এর বাইরে দুই লরেন্স রো-কেই দেখেছে ক্রিকেট। পরিসরটা আরও ছোট করে নিলে শুধু তাঁর ঘরের মাঠে স্যাবাইনা পার্কের লরেন্স রো আর এর বাইরের লরেন্স রো-র রেকর্ডে আকাশপাতাল তফাৎ।
স্যাবাইনা পার্কেই অভিষেক, ১৯৭২ সালের মার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেই টেস্ট কী দারুণভাবেই না রাঙিয়েছেন! প্রথম ইনিংসে ২১৪, দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ১০০! এই মাঠে চার টেস্টে তিন সেঞ্চুরিসহ তাঁর গড় ১১৩.৪০। এর বাইরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অন্য মাঠগুলোতে গড় ৪৩, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাইরে ৩০।
কিন্তু চোখের সমস্যা, চোট আর - আশ্চর্যজনকভাবে - ঘাসে অ্যালার্জির কারণে ক্যারিয়ারটা বেশি এগোতে পারেনি। বলা হতো, লরেন্স হাঁচি দিচ্ছে? তাহলে প্রতিপক্ষের জন্য সুখবর। সেরা ব্যাটসম্যান তিনি ছিলেন না, তবে ১৯৭৪ সালে ব্রিজটাউনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেরা এক ইনিংস খেলেছেন। দশ ঘন্টার একটু বেশি সময়ের সে ইনিংসে রান কত করেছিলেন? ৩০২!
ম্যাথু সিনক্লেয়ার (নিউজিল্যান্ড)
২১৪, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, ওয়েলিংটন, ১৯৯৯-২০০০
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেকে ২১৪। এর পরের বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে করেছেন অপরাজিত ২০৪। তবে তাঁর কাছ থেকে প্রত্যাশিত মানের কাছাকাছি কখনো যেতে পারেননি ম্যাথু সিনক্লেয়ার। ৩৩ টেস্টের ক্যারিয়ারে নিউজিল্যান্ড দলে যাওয়া-আসার মধ্যেই ছিলেন। ক্যারিয়ার শেষ করেছেন ৩২ গড় নিয়ে।
কাইল মেয়ার্স (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
২১০*, বাংলাদেশের বিপক্ষে, চট্টগ্রাম, ২০২১-২১
আবারও চট্টগ্রাম, আবারও বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো এক অভিষিক্ত ব্যাটসম্যানের টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি। তবে কাইল মেয়ার্সের ডাবল সেঞ্চুরি ক্রিকেট ইতিহাস যতটা সমাদরে মনে রাখবে, বাংলাদেশ ততটাই দীর্ঘশ্বাসে।
৩৯৫ রানের লক্ষ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জেতানোর পথে তাঁর ডাবল সেঞ্চুরি টেস্ট ইতিহাসে প্রথম কোনো অভিষিক্ত ব্যাটসম্যানের টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে দ্বিশতকের রেকর্ড! এখন পর্যন্ত ৪ টেস্টের ক্যারিয়ার তাঁর, তাতে আরও দুটি ফিফটি আর দুটি চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংস বলে, মেয়ার্সের শুরুটা আশা জাগানিয়া।
ব্রেন্ডন কুরুপ্পু (শ্রীলঙ্কা)
২০১*, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, কলম্বো, ১৯৮৬-৮৭
অভিষেকে প্রতিপক্ষ রিচার্ড হ্যাডলি অ্যান্ড কোং। তাঁদের বিপক্ষে ৭৭৭ মিনিটের মিনিটের ইনিংসে অপরাজিত ২০১ রান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে ধীরগতির ডাবল সেঞ্চুরি এটি। অথচ কুরুপ্পুর পরিচিতি ছিল মেরেকেটে খেলা ব্যাটসম্যান হিসেবে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কুরুপ্পুর প্রথম সেঞ্চুরি ছিল এই ২০১ রান, আর টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ও শেষ। চার টেস্টের ক্যারিয়ার শেষ করেছেন ৫৩ গড় নিয়ে।