কলম্বোর সুখস্মৃতি ডারবানে বাংলাদেশের অনুপ্রেরণা
সাইমন হারমারের বলটি লেগ সাইডে ঠেলে দৌড়ে এক রান নিয়েই আম্পায়ার মারাই এরাসমাসের দিকে তাকালেন নাজমুল হোসেন। লাইট মিটার বের করে এরাসমাস তখন আলো পরীক্ষা করছেন। এরপরই এলো সিদ্ধান্তটা। ডারবান টেস্টের প্রথম তিনদিনের মতো আজ চতুর্থ দিনেও আলোর স্বল্পতায় খেলা আগেভাগেই শেষ। কিন্তু প্রথম দিন বাংলাদেশের জন্য সিদ্ধান্তটা হতাশাজনক হলেও কাল তা এসেছে কিছুটা স্বস্তি হয়েই। চতুর্থ ইনিংসে ২৭৪ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ যে ৮ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে কম্পমান। এমন অবস্থায় কে চাইবে ব্যাটিং করতে!
দিন শেষে নাজমুল ও মুশফিকের মাঠ ছাড়ার এই ছবিটা মলিন মনে হলেও এখনো জয়ের স্বপ্নই দেখছে বাংলাদেশ। অন্তত দলের মুখপাত্র হয়ে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে আসা টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ তো বটেই। তা হয়তো এই টেস্টে ড্র হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই তিনি দেখছেন না বলে। বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মাহমুদ বললেন, ‘কঠিন হবে। জিততে হলে আমাদের ২৬৩ রান দরকার। কাল সারাদিন ব্যাট করতে পারলে জেতা সম্ভব। আমার মনে হয়, এখনো আমাদের যথেষ্ট সুযোগ আছে এই টেস্টে জেতার। তিন উইকেট হারালেও আমাদের অনেক ব্যাটসম্যান আছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করব। আমরা এখনো জেতার আশা ছাড়ছি না। এখানে ড্র করার সুযোগ নেই। হয় আমরা জিতব, না হয় হারব।’
মাহমুদ অনুপ্রেরণা খুঁজছেন পাঁচ বছর আগে শততম টেস্টে বাংলাদেশের জয় থেকে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোর সেই ঐতিহাসিক টেস্টে ১৯১ রান তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ। রান তাড়ায় ২২ রানে ২ উইকেট হারালেও সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পও আছে। মাহমুদ তা মনে করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, আমরা শ্রীলঙ্কায় শততম টেস্টে জিতেছিলাম। সেখানে ম্যাচের অবস্থা প্রায় একই ছিল। সেটা আমাদের জন্য একটা অনুপ্রেরণা হতে পারে।’
শুধু শততম টেস্টে নয়, ডারবানের অতীত ইতিহাসও হতে পারে বাংলাদেশের অনুপ্রেরণা। কিংসমিডে ২৭০ রানের বেশি তাড়া করে জেতার রেকর্ড রয়েছে ৮টি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩০৪ রান করে জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। সেটি অবশ্য সম্ভব হয়েছিল কুশল পেরেরার অবিশ্বাস্য এক ইনিংসের কারণে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কি ‘কুশল পেরেরা’ হতে পারবেন কেউ? নাজমুলের সঙ্গে অপরাজিত আরেক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমের নামটা হয়তো বলতে পারেন কেউ। অভিজ্ঞতা এবং সামর্থ্য মিলিয়ে প্রত্যাশাটা তাঁর কাছেই বেশি।
সেই প্রত্যাশার কথা বললেন মাহমুদও, সঙ্গে অবশ্য অন্য ব্যাটসম্যানদের কথাও, ‘জয়ের (মাহমুদুল) ১০০ আমাদের অন্য অনেক অনুপ্রেরণাদায়ক। সেদিক থেকে মুশফিক আমাদের দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। তাঁর কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশাও বেশি। তাঁর নিজের কাছেও নিজের প্রত্যাশা অনেক বেশি। আশা করি, সে কাল ভালো করবে। এছাড়া লিটন, রাব্বি, মিরাজরা আছে। আশা করি এখান থেকে আমরা ভালো করব। লম্বা সময় যদি ধৈর্য্য ধরে ব্যাটিং করতে পারি, তাহলে জিতব।’
হ্যাঁ, বাংলাদেশের জয়ের পূর্বশর্ত ওটাই—লম্বা সময় ধৈর্য্য ধরে ব্যাটিং। শেষ দিনের উইকেটে দুই স্পিনারের হুমকি সামলে মুশফিকরা তা করতে পারবেন কি না, এই প্রশ্নের উত্তরেই লুকিয়ে ডারবান টেস্টের ভাগ্য।