করোনাকে ভয় পেতে বলছেন অশ্বিন

করোণা নিয়ে সবাইকে সতর্ক করতে চাইছেন অশ্বিন।ফাইল ছবি

ভারতে করোনা পরিস্থিতি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। ১৪ মে দেশটিতে নতুন করে ৩ লাখ ২৬ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ হাজার ৮৭৯ জন। গতকাল সংক্রমণের সংখ্যা একটু কমেছে ভারতে। কিন্তু ৩ লাখ ১০ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরকে ইতিবাচকভাবে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না ভারত। কারণ, গতকাল এই মহামারি জীবন কেড়ে নিয়েছে ৪ হাজার ৯০ জনের।

গত ২৪ ঘণ্টায়ও পরিস্থিতি বদলায়নি। হিন্দুস্তান টাইমস জানাচ্ছে, এই ২৪ ঘণ্টায় ৩ লাখ ৫৭ হাজারের বেশি মানুষ আবার কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছেন। আরও ৩ হাজার ৪৪৯ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। এ অবস্থায়ও অনেকের মধ্যে এই মহামারি সম্পর্কে সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। রবিচন্দ্রন অশ্বিন এটা মানতে পারছেন না। সবাইকে বলেছেন করোনা সম্পর্কে ভীত হতে। যদি ভয় পাওয়ার কারণে কিছু প্রাণ বাঁচে, তবে ভয় পেতেই বলছেন সবাইকে।

আজকে তোলা এই ছবিটা দেখিয়ে সবাইকে সতর্ক হতে বলছেন অশ্বিন।
ছবি: টুইটার

দেশবাসীকে করোনা সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা বহুদিন ধরেই করছেন অশ্বিন। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টের নাম বদলে ‘মাস্ক পরুন আর টিকা নিন’ করেছেন বহু আগেই। করোনার কারণে আইপিএল স্থগিত হওয়ার আগেই নিজে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট থেকে সরে গিয়েছেন। মহামারির প্রকোপ বাড়ায় খেলার চেয়ে প্রিয়জনদের নিরাপদ রাখাই তাঁর কাছে প্রাধান্য পেয়েছিল। শুধু নিজের পরিবার নয়, নিজ রাজ্যকেও নিরাপদ দেখতে চান। আর সে কারণেই তামিলনাড়ুর বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে এক সাংবাদিকের টুইটার থ্রেড রিটুইট করেছেন। তামিলনাড়ুর সবাইকে বলেছেন সেটা পড়তে।

সন্ধ্যা রবিশঙ্কর নামের সে সাংবাদিক তামিলনাড়ুর স্বাস্থ্যসেবার যে অবস্থা তুলে ধরেছেন সেটা ভয়াবহ। পাঁচ ঘণ্টা আগের সে টুইটার থ্রেডে রবিশঙ্কর জানিয়েছেন, তামিলনাড়ুতে আইসিইউর জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। অনেক প্রাইভেট হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট দেখা দিয়েছে। অক্সিজেন নেই বলে অনেক হাসপাতালই রোগী ছেড়ে দিচ্ছে। কিছু প্রাইভেট হাসপাতাল তো নিজেদের নামের পাশে মৃতের সংখ্যা বাড়বে এ শঙ্কায় রোগী ফিরিয়ে দিচ্ছে। কিছু ছোট হাসপাতাল সরকারের নির্দেশে করোনা রোগীদের জন্য শয্যার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু তাদের সেখানে অক্সিজেন পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। অথচ এমন সময়েও সরকারি হাসপাতালগুলোয় ১০৮টি অ্যাম্বুলেন্স (টুইট করার সময়) দাঁড়িয়ে আছে।

জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য এখন ব্যস্ত থাকার কথা অ্যাম্বুলেন্সগুলোর। কিন্তু সেটা না হওয়ার কারণ থ্রেডেই উল্লেখ করেছেন রবিশঙ্কর। এই অ্যাম্বুলেন্সগুলো বের হতে পারছে না দুটো কারণে, যদি অক্সিজেন না থাকে তাহলে সেগুলো ব্যবহার করা সম্ভব নয়, আর রোগীর জন্য যদি হাসপাতালের শয্যা নিশ্চিত করা না যায়।

পশ্চিম বাংলায় লকডাউনের ঘোষণায় এলাকা ছাড়ছেন অনেকে।
ছবি: এএফপি

অক্সিজেন দরকার এমন রোগীকে অধিকাংশ হাসপাতাল ভর্তি করাচ্ছে না বা ছেড়ে দিচ্ছে, কারণ, তাদের পক্ষে অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। যেসব রোগীকে প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে অক্সিজেনের কারণে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, তাদের সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। এটা চলতে থাকে অনেক বড় সমস্যার সৃষ্টি হবে।

এরপর রবিশঙ্কর যা বলেছেন তাতে আতঙ্কিত হওয়াই উচিত তামিলনাড়ুর জনগণের। এই সাংবাদিক দাবি করেছেন, পরিস্থিতি যতটা মনে হচ্ছে তার চেয়েও ভয়ংকর, ‘সরকার যা বলছে মৃতের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি। করোনায় আক্রান্তের সংখ্যাও সরকার যা বলছে তার চেয়ে বেশি হওয়ার কথা। সরকার যদি সঠিক চিত্র তুলে না ধরে, মানুষ পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পারবে না। সবার ঘরে থাকা উচিত, করোনা প্রতিরোধের এটাই উপায়।’

এমন থ্রেড সবাইকে পড়তে বলায় অনেকে অশ্বিনের সমালোচনা করছিলেন।। অনেকেই বলছিলেন, এভাবে আতঙ্ক ছড়ানো ঠিক না। এর জবাবেই অশ্বিন সবাইকে ভয় পেতে বলেছেন, বলেছেন আতঙ্কিত হতে, ‘যাঁরা বলছেন এটা ভয়ংকর খবর এবং এমন খবর ছাড়ানো ঠিক না, তাঁদের উদ্দেশে বলছি, প্লিজ ভয় পান, আতঙ্কিত হন। এভাবেই শুধু আমরা এর বিরুদ্ধে লড়তে পারব। এই ভাইরাসের বিপক্ষে লড়াইয়ে আমাদের রক্ষণাত্মক হতে হবে। প্রতিটা দিন এখন গুরুত্বপূর্ণ। সময় থাকতে কাজটা শেষ করুন (সব শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই)।’