করোনার ধাক্কায় ১১ কোচকে ‘না’ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের

পাঁচ সাবেক ক্রিকেটারসহ মোট ১১ জনকে জাতীয় একাডেমির কোচ বানিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। এক বছরের চুক্তিতে এদের নিয়োগ দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল, আনকোরা প্রতিভাদের তুলে নিয়ে আসা, তাদের সঠিক পরিচর্যা করা। বেতন নেহাতই কম ছিল না। ৩০ থেকে ৫৫ লাখ রুপি ছিল বেতনের অঙ্কটা। কিন্তু করোনার কারণে সেই কোচদের চুক্তির মেয়াদ আর বাড়াচ্ছে না বিসিসিআই।

অতিমারির এই সময় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েনি, এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। খেলার সংস্থাগুলোর অবস্থা আরও সঙিন। যেকোনো খেলারই নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ‘ধনী’ ক্রিকেট বোর্ড হিসেবে পরিচিত বিসিসিআইও লড়ে যাচ্ছে সংকটের সঙ্গে। ১১ কোচের চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানোর কারণ মূলত এটিই। তবে সমস্যাটা হচ্ছে, চুক্তির মেয়াদ যে বাড়ানো হবে না, ১১জন কোচকে আগে থেকে তা জানানো হয়নি। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে অসন্তোষ।

ভারতের জাতীয় একাডেমিতে কাজ করতেন ১১ কোচ।
সংগৃহীত ছবি

জাতীয় দলের সাবেক পাঁচ ক্রিকেটারের মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্পিনার ঋষিকেশ কানিতকার, সাবেক ভারতীয় নারী ক্রিকেট দলের কোচ রমেশ পাওয়ার, সাবেক ওপেনার শিব সুন্দর দাস, ১৯৯২ বিশ্বকাপ খেলা পেসার সুব্রত ব্যানার্জি আর ১৯৯৬ সালে দুই ওয়ানডে খেলা সুজিত সোমসুন্দর। এর মধ্যে কানিতকারের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। ১৯৯৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপে ভারত-পাকিস্তানের সেই শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে কানিতকারের ব্যাট থেকেই এসেছিল ভারতের জয়সূচক বাউন্ডারি। সৌরভ গাঙ্গুলীর সেঞ্চুরিতে সেদিন রেকর্ড রান তাড়া করে (সে সময়ের হিসাবে) পাকিস্তানকে হারিয়েছিল ভারত।

ভারতীয় পত্রিকা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, কোচদের চুক্তি নবায়ন না করার খবরটি তাঁদের জানিয়েছেন, সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক ও কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান রাহুল দ্রাবিড়। তিনি বর্তমানে জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির ‘হেড অব ক্রিকেট’ এর দায়িত্বে আছেন। এ ব্যাপারে বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী, দ্রাবিড় ও বোর্ডের সচিব জয় শাহের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি সংবাদমাধ্যমটি।

চাকরি হারানো ১১ জনের মধ্যে একজন দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, ‘দুই দিন আগে রাহুল দ্রাবিড়ের কাছ থেকে আমরা সবাই ফোনকল পাই। তিনি আমাদের জানান, আমাদের চুক্তি নবায়ন না করার ব্যাপারে বিসিসিআই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু সে ব্যাপারে আমাদের কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ জানানো হয়নি। তিনি জানিয়েছেন আমাদের চাকরিতে বহাল রাখার জন্য তিনি অনেক চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পারেননি। গত তিন মাস ধরে আমরা একের পর এক ওয়েবিনার করে যাচ্ছি, পরিকল্পনা করছি কোভিড-পরবর্তী সময়ের জন্য। এখন হুট করে আমাদের বলা হল আমাদের চাকরিই নেই।’

আরেক কোচের আক্ষেপ সময় নিয়ে, ‘এমন সময় আমাদের চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে না যখন অনেক রাজ্য সংস্থা এর মধ্যে কোচ নিয়োগ করে ফেলেছে। কোভিডের মধ্যে নতুন চাকরি পাওয়াটা সমস্যা হবে আমাদের জন্য।’

জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির কার্যক্রম গত মার্চ মাস থেকেই বন্ধ আছে। তবে এ মাসের শুরুর দিকে জানা যায়, বিসিসিআইয়ের চুক্তি থাকা খেলোয়াড়েরা চাইলে একাডেমিতে গিয়ে অনুশীলন করতে পারবেন। ২০১৯ সালে, হেড অফ ক্রিকেট দ্রাবিড়ের কথামতো সুপ্রিম কোর্টের নিয়োগ দেওয়া প্রশাসক কমিটি এই কোচদের নিয়োগ দেয়। পুরুষ ও নারী দলের খেলোয়াড়দের অনুশীলন ক্যাম্পে সাহায্য করা ছাড়াও এসব কোচ ভারতের 'এ' দল, অনূর্ধ্ব-১৯ দল, অনূর্ধ্ব-২৩ দলকে সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকেন।

সে সুযোগটাই এখন কেড়ে নিল বিসিসিআই!