করোনার মধ্যে বেভানকে চিনেছি

>

আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। এক অণুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো

মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। প্রথম আলো ফাইল ছবি
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। প্রথম আলো ফাইল ছবি

ক্যারিয়ার থেকে লম্বা একটা সময় কেড়ে নিয়েছিল পিঠের চোট। চোট থেকে মাত্র খেলায় ফিরেছিলাম। কিন্তু ফিরতে না ফিরতেই এল করোনাভাইরাস। সামনে অনেক খেলা ছিল। প্রিমিয়ার লিগ, আয়ারল্যান্ড সিরিজ। এমন সময়েই কিনা সব থেমে গেল! খুব খারাপ লাগছে। প্রায় একটা বছর নষ্ট হয়ে গেল।

জানি, এসবে কারও হাতে নেই। সবই প্রকৃতির ইচ্ছা। সে জন্যই চেষ্টা করি ইতিবাচক কিছু ভাবতে। আশা করি সব ঠিক হবে, আবার খেলায় ফিরব আমরা সবাই।

ঘরে থাকার শুরুর দিকে খারাপ লাগছিল না। এখন বিরক্তি ধরে গেছে। করার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। শুরুর দিকে হয়তো মনে হয়েছিল, কিছুদিন ঘরে থাকা, এই তো। এখন তো পরিস্থিতি শুধু খারাপই হচ্ছে। বুঝে ওঠা মুশকিল কী হবে। আপনি যদি না জানেন, আপনি কাল, পরশু বা পরের দিন কী করবেন, তাহলে তো জীবন চালানো কঠিন।

করোনাভাইরাসের মধ্যেই রোজা চলে এল। অর্ধেকের বেশি রোজা শেষও হয়ে গেছে। সাধারণত রোজার সময় কোনো না কোনো খেলা থাকে, এবার খেলা নেই, কিছুই নেই। তাই রোজা রাখা হচ্ছে ঠিকমতো। তবে রোজার মধ্যে পরিকল্পনা করে কিছু করাটা আরও কঠিন হয়ে গেছে। রোজার আগে একটা নিয়মের মধ্যে ছিলাম। দিনের নির্দিষ্ট একটা সময় জিম, একটা সময় রানিং—এমন পরিকল্পনা করা ছিল। এখন সেটা নেই।

রোজা রেখে এসব কাজ করা একটু কঠিন। দেখা যাচ্ছে, আজ ভালো লাগছে, আজ ফিটনেসের কাজ করছি। আবার আরেক দিন ভালো লাগছে না, সেদিন কিছুতেই হাত দিচ্ছি না।

আমার অবশ্য তবু আফসোস নেই। গত তিন-চার বছর হয় এইচপি ক্যাম্প, না হয় খেলা—রোজার মাসে কিছু না কিছুতে ব্যস্ত ছিলামই। গতবার তো বিশ্বকাপেই ছিলাম। রোজা ঠিকমতো রাখা হয়নি। এবার সুযোগ আছে, সব রোজা রাখব। রোজার পর আবার সব শুরু করব ইনশা আল্লাহ।

অপ্রত্যাশিত এই অবসরে মোবাইল, ইউটিউবে অনেক সময় কাটছে। অনেক পুরোনো খেলার ভিডিও দেখছি। আমার আগের ম্যাচগুলোর ব্যাটিং, বোলিং বারবার দেখা হচ্ছে। সাবেক অনেক পছন্দের ক্রিকেটার আছেন, যাঁদের খেলা দেখে বড় হয়েছি। তাঁদের খেলা বারবার দেখা হচ্ছে। ওয়াকার ইউনিস, ওয়াসিম আকরাম, গ্লেন ম্যাকগ্রাদের বোলিং দেখি। কদিন ধরে মাইকেল বেভানের ব্যাটিং দেখছি। ছয়-সাতে ব্যাটিং করেও ৫০ এর ওপর গড়! বড় শট না খেলেও মাথা খাটিয়ে দ্রুত রান করতেন তিনি।

বেভান কিন্তু অত হার্ড হিটার ছিলেন না। ফিল্ডারের মাঝে ফাঁক বের করে খেলায় পটু ছিলেন। ম্যাচের অবস্থা বুঝে মাথা খাটিয়ে খেলেই অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা ফিনিশার হয়েছেন। করোনার সময়টায় এই জিনিসগুলো উপলব্ধি করতে পারছি। বেভানকে আরও ভালো করে চিনেছি। জাতীয় দলে আমিও একই জায়গায় খেলি। হয়তো বেভানের মতো হতে পারব না। তবে যখন মাঠে ফিরব, তখন ওর ব্যাটিং দেখে যা বুঝেছি, সেগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। সে জন্য আজকাল তাঁর ব্যাটিংটাই বেশি দেখা হচ্ছে।

বিকেলে ছাদে ঘুড়ি ওড়াতে যাই। ১০-১২ বছর আগের কথা মনে পড়ে তখন। ছোটবেলায় বেশ আয়োজন করে ঘুড়ি উড়ানো হতো। সেই স্মৃতি বারবার ফিরে আসছে এখন।

গ্রামেই আমার বেড়ে ওঠা। বৃষ্টি হলে ফুটবল আর মাঠ শুকনো থাকলে ক্রিকেট, খেলা কখনো বন্ধ থাকত না। শীতে ব্যাডমিন্টন খেলতাম। অর্থাৎ কিছু না কিছু খেলতামই। বাড়ি এলে ওই সব কথা বেশি মনে পড়ে। ব্যস্ততার কারণে হয়তো আগের জীবনটা হারিয়ে গেছে। তবু আজকাল অবসর সময়ে অতীতটা মনে পড়ে। কেমন করে যেন অনেকটা সময় কেটে গেল!

করোনার সময়টাও চলে যাচ্ছে সেভাবেই। কিন্তু আর কত দিন! স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অপেক্ষাটা যেন শেষই হতে চাচ্ছে না। কবে আবার মাঠে ফিরব, এখন সে অপেক্ষাতেই আছি।