কেন এমন ফিল্ডিং

বাংলাদেশের ফিল্ডারদের হাত এখন মাখনে মাখা। ফাইল ছবি
বাংলাদেশের ফিল্ডারদের হাত এখন মাখনে মাখা। ফাইল ছবি

বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর কথাটা বলেছিলেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ দল যখন ম্যাচে ভালো অবস্থায় থাকে, তখন ফিল্ডিং খুব ভালো করে। দল ভালো অবস্থায় না থাকলে ফিল্ডিংও ভালো হয় না। শ্রীলঙ্কায় তিন ওয়ানডের সফরে সাকিবের কথাটাই কী দারুণ মিলে গেল! সাকিবের ভাষায় বাংলাদেশ দল ‘টপে’ ছিল না। বাংলাদেশের ফিল্ডিংও তাই ভালো হলো না।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বাজে ফিল্ডিংয়ের স্মৃতি এখনো তরতাজা। শ্রীলঙ্কা সিরিজেও অব্যাহত থেকেছে সে ধারা। ফিল্ডিং ছিল ছন্নছাড়া। দলের স্বীকৃত ভালো ফিল্ডাররাও সহজ সহজ ক্যাচ ফেলেছেন। দলের শরীরী ভাষাতেই যেন ফুটে উঠেছে আত্মসমর্পণের ছবি। অবশ্য বিসিবির হাই পারফরম্যান্স ম্যানেজার নাজমুল আবেদিন মনে করছেন, দলের এ অবস্থায় ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে উজ্জীবিত থাকাটা সহজও নয়। একের পর এক হার মানসিকভাবে ক্রিকেটারদের ভঙ্গুর করে দিচ্ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে ফিল্ডিংয়ে। আর কে না জানে, ফিল্ডিংটা উপভোগ না করলে সেটা কখনোই নিশ্ছিদ্র হয় না।

বিশ্বকাপ এবং শ্রীলঙ্কা সফরের ফিল্ডিং উদ্বিগ্ন করছে বিসিবিকেও। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান তো বলেছেনই, দেশে ফেরার পর ফিল্ডিং ব্যর্থতা নিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুকের কাছে। হয়তো ব্যর্থতার দায় নিয়ে স্টিভ রোডসের মতো বিদায় নিতে হবে তাঁকেও। কিন্তু কোচ বদলেই কি সব সময় সমাধানের পথ পাওয়া যায়! সমস্যার গভীরে না গেলে সমাধান মিলবে না কখনোই।

ভারত পাঁচ বছর আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রতিটি স্টেডিয়ামের আউটফিল্ডে আমূল পরিবর্তন আনে। ক্রিকেটাররা যেন বাজে আউটফিল্ডের ভয়ে দৌড়ঝাঁপ দেওয়া থেকে বিরত না থাকে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে সফলও হয়েছে ভারতীয়রা। ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিল্ডিংয়ের মান বেড়েছে, তরুণেরা বড় মঞ্চে আসার আগেই যোগ্য ফিল্ডার হয়ে আসছে।

ফিল্ডিং নিয়ে মানসিকতার পরিবর্তনও জরুরি। বাংলাদেশে ক্রিকেটারদের বিচার করা হয় ব্যাটিং ও বোলিং সামর্থ্যের বিচারে। তৃণমূল পর্যায়ে ফিল্ডিংকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কিছু ব্যতিক্রম বাদে মূলত জাতীয় দলে এসেই ফিল্ডিংয়ের গুরুত্ব বোঝেন ক্রিকেটাররা। নাজমুল আবেদিনের বিশ্লেষণও তাই বলছে, ‘আমাদের বেড়ে ওঠার মধ্যেই সমস্যা আছে। ক্লাব ক্রিকেট, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট যখন হয়, তখন ফিল্ডিংকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। নিচে থেকে উঠে আসার সময় শুধু ব্যাটিং-বোলিংকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। ক্রিকেটারদের ওপর ফিল্ডিং ভালো করার চাপটা ছোট থেকে থাকে না। যে কারণে ওদের মধ্য থেকে ভালো ফিল্ডার উঠে আসে খুব কম। দু-একজন ভালো জায়গা থেকে আসে, তাই হয়তো ভালো করে।’

বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের ফিটনেসও ফিল্ডিংকে কঠিন করে তুলছে। শ্রীলঙ্কা সফরের দলে চার-পাঁচজন ক্রিকেটার চোটের সঙ্গে লড়ছেন। কাঁধের চোটই আছে একাধিক ক্রিকেটারের। তাঁদের লুকিয়েই ফিল্ডিং সাজাতে হচ্ছে অধিনায়ককে। টানা ক্রিকেটের ধকল কার ওপর কতটুক প্রভাব ফেলছে, সেই হিসাবের খোঁজ কই! বড় দলগুলোর ক্রিকেটাররা জিপিএস ট্র্যাকার পরে মাঠে নামছে, ম্যাচের সময় ক্রিকেটারদের কাজের চাপের হিসাব করে সে অনুযায়ী বিশ্রাম দেওয়া হয় ক্রিকেটারদের। ক্রিকেটারদের ধকল সামাল দিয়ে প্রতি ম্যাচেই ফুরফুরে মেজাজে রাখার চেষ্টা ভারত, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলগুলোর মধ্যে দেখা যায়।

বাংলাদেশ সেদিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে। ব্যাটিং ও বোলিংয়ের প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়কে মনোযোগ দিচ্ছে ক্রিকেট বোর্ড, কিন্তু ফিল্ডিং সমান গুরুত্ব পাচ্ছে না। নাজমুল আবেদিন বলছেন, ‘এই বিষয়গুলো ফিল্ডিংয়ের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। চাঙা থাকা, ভালো মানসিক অবস্থায় থাকা...এসব সাহায্য করেই। ব্যাটিং ও বোলিংয়ে সব ধরে ধরে কাজ হচ্ছে, ফিল্ডিংয়েও তাই করা উচিত।’

বাংলাদেশ দলে ভালো ফিল্ডার যে নেই, তা নয়। সাব্বির রহমান, সৌম্য সরকারের ফিল্ডিং তো প্রায়ই চমকে দেয়! সে কারণেই চমকে যেতে হয় তাঁরাও যখন ভুল করেন তখনো। আসলে ভালো ফিল্ডিং করাটা এখনো অভ্যাসেই পরিণত হয়নি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের।